নিজাম রেস্তোরাঁ মাধুর্যে অন্যতম, কবির সুমন তো গানই বেঁধে ফেলেছিলেন-‘নিজামে গিয়ে কাবাব ভরপেট’, জানুন নিজামের মাধুর্য
Nizam resturant

The Truth of Bengal: রোলের আবিষ্কার্তা নিজাম আবার ফিরে এসেছে পুরোনো মৌতাতে নতুন চেহারায়। ইমরান খান ভালবাসেন ঋতুপর্ণ ঘোষ ভালবাসতেন। কলকাতায় এলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ারও চাই আবার কমলনাথেরও পয়লা পসন্দ। নিজামের রোল। কলকাতা শহরের সঙ্গে যে সব ‘ফুড ইটারি’ ও আইকনিক মর্যাদা পেয়ে গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার ঠিক উলটোদিকের নিজাম রেস্তোরাঁ বোধহয় তার মাধুর্যে অন্যতম। কবির সুমন তো গানই বেঁধে ফেলেছিলেন, ‘নিজামে গিয়ে কাবাব ভরপেট’।পুরসভার বিপরীতে একটা ছোট্ট মোগলাই খানার রেস্তোরাঁ হিসাবে যার সূচনা, সেই নিজাম কীভাবে এই রকম ‘আইকনিক’ হয়ে উঠল, এবং ভারতবর্ষে তো বটেই, গোটা উপমহাদেশে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল, তা অবশ্যই ইতিহাসবিদ বা খাবারের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের গবেষণার বিষয় হতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এবং আমরা গর্বও করতে পারি যে কলকাতার এই রেস্তোরাঁর খ্যাতি এবং ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’কে পুঁজি করে একই নামে দিল্লি বিমানবন্দরে তো বটেই, রাজধানী শহরের দক্ষিণের অভিজাত এলাকাতেও ‘নিজাম’স নামে রেস্তোরাঁ চলে। যদিও নিজামের কলকাতার বর্তমান উত্তরসূরী মজিদ ইরশাদের দাবি অনুযায়ী কলকাতার বাইরে নিজাম নামে যে সব রেস্তোরাঁ চলছে, তার সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। এই সবই আসলে কলকাতার ‘নিজাম’কে নিয়ে যে খ্যাতি বা ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ তৈরি হয়েছে, তাকে অনুসরণের চেষ্টা।
নিজামের এই খ্যাতি বা পরিচিতির কী কারণ? অবশ্যই রোল এবং কাবাব। আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে বিবিসি-ও যখন এই ‘রোল’ এর ইতিহাস এবং উৎপত্তি নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেছিল, তাতে নিজামকেই রোলের আবিষ্কর্তা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। নিজামের এই ঐতিহ্যটা শুরু হল কী করে? মজিদ ইরশাদদের পারিবারিক গল্প অনুযায়ী, ব্রিটিশ শাসনের সেই কলকাতায় আসলে তাঁরা কাবাবই বানাতেন। কিন্তু কোনও একদিন কোনও এক ব্রিটিশ অশ্বারোহীর বসে কাবাব খাওয়ার সময় ছিল না। তাই তিনি মজিদের পূর্বপুরুষকে কাবাব ‘প্যাক’ করে দিয়ে দিতে বলেছিলেন। এই ‘প্যাক’ করে দিতে গিয়ে পরোটায় মুড়ে যে কাবাব দেওয়া শুরু হল, তাই আসলে আজকের রোলের গোড়াপত্তনের ইতিহাস। পরবর্তীকালে নিজামের মালিকরা বুঝতে পারেন এই পরোটার মধ্যে কাবাব ভরে দেওয়াটা শুধু সময়ের সাশ্রয় করছে না, একটা নতুন ধরনের পদ -এর জন্ম দিয়েছে। এই থেকেই কলকাতার রোলের জন্ম। যা আজকে নিউ ইয়র্ক অবধি মাতিয়ে দিয়েছে এক বাঙালি মহিলার উদ্যোগ আর কলকাতার ‘স্ট্রিট ফুডাকে ম্যানহাটনে সকলের কাছে পরিচিত করে তোলার আকাঙ্ক্ষার উপর ভর করে। নিজামের রোলের ইতিহাস যদি তড়িঘড়ি কাবাব ‘প্যাক’ করে দেওয়া থেকে শুরু হয়ে থাকে, তাহলে ‘কাঠি রোল’ এল কীভাবে? আসলে যখন কাবাব রাখার জন্য শিকের পরিবর্তে বাঁশের কাঠি নিজাম ব্যবহার করতে শুরু করল, তবে থেকেই কলকাতার রোল হয়ে গেল ‘কাঠি রোল’।
আজ নিউ ইয়র্কে পায়েল সাহার দৌলতে যে ‘কাঠি রোল’ মার্কিনীদেরও হট ফেভারিট। এমন নয় যে নিজামে অন্য পদ পাওয়া যায় না, বিরিয়ানি, চাপ কিংবা তন্দুরি বা শেষ পাতে ফিরনি, সবই আছে। কিন্তু নিজামের সঙ্গে কাবাবটা যেন সমার্থক। কবির সুমন তাঁর গান দিয়ে যদি বাঙালির হৃদয়ে, মননে সেই কাবাবকে গেঁথে দিয়ে থাকেন, তাহলে দেশ বিদেশের সেলিব্রিটিদের তুমুল আগ্রহ আর ভালবাসা রোলকে একেবারে অমর করে দিয়েছে। মজিদদের পরিবারের চালু গল্প হচ্ছে, এক সময়ে কলকাতায় ক্রিকেট ম্যাচ থাকলেই নিজামের জন্য অর্ডার আসত এবং শুধু পাকিস্তান ক্রিকেট দল কলকাতায় খেলতে এলেই এই রকম আবদার আসত এমনটা নয়। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট তারকাদের কাছেও দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল নিজামের রোল আর কাবাব। শতাব্দীর চাইতেও বেশি প্রাচীন এই রেস্তোরাঁকে ঢেলে সাজাতে এবং কলকাতার আরও দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে মজিদদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বাঙালি শিল্পপতি সমর নাগ। তাই করোনা কাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর নিজাম এখন নতুন চেহারায়। নিউ মার্কেটের পিছন দিকে এই ঐতিহ্যমণ্ডিত রেস্তোরাঁ যেমন সেজে উঠেছে নতুন চেহারায়, তেমনই গোলপার্কেও খোলা হয়েছে নিজামের নতুন ‘আউটলেট’। এবং নিজাম মানেই যে কাবাব এবং রোল, তা আবার খাদ্যরসিকদের টেনে আনছে দলে দলে।