
The Truth of Bengal: বাঙালি মাত্রই দেশ-বিদেশে ঘুরতে ভালোবাসেন। পকেটে রেস্তো থাকলে অবশ্যই দূরদেশের পর্বতমালা বা সাগর দর্শনে যেতে পারেন। কিন্তু যাঁরা এই বাংলার আনাচে কানাচে স্বমহিমায় থাকা জায়গায় ঘুরতে যেতে চান,তাঁরা ফুরসত পেলেই যেতে পারেন বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুরে।কেউ যদি ভাবেন,বিদেশ থেকে ঘুরে এলে মন ভালো হবে বা অনেককিছু লাভ হবে তা একেবারেই ঠিক নয়।বিশ্বকবির কথায় বলি,
বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে,বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ,ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে,একটি শিশিরবিন্দু।
বলা যায়, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য মুকুটমণিপুরকে বলা হয় রাঢ় বঙ্গের রানি । বাঁকুড়ার একেবারে দক্ষিনে কংসাবতী ও কুমারী নদী যেখানে মিলেছে সেখানেই গড়ে উঠেছে মুকুটমণিপুর জলাধার। জলাধারের চারিদিকে যে দিকে চোখ ফেরানো যায় সে দিকেই রয়েছে সবুজে ঢাকা ছোট ছোট পাহাড় আর টিলা। ইচ্ছে হলে মুকুটমনিপুর জলাধারের পাড় ধরে হেঁটে অথবা ভ্যান রিক্সায় চড়ে সোজা চলে যেতে পারেন জলাধারের গায়ে থাকা পরেশনাথ পাহাড়ে। কথিত আছে এখন থেকে হাজার বছর আগে দক্ষিণ বাঁকুড়ায় জৈন ধর্ম প্রভাব ফেলেছিল।তাই এই পরেশনাথ পাহাড় হয়ে ওঠে জৈন তীর্থ ক্ষেত্র। পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথরের জৈন তীর্থঙ্করদের একাধিক মূর্তি সেই সাক্ষ্য এখনও বয়ে চলেছে। এই পাহাড়ের গায়ে বাঁধানো সিঁড়ি বেয়ে মুসাফিরানার চুড়ায় উঠলে এক ঝলকেই চেখে নিতে পারবেন মুকুটমণিপুরের যাবতীয় নৈসর্গিক শোভা।
হাতে সময় ও ইচ্ছে থাকলে নৌকায় চড়ে মুকুটমণিপুরের গভীর জলে ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যাওয়া যায় জলাধারের অন্য পাড়ে থাকা ডিয়ার পার্কে। হাতে একটু বেশি সময় থাকলে মুকুটমণিপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় ঝিলিমিলির জঙ্গল ও সুতান। ভাগ্য প্রসন্ন হলে দু’পাশের ঘন শাল পিয়ালের জঙ্গল পেরিয়ে ঝিলিমিলি ও সুতানের রাস্তার ধারে চোখে পড়তে পারে জংলি ময়ূর, শেয়াল বা ছোটখাটো বন্য প্রানীদের চলাফেরা। সবকিছু দেখে আপনার মনে হতেই পারে কংক্রিটের জঙ্গল থেকে স্বস্তির আর ভালো কিছু হতে পারে না।তাই সবার আগে বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে পুজোর পরই আপনি যেতে পারেন লালমাটির সবুজ-অঙ্গনে।যে পাহাড় আপনাকে আদর করে ডাকবে।মাটির মানুষরাও আতিথেয়তায় ভরিয়ে দেবে।শেষে বলতেই হবে,শেষ হইয়াও হইল না শেষ।