রাজ্যের খবর

নিপেন পন্ডিতের দর্জির দোকানে আজও বজায় রয়েছে ট্রাডিশন, রোজকার তার এই অভ্যাস যেন নেশা

Nipen Pandit's tailor shop still maintains the tradition, his daily habit is like addiction

The Truth Of Bengal : বিশ্বদীপ সাহা, কোচবিহার : অন্যদিনের মতো আজও রেডিও চালিয়ে এক মনে কাপড় কেটে যাচ্ছেন তুফানগঞ্জ এর দর্জি নিপেন পন্ডিত। প্রবীণ বন্ধুরাও তার পাশে দোকানে বসে একসাথে রেডিওর গান উপভোগ করে চলেছে আজও। তুফানগঞ্জ শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ড ইলেকট্রিক অফিস রোডে এই দোকানের সামনে দিয়ে গেলে এখনো শোনা যায় নানা ভাষার গান কিংবা আলোচনা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এর যুগেও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে রেডিও ব্যবহার করায় শহরের অনেকেই এসে ভিড় জমান দোকানটিতে।

রেডিওর প্রতি ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে নিপেন জানান, দোকানে একঘেয়ে জীবনের মাঝে এটি কাজের উৎসাহ বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে দোকানে যখন খদ্দের থাকেনা সেই মুহূর্তে রেডিও আমাকে উত্তেজনা জোগায়। মন চাঙ্গা রাখতে সকালে নেপালি গান শুনি। সন্ধ্যায় নিয়মিত চীনের লোকসংস্কৃতি বাংলায় শুনি। ১৯৮১ সালে বিয়েতে শ্বশুর বাড়ি থেকে রেডিওটি দেয়।

তখন থেকেই আমার দৈনন্দিন রুটিনের এর একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া কিংবা ক্রিকেট বিশ্বকাপ রেডিও ছাড়া এক সময় অসম্পূর্ণ ছিল। এক কথায় বাঙালির রোজনামচার সঙ্গে রেডিও যেন ওতপ্রোতভাবে ভাবে জড়িয়ে ছিল। নিপেনের দোকানে আড্ডা দিয়ে সেই স্মৃতিচারণ করেন অনেকেই। শহরের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় কুন্ডু নিপেনের দোকানে আড্ডা দিতে এসে বলেন, ওর রেডিও শব্দ শুনলেই হারানো শৈশব ফিরে পাই। যন্ত্রটির কারণে খদ্দেরদের আড্ডাও জমে ওঠে। স্মৃতির টানে সযত্নে যন্ত্রটি যেভাবে আগলে রেখেছে তা সচরাচর দেখা যায় না। বিংশ শতকে ভারতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পায় এই রেডিও। সকাল থেকে রাত নির্দিষ্ট সময়ে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল যন্ত্রটি। সে সময় উচ্চবিত্ত মানেই ঘরে থাকা চাই বিদেশি রেডিও। তারপর সময় গড়িয়েছে। অত্যাধুনিক যুগে বিনোদনের মাধ্যমের অভাব নেই। আজ এই যন্ত্র অনেকটা জাদুঘরে রাখার মতো। বর্তমানে রেডিওর জায়গা দখল করে নিয়েছে মোবাইল ফোন। সামাজিক মাধ্যমে নিমিষের মধ্যে খবরা খবর বিনোদনের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে মোবাইলে জেরে। আজকের দিনে অধিকাংশ মানুষ যখন মোবাইল মুখী সেই মুহূর্তেও নিপেনের মত ব্যক্তিরা রেডিওতে আস্থা রেখেছেন।

Related Articles