রাজ্যের খবর

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় নিদর্শন, সন্ন্যাসী-ফকিরের মেলা

A great sign of communal harmony, the fair of monks and fakirs

Truth Of Bengal: চন্দন রায়: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বড় নিদর্শন হল বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর-২ ব্লকের উলকুণ্ডা গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন সন্ন্যাসী-ফকিরের মেলা। গ্রামের এক্কেবারে দক্ষিনে ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে ৬ মাঘ মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। যদিও মকর সংক্রান্তিতে নদীতে পুণ্যস্নানের পর বাবার চরণে মাটির নিচে পুঁতে রাখা খিচুড়ি উত্তোলনের মধ্য দিয়ে পুজোর সূচনা ঘটে। ছয় দিন ধরে বাবার পুজো-অর্চনা ও খিচুড়ি ভোগ নিবেদনের মধ্য দিয়ে মহাধুমধামের সহিত পালিত হয় এই উৎসব। বহু দূর দূরান্ত থেকে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে গ্রামের মানুষ ছুটে আসেন বাবার প্রসাদ গ্রহণ করার জন্য।

১লা মাঘ থেকে ৫ই মাঘ পর্যন্ত প্রতিদিন কেউ না কেউ বাবার উদ্দেশ্যে ভোগ নিবেদন করে থাকেন। কিন্তু ৬ই মাঘ ধুলোটের দিন গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাবার পুজো থেকে শুরু করে বহু দূর-দূরান্ত থেকে আসা গ্রামের মানুষদের খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে থাকেন। ওইদিন বিকালেই অনুষ্ঠিত হয় মেলাটি। হিন্দু- মুসলিম সম্প্রদায় মানুষের আগমনে মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে পুণ্যভূমি। এরপর রাত্রে বাবাকে মাছের ভোগ নিবেদন করে সেটি নিকটবর্তী শ্মশানে নামিয়ে দিয়ে আসতে হয়।

গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে জানতে পারা যায়, প্রাচীনকালে কোন এক ত্রিকালদর্শী সন্ন্যাসী যিনি মুসলিমদের কাছে ফকির বাবা নামে পরিচিত, তিনিই এই মেলার সূচনা ঘটিয়েছিলেন। ছয় মাস ধরে চলতো এই মেলাটি। সিনেমা থেকে পুতুল নাচ, বিবাহের বাসনপত্র থেকে শিশুদের খেলনা, মিষ্টি থেকে শুরু করে ঝুড়ি ভাজা সবকিছুই মিলত এক সময়। উৎসব প্রিয় গ্রামের মানুষ অধীর আগ্রহে বসে থাকতো প্রাণ ভরে মেলার আনন্দ উপভোগ করার জন্য। এটি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব বা মেলা নয়, গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির এক বড় নিদর্শন। মেলাটি সেই সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আজ বহন করে চলেছে গ্রামের উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। আসলে ভক্তিবাদ ও সুফিবাদী আন্দোলনের সুফল এই মেলা। দিন আনা, দিন খাওয়া গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর কাছে মুক্তির দরজা খুলে দিয়েছিল।

Related Articles