সুকান্ত, শুভেন্দু, দিলীপকে নিয়ে জোর চর্চা, নতুন সমীকরণের পথেকি যুযুধান নেতারা?
Strong discussions about Sukanta, Shuvendu, Dilip, are the Yuyudhan leaders on the path to a new equation?

Truth Of Bengal: বিকাশ ঘোষ: পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে হবেন? দলীয় স্তরে তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলা সভাপতিদের নাম ঘোষণা করছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্যের সমস্ত জেলার বিজেপির জেলা সভাপতি চূড়ান্ত হয়ে গেলে রাজ্য সভাপতি নাম ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অনেকগুলো নাম নিয়ে চর্চা চলছে জোর কদমে।
তার মধ্যে যেমন নাম ভাসছে দিলীপ ঘোষের, শুভেন্দু অধিকারী আবার সুকান্ত মজুমদারকে আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্বে রাখা হতে পারে এমন চর্চাও চলছে। আরও বেশ কয়েকটি নাম চর্চায় রয়েছে। যেমন লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী চৌধুরী সহ অনেকে। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ক যে মধুর তা নয়! বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যায় নানান গোষ্ঠী ও উপদলীয় গোষ্ঠীতে বিভক্ত নানান কাহিনী।
এই যেমন সুকান্ত গোষ্ঠী, দিলীপ গোষ্ঠী, শুভেন্দু গোষ্ঠীর কথা। রাজনৈতিক মহলে এমন আলোচনা উঠে এসেছে দলের রাজ্য সভাপতি হওয়ার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কম যাচ্ছেন না প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষও। বিজেপির অন্দরের খবর, আবার মেয়াদ যাতে বাড়িয়ে দেয় দল সেই চেষ্টার কসুর করছেন না সুকান্ত মজুমদার। আবার নিজের ‘সোর্স’ খাটিয়ে আরও অনেকেই রাজ্য সভাপতি চেয়ার পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
রাজ্য সভাপতির চেয়ারের লড়াই যখন তুঙ্গে তখন হঠাৎ করেই অন্য ছবি। যুযুধান গোষ্ঠীর নেতাদের মুখোমুখি বসা। যেমন রাজধানী দিল্লিতে সুকান্ত মজুমদারের মুখোমুখি হলেন শুভেন্দু অধিকারী। পরের দিনই রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার সঙ্গে দেখা করলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কথা হল সংগঠনের বিষয়ে। এই সাক্ষাতের মধ্যে কি রয়েছে কোন রাজনৈতিক সমীকরণ? নাকি নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ? সময় তার জবাব দেবে।
তবে রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল-মহল বলছে, যুযুধান নেতাদের এই সাক্ষাতের মধ্যে রয়েছে বড় অঙ্ক। নির্দিষ্ট রাজনৈতিক অঙ্ককে সামনে রেখেই পা ফেলছেন নেতারা। আবার অনেকেই বলছেন, রয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চাপ। দলের ভিতরে কোন অনৈক্য বরদাস্ত করতে চাইছে না বিজেপির দিল্লির নেতারা। দিল্লির চাপে পড়েই ঐক্যের ছবিটা ফুটে উঠেছে।
একদিকে যখন বিজেপির অন্দরে দলীয় সভাপতি ঘিরে নানান ধরনের জল্পনা-কল্পনা চলছে তখন বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসছে। দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে নানান সমীকরণ সামনে আসছে। নতুন কোন মুখ কি বিজেপির পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হবেন? নাকি পুরনো কোন মুখের ওপর আস্থা রাখবেন বিজেপির দিল্লির নেতারা? পুরনো মুখ বলতে সেই দিলীপ ঘোষ বা সুকান্ত মজুমদার।
আর নতুন মুখের মধ্যে এগিয়ে শুভেন্দু অধিকারী রকেট চট্টোপাধ্যায় অগ্নিমিত্রা পালরা। তবে আরএসএস ঘনিষ্ঠ কে সেটাও একটা বড় বিষয়। বিজেপির যিনি রাজ্য সভাপতি হন আরএসএস ঘনিষ্ঠ হওয়া একটা বিষয় থাকে। সেক্ষেত্রে এমন কোন নতুন মুখ উঠে আসতে পারে যিনি আরএসএস থেকে উঠে আসা। যেমন দিলীপ ঘোষ যখন বিজেপির রাজ্য সভাপতি হন তখন তেমনভাবে তাকে কেউ চিনতেন না। দিলীপ ঘোষ সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না তখন।
