রাজ্যের খবর

নদিয়ার বল্লাল ঢিবি, মাটির তলায় লুকিয়ে ছিল মধ্যযুগের ইতিহাস

Nadia's Ballal Dhi, medieval history hidden underground

Truth Of Bengal: সুব্রত দত্ত, নদিয়া: অন্যতম প্রাচীন শহর। হাজার বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার নবদ্বীপ। ঐতিহাসিকদের মতে নদিয়া নামটি এসেছে এই নবদ্বীপ থেকেই। ভারতবর্ষের যত প্রাচীন শহর আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নদিয়ার এই শহর। সে যুগে রাজকীয় বৈভব আর ঐশ্বর্য ভরা ছিল এই নগরী। ভারতবর্ষের অক্সফোর্ড বলা হতো।

শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞান চর্চা সব দিক দিয়েছিল ভারতবর্ষের মধ্যে শীর্ষে। আর এই শহরে একটি অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন বল্লাল ঢিবি। মায়াপুর থেকে খুব কাছেই প্রত্যন্ত একটি গ্রাম বল্লাল দিঘি। এই গ্রামের মধ্যেই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অনুসন্ধানে খুঁজে বের করা হয়েছিল বল্লাল সেনের আমলের একটি প্রকাণ্ড রাজপ্রাসাদ। অবশ্য ঐতিহাসিকরা মনে করেন আসলে এটা ছিল সে যুগের একটি মন্দির। বল্লাল ঢিবি খননকার্যের পর অনেক প্রত্নতত্ত্বের সন্ধান মেলে। তা গবেষণা করে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছেন সে যুগের মন্দির হিসেবেই এর খ্যাতি ছিল।

বাংলার অন্যতম শক্তিশালী রাজত্ব ছিল সেন যুগে। সেন রাজাদের রাজত্বে বাংলার পরিধি বিস্তার লাভ করেছিল। সম্পূর্ণ বঙ্গদেশ ছাড়াও আশপাশে বহু এলাকা ছিল এই সেন রাজত্বের মধ্যে। তাদের রাজধানী ছিল নবদ্বীপ। এই বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা হিসেবে ইতিহাসে নাম রয়েছে বল্লাল সেনের। ঐতিহাসিকরা মনে করেন এই নবদ্বীপ নামটি থেকেই নদিয়া নামটি এসেছে। নবদ্বীপ পরে যা তুর্কি উচ্চারণে হয়ে ওঠে নওদিয়াহ।

যা থেকেই নাকি পরবর্তী কালে গোটা জেলার নাম হয় নদিয়া। নবদ্বীপের উত্তর-পূর্ব কোণে গঙ্গার পূর্ব পারে বল্লাল ঢিবির অবস্থান। উৎখননের মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের অনেক ইতিহাসের তথ্য সামনে এসেছে। বল্লাল ঢিবি সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেনের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। বল্লাল ঢিবি প্রায় চারশো ফুট প্রশস্থ ও উচ্চতায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ ফুট। বর্তমানে বল্লাল ঢিবি সবুজ ঘাসে মোড়া, আর চারিদিক কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রেখেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

একটা সময় এলাকার মানুষের কাছে এই স্থান ছিল রহস্যে ঘেরা। ঘন জঙ্গলের মধ্যে একটা পাহাড়ের মত ঢিবি দাঁড়িয়েছিল গ্রামের এক কোণে। বড় বড় তালগাছ ও অন্যান্য নানান গাছের জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। দিনের বেলায় পর্যন্ত মানুষ সেখানে যেতে ভয় পেতেন। এলাকার মানুষের বিশ্বাস ছিল এই ঢিবির মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা ইতিহাস। পরবর্তীতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এর খনন কার্য শুরু করে। আর সেই খননের মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের জ্বলন্ত ইতিহাস সামনে আসে।

১৯৮২ সালে ‘ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’ বল্লাল ঢিবি উৎখননের কাজ শুরু করেছিল। ১৯৮০ সালে, ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ঢিবিটি খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। করেছিল। দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়েছিল খননের কাজ। ১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৮-৮৯ সালে খননকার্য চলে। খননের মাধ্যমে বিশাল কাঠামোটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। ওই এলাকার মাটির প্রকৃতির কারণে খুব বেশি খনন করা যায়নি। আরও খননকাজ চালালে কাঠামোর ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। খননকার্যের সময় বল্লাল ঢিবিতে শক্ত পোড়ামাটির ইট, পঙ্খের মূর্তি, তৈজসপত্র, পেরেক, পোড়ামাটির মানুষ ও জীব-জন্তুর মূর্তি, তামা ও লোহার তৈরী নানান তৈজসপত্র, প্রত্নসামগ্রী সহ নানান ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া যায়।

Related Articles