রান্নাঘর

মুঘল বাদশাহদের বাবুর্চির খানা, ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁর নস্টালজিয়া করিম’স

Traditional restaurant nostalgia Karim's

The Truth of Bengal: মাটন নিহারি। চিকেন জাহাঙ্গির। এবার পুজোয় দিল্লির সেই ঐতিহ্যবাহী কেরিম সাপুকুর এই সবর্ষ জিভে জল আনা পদ চেখে দেখবেন নাকি? করিম’স মানেই মুঘল সম্রাটদের একেবারে খাস রসুই ঘরের যে স্বাদ বা গন্ধের কথা আমরা এতদিন জেনে এসেছি, দিল্লির জামা মসজিদের কাছে যে শতাধিক বছরের পুরোনো রেস্তোরাঁ নিয়ে এত নস্টালজিয়া, এত মিথ তাই তো এখন চলে এসেছে কলকাতায়। কিন্তু জেনে রাখা ভাল করিম’স কলকাতায় এসেছে বটে কিন্তু তার মশলা থেকে রন্ধন প্রণালী সবই নিয়ন্ত্রিত হয় জামা মসজিদের লাগোয়া এলাকার ওই আইকনিক রেস্তোরাঁ থেকে অর্থাৎ রন্ধন কৌশল যার জন্য করিম’স-এর নান থেকে মটন বড়া কাবাব এত প্রসিদ্ধ তার ‘অথেন্টিসিটি’ ধরে রাখার জন্য করিম’স-এর এখন গোটা ভারতবর্ষে বিস্তার হলেও, তার খুঁটিনাটি সবই নিয়ন্ত্রণ হয় রাজধানী দিল্লি থেকে।

“ইতিহাস বলে, ১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহের পরে বাহাদুর শাহ জাফরকে, অর্থাৎ শেষ মুঘল সম্রাটকে যখন ব্রিটিশ সেনারা দিল্লি থেকে উৎখাত করল, তখন মুসুলি রসুইয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত এক বাবুর্চি পালিয়ে এসে জামা মসজিদের কাছে দোকান খোলেন। প্রথমে সেই দোকান থেকে অর্থাৎ সেই বাবুর্চি মহম্মদ আজিজ জামা মসজিদের সামনে থেকে শুধু আলু-গোস্ত আর রুটি বিক্রি করতেন। কিন্তু অতি দ্রুত তাঁর সেই দুটি পদই এত জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে যে তিনি এবার বড় দোকান খোলেন। তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ করিম উদ্দিনের নামে এই মোগলাই রেস্তোঁরার নাম হয় ‘করিম’স’। ১৯১৩ সালে জামা মসজিদের পাশের এলাকা ‘গলি কাবাবিয়া’- তে যাত্রা শুরু হয় করিম’স-এর। ক্রমশই আইকনিক হয়ে ওঠা এই রেস্তোরাঁ পরের চার প্রজন্ম রাজধানী দিল্লির বাইরে যায়নি। যে রেস্তোরাঁর খামেরি রুটি আর মটন নিহারি নাকি গান্ধী পরিবারের পর্যন্ত ফেভারিট, মাঝেমধ্যেই রাহুল গান্ধী নাকি যেসব

পদ চেখে দেখেন তা সীমাবদ্ধ ছিল শুধু ভারতবর্ষের রাজধানীতে। কিন্তু করিম’স-এর মালিকরা পঞ্চম প্রজন্মে এসে গোটা দেশ জুড়েই নিজেদের এই আইকনিক রেস্তোরাঁ ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই অনুযায়ী কলকাতার মৌলালী, পূর্ব কলকাতার সল্টলেকে খোলা হয়েছে করিম’স। কিন্তু শনিবার রাতে নয়া দিল্লির জামা মসজিদে কাছের সেই আদি এবং অকৃত্রিম করিম’স-এ ফিশ তন্দুরি খেতে খেতে বুঝতে পারলাম কীভাবে তাঁরা কলকাতায় গেলেও নিজেদের জাত এবং কুলীনত্বকে বজায় রেখেছেন। যতটাই তাঁরা মুখের কুলুপ এঁটে রাখেন নিজেদের রন্ধন কৌশল নিয়ে ততটাই রান্নার বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করা এবং ব্যবহার করার বিষয়ে তাঁরা খুঁতখুঁতে। যেমন একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, করিম’স-এ এখনও মাংস ফ্রিজারে রাখে না। বরফ দিয়ে মোড়া ধাতব বাক্সে মাংস রাখলেই নাকি ঠিক মতো সংরক্ষণ হয় এবং রান্না করলে স্বাদে আলাদা বিশেষত্ব আসে। রিভার্স সুইংয়ের পদ্ধতি যেমন যে-কোনও পেস বোলারের হৃদয়ের কুঠুরিতে জমিয়ে রাখা গোপন সম্পদ তেমনই করিমাস-এর রান্নাও আসলে একশো বছর ধরে চলতে থাকা একটা পারিবারিক ‘ট্রেড সিক্রেট’। সেই জন্যেই বোধহয় করিম’স-এর মটন বড়া কাবাব কিংবা চিকেন তন্দুরির ভিতরে যেন কোনও রহস্য লুকিয়ে থাকে, যা একশো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও অনুকরণ করা বা কপি করা কঠিন। বিরিয়ানি তার সঙ্গে ফিশ তন্দুরি কিংবা যে-কোনও তন্দুর ডিশই হোক, করিম’স-এ গেলে শেষ পাতে শাহি টুকরাটা মিস করা যাবে না। ওটাই তো বাহাদুর শাহ জাফরের শায়েরি আর শাহি মেজাজের নিদর্শন ।

Related Articles