মহাপ্রভুর জামাই ষষ্ঠী,বিপুল ভক্ত সমাগম নবদ্বীপে
Sri Chaitanya Mahaprabhu was ritually received as Jamaishashti

The Truth of Bengal: জামাইষষ্ঠীর দিন নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে আচার মেনে জামাই হিসেবে বরণ করা হল।মহাপ্রভুকে জামাইয়ের বেশে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবিতে সাজানো হয়। মহাপ্রভুকে নতুন পোশাক দেয় বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিবারের লোকজন। রুপোর থালায় নিবেদন করা হয় নানান রকমের ভোগ। জামাইষষ্ঠীতে ইশ্বরের অবতারকে আদর-কদরে ভরিয়ে তোলা হয়।আধুনিক ভক্তরা আবার গোস্বামীদের জামাইরাজার নবসাজ ক্যামেরাবন্দিও করেন। সনাতন ভূমিতেও যে হাইটেক ছোঁয়া লাগছে তা বলাই যায়।
বৈষ্ণব ধর্মের তিনি প্রতিষ্ঠাতা।সর্বশাস্ত্রজ্ঞ, কবি, দার্শনিক, ধর্মগুরু, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী ও সমাজ সংস্কারক শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু।তাঁর হরিনাম সঙ্কীর্তন বঙ্গজীবনে একতার মন্ত্র বয়ে আনে। জাতপাতের বজ্জাতি বা পণ্ডিত-গোঁড়া ব্রাক্ষণদের চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে যিনি সামাজিক সাম্যের ধারক-বাহক হয়ে উঠেছিলেন সেই গৌরাঙ্গের জামাই ষষ্ঠী পালন করা হল একেবারে সনাতনী প্রথায়,ঘরোয়া আবহে। জামাইষষ্ঠীর দিন ভোর থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জামাই হিসাবে বরণ করা হয় মহাপ্রভুকে। মহাপ্রভুকে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবিতে সাজানো হয় জামাই বেশে। পরানো হয় রজনীগন্ধা, গোলাপের মালা। গায়ে আতর। রুপোর রেকাবিতে ছানা, মিষ্টি দেওয়া হয়। সন্ধেবেলা নাটমন্দিরে বিশেষ কীর্তনের আয়োজন, উজ্জ্বল আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয় এই নবদ্বীপ ধামে। প্রতি পদে সাজিয়ে দেওয়া হয় গৃহত্যাগী শ্রীচৈতন্যদেব গোস্বামীদের ‘জামাইরাজাকে।’ পুজোর মধ্যেই প্রকাশ পায় জামাই আদর। ‘বিষ্ণুপ্রিয়ার প্রাণধন’ ও নবদ্বীপের তথা বঙ্গবাসীর কাছে ইশ্বরের অবতার গৌরাঙ্গকে জামাই হিসেবেই আদর করা হল, নবদ্বীপের মহাপ্রভু মন্দিরে।
জামাইকে যেভাবে পাখা দিয়ে বাতাস করা হয়,সেভাবেই মহাপ্রভুকেও বাতাস করে শান্ত রাখা হয়। মহাপ্রভুর ভোগে কী কী পদ থাকে জানেন কী? মরসুমি ফল আম, জাম, লিচু এসব তো থাকেই। পাশাপাশি রুপোর বাটিতে ক্ষীর এবং গ্লাসে জল দিয়ে প্রথমে ঘুম ভাঙানো হয় মহাপ্রভুর। তারপরে চিঁড়ে, মুড়কি, দই, আম, কাঁঠাল এবং মিষ্টির ফলাহার। এটাই নিমাইয়ের জলখাবার। মধ্যাহ্ন ভোজনে থাকে নানা রকমের তরকারি, থোর বেগুন পাতুরি, ছানার ডালনা, লাউ, চাল কুমড়ো, পোস্ত দিয়ে রাঁধা সব নিরামিষ পদ। দুপুরে মহাপ্রভু একটু জিরিয়ে নেন। দিবানিত্রা শেষ হলে তাঁকে ভোগ দেওয়া হয় ছানা এবং মিষ্টির । রাতের মেনুতে থাকে গাওয়া ঘি’তে ভাজা লুচি, সঙ্গে থাকে মালপোয়া এবং রাবড়ি। সবশেষে মুখশুদ্ধি হিসেবে দেওয়া হয় খিলিপান। এই মন্দিরে জামাইষষ্ঠীর ভোগের বিশেষত্ব হল আমক্ষীর, যা আমের রসে ক্ষীর মিশিয়ে তৈরি হয়। জামাইকে নানা উপাচারে আপ্রায়ন করতে কোনও কার্পণ্য করেন না শ্বশুরবাড়ির লোকজন,ভক্তরাও গৌরাঙ্গকে সেবা দেন,ভক্তি ভরে।