সম্পাদকীয়

শাহের অহমিকার বেলুন ফাটিয়ে দিল দিল্লির ভয়াবহ বিস্ফোরণ

অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তান যেমন ক্ষুধার্ত বাঘের মত থাবা মারতে চাইছে, সেখানে এই ধরনের অহমিকা সর্বস্ব মন্তব্য না করলেই ভাল হতো।

জয়ন্ত চক্রবর্তী: কদিন আগে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একটি সভায় গিয়ে সদম্ভে ঘোষণা করেছিলেন যে, ২০১৪ সালের পর ভারতে জঙ্গিহানার ঘটনা সেই ভাবে ঘটেনি। ২০১৪ অর্থাৎ মোদি ও বিজেপি ক্ষমতায় আসার বছর। এই কথা কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, ২০১৪ সালের পর ভারতে সন্ত্রাসী হানা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মুখে কী এইরকম আত্মতুষ্ট মার্কা কথা মানায়? দিল্লির লালকেল্লার কাছে গত মঙ্গলবার গাড়িবোমা বিস্ফোরণ যেন অমিত শাহের অহমিকার বেলুনে পিন ফোটানোর মতো ঘটনা।

অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তান যেমন ক্ষুধার্ত বাঘের মত থাবা মারতে চাইছে, সেখানে এই ধরনের অহমিকা সর্বস্ব মন্তব্য না করলেই ভাল হতো। কেউ যদি এই লেখা পড়ে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ওপর দায় চাপাতে চান, তা হলে তিনি ভুল করবেন। আসলে আমার বলার উদ্দেশ্য হল, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির আত্মতুষ্ট মনোভাব। যেহেতু পাহেলগাঁও-এর পরে আর জঙ্গি নাশকতার বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি এবং অপারেশন সিঁদুর পাকিস্তানি জঙ্গিদের বিষদাঁত অনেকটাই ভেঙে দিয়েছে– তাই নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোও। পাকিস্তানি জঙ্গিরা আর বদলা নেবে না। এই ধারনাটি কত বড় ভুল তার প্রমাণ দিয়ে গেল লালকেল্লার কাছে এই গাড়িবোমা বিস্ফোরণ।

এই সেই লালকেল্লা বা রেড ফোর্ট যেখানে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবস এবং ২৬ জানুয়ারি দেশের সাধারণতন্ত্র দিবসে পতাকা উত্তোলন করে থাকেন এবং দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন। সাধারণ মানুষও প্রতিদিন লাল পাথরে সাজানো এই কেল্লা দেখতে যান। অনতিদূরেই দিল্লি মেট্রো। আর একটু নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখানে কী আশা করা অন্যায় হতো! দিল্লির আই টোয়েন্টি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ২০ জনের মতো হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। সবাই নিরীহ দেশবাসী। এদের অপরাধ কী ছিল! লালকেল্লা দর্শনই কী অপরাধ ছিল। এঁরা বুঝবেন কী ভাবে যে ঘৃণ্য ঘাতকের দল বসে আছে লালকেল্লার পাশেই? যাঁদের এই বিষয়টি দেখার কথা তারা তো নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। এটা ঘটনা যে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি বা এনআইএ তদন্তে মেমেছে। কিন্তু এই প্রশ্ন কী করা যাবে না যে এদের ইন্টেলিজেন্স ব্যবস্থা এত দুর্বল কেন? জঙ্গিদের আক্রমণের কোনও ইঙ্গিত তারা পাবে না কেন? কাশ্মীরে যে কোনও জঙ্গি হানাতেই এই ইন্টেলিজেন্স ব্যার্থতার কথা ওঠে এবং অত্যন্ত সঙ্গত ভাবেই ওঠে।

নিয়ম হচ্ছে এই সমস্ত জঙ্গি সংগঠনে গোয়েন্দাদের ঢুকিয়ে দেওয়া। যাতে যে কোনও ধরনের নাশকতার খবর আগে মেলে। ভারতে এই মুহূর্তে লস্কর-ই-তইবা, জৈশ মহম্মদ, আইএস, আল কায়দা, হরকত-উল-আনসারি, হরকত-উল-জিহাদি, মুজাহিদিন, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন এবং কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট-এর সন্ত্রাসীরা সক্রিয়। এরা স্লিপর সেল গড়ে ভারতে জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে রেখেছে। এই স্লিপার সেলে ইন্টেলিজেন্স-এর লোক ঢুকিয়ে দেওয়া কী একেবারে অসম্ভব! মানছি যে এখন এই স্লিপার সেলে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন ছাত্র, অধ্যাপক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র, গবেষকের মতো হোয়াইট কলার পদাধিকারিরাও। কিন্তু, সর্ষের মধ্যে ভূত খুঁজে পাওয়াটাই তো গোয়েন্দাদের কাজ। একটা সময়ে বলা হতো কলকাতা হল জঙ্গিদের সেফ করিডর। তাই, এখানে জঙ্গি হানার সম্ভাবনা কম।

আমেরিকান সেন্টারে জঙ্গি হানা কিন্তু এই শহরেই ঘটেছিল। এই শহরের মধ্য কলকাতার মফিদুল ইসলাম লেন দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গির জন্ম দিয়েছে। আমির রাজা খান এবং আসিফ রাজা খান, এই দুই ভাইয়ের। আমির রাজা খান গুজরাট পুলিশের এনকাউন্টারে মারা গেছে। আসিফ রাজা খান দুবাইতে এক জঙ্গি নেটওয়ার্ক-এর মাথা হিসেবে কাজ করছে। ভারতের যে কোনও জায়গায় জঙ্গি হানা হলে সাদা পোশাকের পুলিশের তীক্ষ্ণ নজর থাকে এই মফিদুল ইসলাম লেনের দিকে। আমি মিশ্চিত এবারও আছে। কিন্তু গোটা ভারত যে মফিদুল ইসলাম লেন হয়ে আছে, তার খবর কে রাখবে!

Related Articles