দেশভ্রমণ

ঝাড়খণ্ডের ছোট্ট পাহাড়ি দেশ ঘাটশিলায়, মনমুগ্ধ করা দৃশ্য উপভোগ করুন

Tourism of India

The Truth of Bengal: প্রতিদিনের একঘেয়েমি জীবন যখন গতি হারায় তখন জীবনের গতি ফিরিয়ে আনার একমাত্র টনিক হল ভ্রমণ। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি “সোলো ট্রিপের” প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে বাঙ্গালীর মধ্যে । ছুটি পরলেই ভ্রমনপিপাসু বাঙালি বেড়িয়ে পড়েন ভ্রমনের উদ্দেশ্যে।  কাছেপিঠে এমনই এক জায়গা ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলায় যার নাম ঘাটশিলা। পর্যটন শিল্প কেন্দ্র হিসাবে ঘাটশিলার নাম বেশ খ্যাত ঝাড়খণ্ডে। একসময় বাঙ্গালীর শারীরিক অসুস্থতা উদ্ধারের গন্তব্যস্থল ছিল এই ঘাটশিলা।

মাত্র দুই থেকে স্বল্প খরচায় একবার ঘুরে এসে দেখতে পারেন এই ছোট্ট সুবর্ণরেখা নদী তীরে অবস্থিত বনে ঘেরা পাহাড়ি অঞ্চল। কথিত আছে এই নদীর তলদেশে সোনা পাওয়া যায় বলে নদীর নাম দেওয়া হয় সুবর্ণরেখা। ঘাটশিলার প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলি হল রাঙ্কিনী মন্দির,ধারাগিরি জলপ্রপাত, ফুলডুংরি পাহাড়,  বুরুদি লেক , পঞ্চ পাণ্ডব পাহাড় প্রভৃতি।

 রাঙ্কিনী মন্দির

দেবী রুক্মিণীর এই মন্দির হল হিন্দুদের এক পবিত্র এবং জনপ্রিয় মন্দির। মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৯ শতকে। মন্দিরটি দর্শনার্থীদের শান্তিপূর্ণ এবং সচ্ছল পরিবেশ প্রদান করে। হাজার হাজার দর্শনার্থীরা  এখানে এসে ভীর করে থাকেন প্রায়শই।

ধারাগিরি জলপ্রপাত

৩০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ধারিগিরি জলপ্রপাতটি সবুজের মাঝে অবস্থিত। ঘাটশিলার অত্যন্ত মনমুগ্ধকর এক পর্যটন স্পট এই ধারাগিরি জলপ্রপাত।

ফুলডুংরি পাহার

ঘাটশিলা থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে অবস্থিত ফুলডুংরি নামক এক টিলা জাতীয় পাহাড়। সর্পিল পথ রয়েছে এখানে, যার দরুন পর্যটকরা পাহাড়ের চুড়াই যেতে পারেন। এই পাহাড়ের আশপাশ ঘন বন, জলপ্রপাত এবং বন্যপ্রাণী দ্বারা আচ্ছাদিত।। ট্র্যাকিং, ক্যাম্পিং এবং পাহাড়ি পাখি দেখা উপভোগ করা যাবে এই পাহাড় থেকে।

বুরুদি লেক

মানবসৃষ্ট এই হ্রদ একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। সূর্যাস্ত দেখার জন্য নিখুঁত জায়গা হল এই অঞ্চল।

পঞ্চ পাণ্ডব পাহাড়

পঞ্চ পাণ্ডব ছোট পাহাড় ঘাটশিলা থেকে উত্তর-পূর্বে প্রায় পাঁচ কিমি দূরে অবস্থিত ।এটি একটি পাথরের প্রাকৃতিক ভাস্কর্য,যা পাথর ক্ষয়ের কারনে  পাঁচ জন পুরুষের মাথা হিসাবে চিত্র প্রদান করে । স্থানীয় মানুষ মহাভারতের পঞ্চ পাণ্ডবের প্রাকৃতিক সৃষ্টি বলে বিশ্বাস করেন।

বিভূতি ভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

ঘাটশিলার নিকটবর্তী  বিভূতি ভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হল একটি সংরক্ষিত এলাকা। অভয়ারণ্যটি প্রায় 550 হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাস স্থল । পর্যটকরা এখানে বাঘ, চিতাবাঘ, হরিণ সহ  বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখতে পাবেন । এছাড়াও বিখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি এই ঘাটশিলায় যার নাম গৌর কুঞ্জ। তাঁর স্ত্রী’র নাম অনুসারে এই বাড়ির নামকরণ করা হয়। বুরুডি লেক, চিত্রকূট পাহারে শিব মন্দির, রাতমোহন, গালুডিহি ব্যারেজ মতো নান দর্শনীয় স্পট রয়েছে ঘাটশিলায়।

যাবেন কিভাবে? জলপথ, স্থলপথ এবং আকাশপথ উভয় পথেই যাওয়া যাবে। পর্যটকরা জামশেদপুরের সোনারি  বিমানবন্দর থেকে ঘাটশিলায় যেতে পাড়েন বাস বা ট্যাক্সি ভাড়া করে। ঘাটশিলায় নিজস্ব স্টেশন রয়েছে , অতএব কলকাতা থেকে অতিসহজেই ট্রেন করে ঘাটশিলা যাওয়া সম্ভব। আর যারা চান একটু ৫-৬ ঘণ্টা সময় নিয়ে বাসে করে ঘাটশিলা যাবেন সেও সম্ভব। তবে ভাবছেন তো যাওয়ার পর থাকবেন কোথায়? ঘাটশিলায় রয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় রেস্তরাঁ । ভারতীয় আদিবাসী সম্প্রদায়কে আরও কাছে থেকে চিনতে এবং প্রকৃতির কোলে শান্তি পূর্ণ  কিছুটা সময় কাটানোর এক্কেবারে আদৰ্শ স্থান ঘাটশিলা।

Related Articles