
The Truth Of Bengal: পটচিত্রে ইসরোর চন্দ্র অভিযানের কথা তুলে ধরা ধরেছেন পিংলার শিল্পীরা। ঐতিহ্যের পটে বিজ্ঞানের জয়গান আলাদা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ছবি আর গানের মাধ্যমে বিজ্ঞানীদের শুভেচ্ছাবার্তা জনমনেও ছাপ ফেলছে। চাঁদের দেশে ভারতীয় চন্দ্রযান -৩-র পৌঁছে যাওয়ার আবেগ ছুঁলো ওঁদের মন। দেশবাসীর গৌরবের অনুভূতি এবার পটচিত্রে তুলে ধরলেন পিংলার শিল্পীরা। ছবি এঁকে বিজ্ঞানের জয়গান গাইলেন তিনি।মাটির মানুষদের শুভেচ্ছায় যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে বিজ্ঞান-শিল্প-ইতিহাস আর ঐতিহ্য।শিল্পের মাধ্যমে দেশভক্তির এই সেলিব্রেশন দেশ-দেশান্তরের মানুষদের মনকে আলাদা টাচ করছে।ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায়, প্রাচীন লোকশিল্পের একটি অতি প্রচলিত মাধ্যম হলো পট। পট শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত “পট্ট” থেকে। যার অর্থ কাপড়।
প্রাচীন বাংলা এবং বাংলার আশপাশের বাংলা ভাষাভাষী অধ্যুষিত অঞ্চলের বিরাট অংশের ঐতিহ্যের ধারক- বাহক এই পট।মূলত বাংলা এবং ওডিশা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিল্প হিসেবে যুগ যুগ ধরে জায়গা করে নেয় পটচিত্র। রাজস্থানের কিছু অঞ্চলেও পটচিত্রের সন্ধান পাওয়া যায় তবে তা বাংলা বা ওডিশার মত সমৃদ্ধশালী নয়। খ্রীষ্টজন্মপরবর্তী প্রথম শতকে বৌদ্ধভিক্ষুরা বুদ্ধদেবের জীবনী নিয়ে তৈরি করা একপ্রকার বিশেষ পট প্রদর্শন করতেন যাকে বলা হয় মষ্করী পট। আর এখন সেই পটচিত্র চন্দ্রজয়ের কথা তুলে ধরছে। চন্দ্রযান-৩-র ছবি এঁকে,গান বেঁধে ভারতের বিজয়গাথা তুলে ধরে সবার মন নাড়া দিচ্ছেন শিল্পীরা। পিংলার শিল্পীদের হাতের কাজে ফুটে উঠছে শুভেচ্ছার বন্যা।
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার দোরগোড়ায়। ইউনেস্কোর পটের ছবি এঁকে ইসরোর বিজ্ঞানীদের শুভেচ্ছা পিংলার নয়ার পটশিল্পীদের। চন্দ্রযান থ্রি-র সফল অবতরন।চন্দ্রযান ও ইরসোকে নিয়ে ছবি এঁকে গান বাঁধলেন পিংলায় নয়ার পটুয়ারা। একদিন আগেই চাঁদের বুকে পা রেখেছে চন্দ্রযান থ্রী।যা নিয়ে সারা দেশ গর্বিত।বর্তমানে সারা দেশ জুড়ে সেলিব্রশনের মুড চলছে। বিভিন্ন ভাবে চন্দ্রযান থ্রি-র সফল ল্যান্ডিংয়ে ইসরোকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সবাই। আর এবার চন্দ্রযান থ্রীর সফল ল্যান্ডিংয়ের খুশিতে ছবি এঁকে গান বাঁধলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা ব্লকের নয়ার পটশিল্পীরা।পটশিল্পী বাহাদুর চিত্রকর ও তার দল চন্দ্রযান থ্রী নিয়ে বাড়ীতে বসে পটের ছবি এঁকেছে। এবং বেঁধেছে গান। তারা এই পটের ছবি ও গানের মধ্য দিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।পটশিল্পদের আশা এই পটচিত্র ইসরোকে উপহার দেবেন যদি কোনো সুযোগ আসে।।
পিংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত পটচিত্র পরিদর্শনে UNESCO’র পরিদর্শক দল। শুক্রবার পরিদর্শন করলেন ইউনেসকো (UNESCO)-র প্রতিনিধি জন সিভিস্টিয়েন কার্টিস। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের আধিকারিক চিরঞ্জিত গঙ্গোপাধ্যায়, ক্যাবিনেট মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুইয়া, জেলাশাসক আয়েশা রানি প্রমুখ। এদিন, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা’র নয়া গ্রাম ঘুরে দেখেন। মুগ্ধ হয়ে শোনেন মধ্যযুগের চন্ডীমঙ্গলের কাহিনি কিংবা একবিংশ শতকে আমেরিকার উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার (৯/১১) জীবন্ত বিবরণ! সঙ্গে প্রাণবন্ত সব ছবি। উল্লেখ্য যে, পিংলার এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পট শিল্প-কে ‘কালচারাল হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। বৃহস্পতিবার বাংলার দুর্গা পূজা-কে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়ার খুশিতে কলকাতায় যে উৎসব পালিত হয়েছে, সেখানেই এসেছিলেন ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের অনুরোধ করা হয়, পিংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত ও সুপ্রসিদ্ধ পট চিত্রের সৃষ্টি শৈলী খতিয়ে দেখার জন্য। এরপরই, শুক্রবার এই পরিদর্শন হয়। সঙ্গে ঘুরে দেখেন সবংয়ের বিখ্যাত মাদুর শিল্পও। ইতিমধ্যেই, পিংলার পটুয়া ও সবংয়ের মাদুর শিল্পীদের হাতে জি.আই শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। আর, এদিনের এই ইউনেস্কো পরিদর্শনের পর স্বভাবতই শিল্পীরা উচ্ছ্বসিত!
এদিন, প্রথমে ‘চিত্রতরু’ ভবনে পৌঁছে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পটচিত্র সম্বন্ধে সম্যক ধারণা গ্রহণ করেন, ইউনেসকোর কনভেনশন ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ কমিটির সম্পাদক জন সিভিস্টিয়েন কার্টিস। তারপর, পটুয়াপাড়ার শামিয়ানায় বসে পটচিত্রীদের গলায় শোনেন মঙ্গলকাব্য থেকে আধুনিক যুগের নানা চিত্রকথা। কার্টিস তাঁর নিজের মোবাইলে ক্যামেরাবন্দীও মুহূর্তগুলিকে। এরপর তিনি কথা বলেন পিংলার পট শিল্পীদের সাথে। দোভাষীর কাজ করেন খোদ জেলাশাসক আয়েশা রানী। মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, “পিংলার নয়াকে আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্তরিক ইচ্ছেতে সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি। আজকে ইউনেস্কো’র প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। প্রথমবার পরিদর্শন হল। হেরিটেজ একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া বা লং প্রসেস। সময় লাগবে, তবে আমরা আশাবাদী। ইতিমধ্যে, পিংলার এই পটুয়া বা পট শিল্পীদের খ্যাতি ও সৃষ্টি দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। হেরিটেজ তকমা পেলে তা খ্যাতির শিখরে পৌঁছবে।”