বাবলা খুনে জ্যোতিপ্রিয়-র জীবনে হল না সূর্যোদয়!
malda tmc leader babla sarkar who was murdered promised to donate his eyes

Bangla Jago Desk: রক্তের সম্পর্ক বড় কথা নয়, বড় কথা মনুষ্যত্ব। কেউ যদি জীবনের জন্য মূল্যবান অঙ্গদান করতে চান, তাহলে তাঁকে আপনি কী বলবেন? ভগবান নাকি দেবদূত ? মালদার নিহত তৃণমূল নেতা বাবলা সরকারের মহতী ইচ্ছা দেখেজন্মান্ধ জ্যোতিপ্রিয় রায়ের পরিবার মনে করছেন, দেবদূতকে হারিয়েছেন। কেন জানেন ? সমাজের নানা ভালো কাজে যিনি জীবন উত্সর্গ করেছিলেন, যিনি মানুষের আপদে-বিপদে ছুটে যেতেন, তিনি কার্যতঃ ইশ্বরতুল্য ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়-ও তাঁর মায়ের আছে। আসলে জন্ম থেকে সূর্যের আলো দেখতে পাননি মালদার এই অল্পবয়সী পড়ুয়া।
নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড স্কুলে পড়াশোনা করছেন। পারমিতা দত্ত রায় তাঁর অসহায় সন্তানকে নিয়ে জীবনের কঠিন লড়াই করছেন। একদিকে সন্তান দুচোখ ভরে দুনিয়া দেখতে পান না আর অন্যদিকে, স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ায় লড়াইটা কঠিন হয়ে গেছে। তবুও আশা ছাড়েন নি। বাবলা সরকারের মতো সহৃদয় মানুষের সাহায্য নিয়ে সন্তানের জীবনে সূর্যোদয় ঘটাবেন ভেবেছিলেন, কিন্তু সেই আশা পূরণ হল না। কার্নিভালের অনুষ্ঠানে কথা দিয়েছিলেন চোখ দান করে যাবেন জন্মান্ধ পড়ুয়াকে। আশা ছিল. একদিন জ্যোতিপ্রিয়-র চোখে জ্যোতি ফিরবে। কিন্তু অকালে বন্দুকবাজরা সমাজদরদী মানুষটাকে কে়ড়ে নেওয়ায় স্বজন হারানোর বেদনা অনুভব করছেন পারমিতাদেবী। দুচোখ ভরে জল আসছে তাঁর। বাবলা সরকারের অকালমৃ্ত্যুতে অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে দুঃখের কথা বাংলা জাগোর ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেন একাকী লড়াইয়ের প্রতীক পারমিতাদেবী।
ইংরেজবাজার পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ি এলাকায় থাকেন গৃহবধূ পারমিতা দত্ত রায়। তাঁর একমাত্র ১৩ বছরের ছেলে জ্যোতিপ্রিয় রায় জন্মান্ধ। বর্তমানে ছেলেকে কলকাতার নরেন্দ্রপুর মিশন ব্লাইন্ড স্কুলের আবাসিকে রেখেই পড়াশোনা করাচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে জ্যোতিপ্রিয়। পারমিতাদেবীর স্বামী জীবন রায় নামজাদা ব্যবসায়ী। ২০১৭ সালে তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়। শহরের সর্বমঙ্গলা পল্লী এলাকার শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বর্তমানে বাঁশবাড়িতে বাবার বাড়িতেই রয়েছেন গৃহবধূ পারমিতাদেবী। নিজের ছেলের খরচ যোগাতে একটি বেসরকারি সংস্থায়ী সামান্য মাইনেতে কাজ করেন তিনি। পারমিতা দত্ত রায় আরও বলেন, একমাত্র ছেলে ছোট থেকেই জন্মান্ধ। বাবলাদার মত মানুষই হয় না। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে এটা অন্ধকার দিন নেমে আসবে, কে জানতো ? কেন মারলো ওরকম ভগবান সমান মানুষটাকে। যারা মেরেছেন তাদের ঈশ্বর কোনদিন ক্ষমা করবে না। তাদের যেন ফাঁসি হয় কঠোরতম শাস্তি হয় এই চাইছেন জ্যোতিপ্রিয়র পরিবার ও। জ্যোতিপ্রিয় চান, যাঁরা এই জীবন বাঁচানোর কারিগরদের জীবন কেড়ে নিয়েছে,তাঁদের যেন কঠোরতম শাস্তি হয়।
তাই এখন বাবলা সরকারের খুনীদের শাস্তি হলে তাঁরা শান্তি পাবেন বলে মনে করছেন জ্যোতিপ্রিয় ও জ্যোতিপ্রিয়-র পরিবার।