কলকাতারাজ্যের খবর

‘ভুতুড়ে’ ভোটার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের কড়া নজর

Chief Minister's complaint about 'ghost' voters, Trinamool is keeping a close eye across the state

Truth Of Bengal: নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটারের নাম ঢুকিয়ে বিভিন্ন রাজ্য দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি। বাংলাতেও এই চক্রান্ত হচ্ছে বলে বুধবার বাজেট পেশের পর সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকা নিয়ে বিশেষ নজর রাখতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। সব বিধায়ককে নিজের নিজের এলাকায় ভোটার তালিকায় নজর রাখতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ভুতুড়ে ভোটার নিয়ে আমরা মিটিং ডাকছি। একটা ভোটার ভেরিফাই না করে হবে না। দলগত ভাবে কড়া নজরদারি শুরু হচ্ছে।’

এই বিস্ফোরক অভিযোগ প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্র, দিল্লির প্রসঙ্গও সামনে রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মহারাষ্ট্রে ৪০ লাখ ভোটার বাড়ল কী করে? আর দিল্লিতে আপনারা কী করেছিলেন? একদিন না একদিন তো বের হবেই। শুনুন অঙ্কটা কেউ দেরিতে কষে, কেউ আগে কষে। আমরা অঙ্কটা কষে দেখে নিয়েছি। একদিন না একদিন সত্যটা বের হবেই।’

মুখ্যমন্ত্রী বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতি বিধানসভার ভোটার লিস্টে ২০ থেকে ৩০ হাজার ভুয়ো নাম ঢোকানোর জন্য বাবুরা বাংলায় এসে বসে আছেন। এই পরিকল্পনা কিন্তু আমরা ভেস্তে দেব। কারণ, অন্য রাজ্য যা পারে না, বাংলা তা পারে। আমরা চুরিটা ধরে ফেলেছি! ভোট এলেই এরা চলে আসে। আমি এদেরকে বলি ভুতুড়ে রাজনৈতিক দল।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘ভোটার তালিকা, আধার কার্ডে নাম তোলার কাজ কেন অনলাইনে হবে? কেন ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন করা হবে না? এভাবে জালিয়াতি করেই ভোটে কারচুপি করার চেষ্টা হচ্ছে।’

সম্প্রতি দিল্লির ভোটে আপকে হারিয়ে জয়ী হয়েছে বিজেপি। তার আগে মহারাষ্ট্রে জিতেছে। এই জয়ের পেছনে ভোট কারচুপি রয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। সেই প্রসঙ্গ সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানান, বাংলায়ও এমন চক্রান্ত হচ্ছে। ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটারদের নাম তোলা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, একদিন পর বৃহস্পতিবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও শোনা গেল সেই একই কথা। তিনি বলেন, দিল্লিতে ভোটের ৭-৮ মাস আগে থেকে ধাপে ধাপে প্রায় ২০ হাজার ভোটারের নাম উঠেছে। আবার কিছু বাদও গিয়েছে। একেকটা বিধানসভায় একেকরকম হয়েছে। এটা খুব একটা সঠিক বলে আমার মনে হচ্ছে না।’

প্রসঙ্গত, গত শনিবার দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের আগেরদিন শুক্রবার মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। রাহুলের অভিযোগ, মহারাষ্ট্র মোট প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। রাহুলের সঙ্গে ছিলেন শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ সঞ্জয় রাউত, এনসিপি (শরদ) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে।

সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল বলেন, ২০১৯ সালের বিধানসভা ও ২০২৪ সালের লোকসভা এই ৫ বছরের মধ্যে ৩২ লক্ষ নতুন ভোটারের নাম ওঠে। ২০২৪-এর লোকসভা ও বিধানসভা মাঝে যে ৫ মাসের ব্যবধান ছিল সেই সময়ের মধ্যে ৩৯ লক্ষ নয়া ভোটারকে ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হয়। যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন রাহুল গান্ধি। তাঁর প্রশ্ন, মাত্র ৫ মাসের ব্যবধানে কীভাবে এত সংখ্যক ভোটার যুক্ত হল একটি রাজ্যে? বিরাট কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করেন রাহুল। সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল বলেন, মহারাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ৯.৫৪ কোটি। অথচ ভোট দিয়েছেন ৯.৭ কোটি মানুষ। নির্বাচন কমিশনের উচিত এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা।

অনলাইনে ভোটার তালিকায় নাম তোলা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার বাজেট পেশের পর সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের নাম ঢুকিয়ে দেবে। নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাবে। তারা এসে ভোট দেবে। কিন্তু বাংলা এই চেষ্টাকে রুখে দেবে।’

আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগে ভোটার তালিকা নিয়ে বিশেষ নজর রাখতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। সব বিধায়ককে নিজের নিজের এলাকায় ভোটার তালিকায় নজর রাখতে বলা হয়েছে। দেখাতে বলা হয়েছে কী ভাবে না উঠছে, কাদের নাম উঠছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পর নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের শাসক দল। বৃহস্পতিবার ভুয়ো ভোটারের নাম নথিভুক্ত করা সরব হন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ভুতুড়ে ভোটার নিয়ে আমরা মিটিং ডাকছি। একটা ভোটার ভেরিফাই না করে হবে না। দলগত ভাবে কড়া নজরদারি শুরু হচ্ছে। ভোটার ভেরিফিকেশন চাই। বাংলায় চলবে না হরিয়ানা বা মহারাষ্ট্র মডেল। আমাদের রাজ্যে আমরা সতর্ক। কেন্দ্রীয় ভাবে দল সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। অনলাইনে হবে না ভোটার তালিকায় নাম তোলা।’

Related Articles