আরএস এর সংগঠন করতেন। পরবর্তীতে রাজনীতির ময়দান তিনি কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। রাজ্য রাজনীতি নিয়ে যারা সচেতন তারা জানেন গোটা রাজ্যে বিজেপিকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। দিলীপ ঘোষের সমালোচকরাও একথা এক বাক্যে স্বীকার করেন। এবারও কি তেমন কোন চমক থাকতে পারে। এই নিয়েও বিজেপির অন্দরে জোর আলোচনা চলছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি ও শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায় জেলায়। বিজেপির এবারের নির্বাচনে যে হাতিয়ার হতে চলেছে ‘ধর্ম’ তাও প্রচারে প্রকাশ পেয়েছে। বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার মহড়া এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। শুরু হয়ে গেছে ‘পোস্টার যুদ্ধ’। তবে এবারের এই বিধানসভা ভোটের প্রচারে কেন্দ্রীভূত হতে চলেছে যে ‘ধর্ম’ তা বলাই বাহুল্য।
অন্তত ‘পোস্টার যুদ্ধ’ তেমনটাই জানান দিচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্যের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পোস্টারের লড়াই বেশ জমে উঠেছে। শুরুটা করেছিল বিজেপি। পোস্টারের ভাষা ছিল ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই’। এবার তৃণমূল কংগ্রেসের আইটি সেল পাল্টা পোস্টার লড়াইয়ে নেমেছে। কার্যত বিজেপির পোস্টার-এর জবাব দিতে শুরু করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তৃণমূলের আইটি ও মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে পোস্টারের মাধ্যমে বেশ কিছু স্লোগান তুলে ধরা হয়েছে। বিজেপির ওই পোস্টারের ভাষার জবাব দিয়েছে তৃণমূল।
যেমন লিখেছে, ‘হিন্দু যদি ভাই ভাই গ্যাসে কেন ছাড় নাই’। বিজেপিকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের আইটি সেলের বাংলাজুড়ে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপি পোস্টার পাল্টা তৃণমূলের – জবাব পাল্টা জবাব, বিধানসভা ভোটের আগে জমজমাট হয়ে উঠছে বাংলার রাজনীতি। তৃণমূলের আরও একটি পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই আধার লিংকে ফাইন খাই’। এইসব স্লোগান গুলির মধ্য দিয়ে তৃণমূল সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে খোঁচা দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি এইসব পোস্টার ভরে গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়।
বিধাননগর পুর এলাকায় দেখা গিয়েছে এমন পোস্টার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সমস্ত ইস্যুকে এবারের ভোটে ছাপিয়ে যেতে পারে ‘ধর্ম’ ইস্যু। একের পর এক নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিপর্যস্ত হয়েছে বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির একাধিক আসন হাতছাড়া হয়েছে। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে বিজেপি ১৮ টি আসন দখল করেছিল।
২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ টি। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি স্লোগান ছিল ২০০ বেশি আসন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতা দখল করা। বিজেপির স্লোগান ‘ইসবার ২০০ পার’। তাদের থেমে যেতে হয়েছিল ৭৭ টি আসনেই। পরবর্তীতে তা কমতে কমতে ৬৫ আসনে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েক বছরে বিজেপির পায়ের তলার মাটি আরও আলগা হয়েছে। রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্র যা বিজেপির দখলে ছিল উপ নির্বাচনে তৃণমূল দখল করেছে। ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির এখন তুরুপে তাস ‘ধর্ম’। বিজেপির পোস্টারে তাই স্লোগান ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই’। আর তার জবাব দিতে আসরে নেমে পড়েছে তৃণমূলের আইটি ও মিডিয়া সেল। লড়াই জমে উঠেছে।