ঐতিহ্যের উলটপুরাণ! স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে হারিয়ে বিশ্বের প্রথম ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরো খোলে কলকাতা পুলিশ
Breaking tradition! Kolkata Police beats Scotland Yard to open world's first fingerprint bureau

Truth Of Bengal : মৌ বসু : ঐতিহ্যের উলটপুরাণ! ঐতিহ্যের এ এমন এক সরণী, যেখানে আমাদের প্রিয় তিলোত্তমা কলকাতা, প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে শতবর্ষ পেরিয়েও এক অনন্য আবিষ্কারে নিজেকে সতন্ত্র রেখেছে দেশীয় পদ্ধতি অনুসরণের গরিমায়। তামাম বিশ্ব তথা আম ভারতীয়দের মধ্যে এক বদ্ধমূল ধারণা আছে যে কোনো আবিষ্কার বা রহস্য সমাধানের সকল সূত্র বোধহয় একচেটিয়া পাশ্চাত্যর দখলে। কিন্তু এখানে যে আবিষ্কারের কথা তুলে ধরব তা একান্তই এদেশীয় মাটি, জল, হাওয়া ও মানুষের কৃতিত্বও বটে। আবিষ্কারটি হল ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তকরণ।
আজ থেকে একশো বছরের বেশি সময় আগে মহাকরণ বা রাইটার্স বিল্ডিংয়ের একটা অংশে গবেষণা ও কর্মোদ্যোগের সূচনা হয়েছিল তৎকালীন হুগলির ইংরেজ কালেক্টর উইলিয়াম জেমস হার্সেল ও তাঁর ২ বাঙালি অনুচর খান বাহাদুর আজিজুল হক ও রায়বাহাদুর হেমচন্দ্র বসুর তত্ত্বাবধানে। বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তা আজ গোটা বিশ্বে ফিঙ্গার প্রিন্ট পরীক্ষা নামে স্বীকৃত ও পরিচিত। সারা বিশ্বে অপরাধ বিজ্ঞান, বিচার ব্যবস্থা, শনাক্তকরণ, দলিলপত্র পরীক্ষা ও পুলিশ প্রশাসনের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা আজ অপরিহার্য।
১৮৫৮ সালে ইংরেজ প্রশাসক উইলিয়াম জেমস হার্সেল নিজের উদ্যোগে প্রজাদের হাতের ছাপ নেওয়ার পদ্ধতি সূচনা করলেও সরকারি উদ্যোগের অভাবে তা পরিপূর্ণতা পায়নি তখনো। ১৮৯৭ সালের ১৬ আগস্ট জলপাইগুড়ির কাঠালগুড়ি চা বাগানের তৎকালীন ম্যানেজার হৃদয়নাথ ঘোষ নিজের বাংলোয় নৃশংসভাবে খুন করা হয়। গলা কেটে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। চুরির অভিযোগে তাঁর পরিচারক রঞ্জন সিং ওরফে কাঙ্গালি জেল খেটেছিল। তাই সন্দেহর তীর ছিল তার দিকে। খুনের অকুস্থলে রক্তমাখা আঙুলের ছাপ দেখে বিশ্বে প্রথম বার অপরাধী পরিচারক রঞ্জন সিং ওরফে কাঙ্গালিকে চিহ্নিত করা হয়।
১৮৯৭ সালে কলকাতায় বিশ্বের প্রথম অফিশিয়াল ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরো স্থাপিত হয় ইংরেজ কালেক্টর উইলিয়াম জেমস হার্সেল ও তাঁর ২ বাঙালি অনুচর খান বাহাদুর আজিজুল হক ও রায়বাহাদুর হেমচন্দ্র বসুর ঐকান্তিক গবেষণার ফলেই। ১৮৯৭ সালের মার্চে সরকারি কমিটি আঙুলের ছাপ দেখে অপরাধী শনাক্ত করার পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দেয়। তারপরই কলকাতায় স্থাপিত হয় ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরো।
তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা এক্ষেত্রে হারিয়ে দেয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে। ১৯০১ সাল পর্যন্ত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে অপেক্ষা করতে হয় নিজস্ব ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরোর জন্য। সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি ফেলুদার গল্প সোনার কেল্লায় সিধু জ্যাঠার মুখে উইলিয়াম জেমস হার্সেলের নাম শোনা যায়।
অবসরের পর ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আঙুলের ছাপ দেখে অপরাধী শনাক্ত করার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানী স্যর ফ্রান্সিস গ্যালটনের হাতে তুলে দেন উইলিয়াম জেমস হার্সেল। ১৮৯০ সালে ফ্রান্সিস গ্যালটন জানান দুজন মানুষের আঙুলের ছাপ কখনো এক নয়। ১৮৯২ সালে ফ্রান্সিস গ্যালটন ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’ গ্রন্থে উইলিয়াম জেমস হার্সেল, আজিজুল হক ও হেমেন্দ্রনাথ বসুর গবেষণার সব তথ্য স্বীকার করে নেন।