
The Truth Of Bengal : ভাষার জন্য আন্দোলন বা আন্দোলনের অন্যতম উপলক্ষ ভাষা- এমন আন্দোলন পৃথিবীর অনেক দেশেই হয়েছে কমবেশি। কোথাও অহিংস আবার কোথাও সহিংস। বাংলা ভাষার মর্যাদার জন্য পাক সরকারের পুলিশের গুলি বুকে পেতে নিয়ে শহিদ হয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউররা। ওই যুবকদের আত্মবলিদানে বাংলা ভাষার হাত ধরে বিশ্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেই অমর একুশে আবার স্মরণ করার দিন— আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি
বাংলা ভাষার হাত ধরে আজ বিশ্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপনের দিন। এত বড় স্বীকৃতির নেপথ্যে বাংলা ভাষা থাকায় বাঙালি হিসেবে আমাদের গৌরবের শেষ নেই। বাংলা ভাষায় কথা বলে বিশ্বের ২০ কোটির বেশি মানুষ। বাংলা শুধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা নয়। প্রাণের ভাষা বাংলা হতে পেরেছে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ সিয়েরা লিওনের রাষ্ট্রভাষা। ওই দেশের মানুষ আপন করে নিয়েছে আমাদের প্রাণের ভাষাকে। যাদের আত্মবলিদানে বাংলা ভাষার হাত ধরে বিশ্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সেই সেই রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরদেরদের স্মরণ করার দিন। আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি– এই শপথ নেওয়ার দিন অমর একুশে।
১৯৪৭ সাল থেকে পূর্ববঙ্গের বাংলাভাষী মানুষের ওপর ওপর পাকিস্তান সরকারের উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর পাক পুলিশের গুলিবর্ষণে আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান শহিদ হন। পাক সরকারের এই হামলার পর রুখে দাঁড়ায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। দলে দলে সবাই আন্দোলনে যোগদান করে। শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত বনধ, অবরোধ, হরতাল। বাধ্য হয়ে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুর সঙ্গে বাংলাভাষাকেও পূর্ববঙ্গে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের এই ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে পালিত হয়ে আসছে ‘অমর একুশে’।
১৯৯৯ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই দিনটি বিশ্বের সমস্ত মাতৃভাষার অধিকারের দিন হিসাবে আজ চিহ্নিত হয়েছে। গোটা বিশ্ব জুড়ে মাতৃভাষাগুলি আজ বিপন্ন। ভাষাতাত্ত্বিকদের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজারের মতো ভাষা আছে। তার মধ্যে অনেক ভাষার আজ শিরে সংক্রান্তি। অনেক ভাষা অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। সেই মাতৃভাষাকে বাঁচাতে রাষ্ট্রপুঞ্জ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বজনীন এই দিনটি এসেছে বাংলা ভাষার হাত ধরে। ভাষা দিবসের হাত ধরে এক হয়ে যায় দুই বাংলা। কারণ দুই বাংলার আত্মার টান জড়িয়ে আছে যে বাংলা ভাষার অক্ষরমালা দিয়ে।
FREE ACCESS