অফবিটভ্রমণ

রাজবলহাটের অতীত কথা

Old Story of Rajbalhat

The Truth of Bengal: বাংলার আনাচে কানাচে লুকিয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস, নানা কিংবদন্তী বিচিত্র সব গল্পকথা। তার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল, বাংলার লোকাচার ও লোকসংস্কৃতির আদি শিকড়ের সূত্র সন্ধান। আজ যা হাওড়া, হুগলি জেলা হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত। তার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল ভুরশুট পরগনা। ভুরশুট রাজ্যের প্রধান গড় ছিল গড়ভবানীপুর। বর্তমানে গড়ভবানীপুর হাওড়া জেলায় হলেও, রাজবলহাট বর্তমানে হুগলি জেলায়। আর গড়ভবানীপুর ও রাজবলহাটের সম্পর্ক মধ্যকাল থেকেই অটুট।

মুঘল সম্রাট আকবরের আইন-ই-আকবরি থেকে জানা যায়, সরকার সোলেনামাবাদের অন্তর্গত ৩১টি মহালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজত্ব ছিল বসন্ধরী পরগনায়। তারপরেই ছিল ভুরশুটের, রাজস্ব দাম প্রায় বিশ লক্ষ।  সরকার সাতগাঁও বা সরকার মন্দারণ কোনও পরগনায় এতো বেশি রাজস্ব ছিল না। ভুরশুট রাজ্য ও পরগনার আয়তন যে বেশ বড় ছিল, তা এই রাজস্বের  পরিমাণ থেকে অনুমান করা যায়।  রাজবলহাট ছিল ভুরশুটের মধ্যেই। রাজবল্লভী দেবীকে নিয়ে বেশ কিছু প্রচলিত কিংবদন্তী রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বণিকের সপ্তডিঙার কিংবদন্তীটি।

ছয়টি ডিঙা ডুবে যাওয়ার পর যখন সপ্তডিঙ্গায় ওই কন্যা পা বাড়ান তখন বণিক অনুতপ্ত হয়ে পা জড়িয়ে ধরেন। ক্ষমাপ্রার্থনা চান ওই কন্যার কাছে। তিনি অনুভব করেন এ কোনও সাধারণ কন্যা নয়, দেবী। তারপর রাজবলহাট গ্রামে তিনি দেবীর প্রতিষ্ঠা ও পুজোর প্রবর্তন করেন। অর্থাৎ এই কিংবদন্তীর মধ্যে একটি বার্তা উঠে আসে, সেই সময় বাংলার সওদাগরদের প্রতিপত্তি কত ছিল, এবং তাদের আচার ব্যবহার কেমন ছিল। অর্থাৎ বণিকরা যখন নৌকাপথে যাত্রা করতেন, তখন তাঁদে দৌরাত্ম স্থানীয় গ্রামবাসীদের কতটা সহ্য করতে হত, তার একটা ইঙ্গিত মেলে। গবেষকরা মনে করেন,

সদাগর যে দেবীর প্রতিষ্ঠাতা ও পুজো মেনে নিয়েছিলেন তিনি বোধ হয় চণ্ডীর। কিংবদন্তীতে সেই কাহিনী এই রূপে ধরা দিয়েছে। পরে দেবী চণ্ডী যখন রাজার পুজ্য ও প্রিয় দেবী হয়ে ওঠেন। অর্থাৎ ভুরশুট পরগনার রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন, তখন তিনি রাজবল্লভী হয়ে ওঠেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কিংবদন্তীটি আজও  দেবীর পুজো অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে রয়েছে।

সেইসঙ্গে কিংবদন্তী গুলির ক্ষেত্রেও দেখা যায় সদাগরশ্রেণির সঙ্গে যুক্ত। গবেষকদের মত, চণ্ডী একসময় অনার্যদেবী ছিলেন, পরে সাধারণ লোকসমাজে তিনি পুজ্য হয়েছেন, সুদীর্ঘ সংস্কৃতি সংঘাতের মধ্যে দিয়ে। বাংলার মঙ্গলকাব্যগুলিতে তারই আভাস মেলে। পশ্চিমবঙ্গের লোককথায়, কিংবদন্তীতেও তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। রাজবলহাটের ছবি আজ যা দেখা যায়, তার অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চল বেশ সমৃদ্ধ। তার ইঙ্গিত মেলে, প্রাচীন মন্দির, বাড়ি, রাস্তাঘাটের পরিকল্পনা দেখলেই।

রাজবলহাটে মধ্যে ও তার আশে পাশে ধর্মঠাকুরের  যে রীতিমতো  প্রভাব ছিল, তার আভাস মেলে।  স্থানীয় প্রবাদ রয়েছে, এক সময় এই অঞ্চলে এক বাগদী রাজা ছিলেন। সেই বাগদী রাজা নাকি বৌদ্ধধর্মালম্বী ছিলেন। কিন্তু তার ঐতিহাসিক কোনও প্রমাণ মেলে না। তবে একটি মজার বিষয় হল, লোক ইতিহাস বলছে, এখানে একাধিক ধর্মঠাকুরের অবস্থান দেখা যায়। এমনকী নাথযোগীরাও এখানে ধর্মঠাকুরের  পুজো করতেন।

Related Articles