অফবিট

নামে আর্শীবাদ হলেও অভিশপ্ত যে বাংলো

Cursed bungalow

The Truth of Bengal,Mou Basu: বাণিজ্য নগরী বোম্বে বা হালের মুম্বইয়ের পশ অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত কার্টার রোড। বলিউডের তাবড়-তাবড় তারকাদের বাসস্থান এই পশ এলাকায়। এক সময় এই কার্টার রোডের শোভাবর্ধন করত সুদৃশ্য এক বাংলো। নামটিও বাংলোর খাসা। “আর্শীবাদ”। নামের মধ্যে আর্শীবাদ হলেও আদতে অভিশপ্ত এই বাংলো। এই প্রাসাদোপম বাড়িতে থাকার সময় কেউই সুখভোগ করতে পারেননি। তীব্র আর্থিক সঙ্কটে পড়েন বাড়ির মালিকরা। হারান যশ খ্যাতি সবকিছু। ব্যক্তিগত জীবনেও নানান সমস্যা, টানাপড়েন হয়। জানা যায়, এক সময় মুম্বইয়ের অভিজাত এলাকা কার্টার রোডে বাস করতেন পার্সি ও অ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ান পরিবারগুলি। ৫ দশক থেকে ধীরে ধীরে তাদের বাংলোগুলি কিনে নিতে থাকেন বলিউডের তারকারা। আর্শীবাদ নামক বাংলোটি আদতে এক পার্সি পরিবারের বাংলো ছিল। ৫ এর দশকে সমুদ্রমুখী প্রাসাদোপম বাংলোটি কিনে নিয়ে তাতে বসবাস শুরু করেন বলিউড অভিনেতা ভারত ভূষণ। বৈজু বাওরা, মির্জা গালিব, গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া নামক বহু হিট জনপ্রিয় সিনেমার নায়ক ভারত ভূষণ এই বাংলো কেনার পর তীব্র আর্থিক সঙ্কটে পড়েন।

দেনায় ডুবে যান তিনি। বাংলো ছেড়ে দেন ভারত ভূষণ। বহু বছর ভগ্ন দশায় পড়ে ছিল বাংলোটি। ৬ এর দশকে অভিশপ্ত এই বাংলোর কথা শোনেন বলিউডের জুবিলি স্টার রাজেন্দ্র কুমার। কেউই অভিশপ্ত এই বাংলো কিনতে চাইত না। বাংলোর দাম গিয়ে দাঁড়ায় ৬০ হাজার টাকায়। রাজেন্দ্র কুমার এই টাকা জোগাড় করতে পরিচালক বি আর চোপড়ার পরপর ৩টে ছবি সই করেন। মেয়ে ডিম্পলের নামে নতুন কেনা বাংলোর নাম ডিম্পল দেন রাজেন্দ্র কুমার। অভিশাপ কাটাতে বন্ধু অভিনেতা মনোজ কুমারের পরামর্শে বাংলোর গৃহপ্রবেশে পুজোপাটও করেছিলেন রাজেন্দ্র কুমার। এই বাংলোতে বসবাসের শুরুতে সব ঠিকঠাক চলছিল। একের পর এক সিনেমা হিট হচ্ছিল। টানা ২৫ সপ্তাহ সব সিনেমা হলে তাঁর অভিনীত সিনেমা চলার কারণে জুবিলি স্টার হিসাবে খ্যাতি পান রাজেন্দ্র কুমার। আচমকাই এরপর ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। ১৯৬৮-৬৯ সালে একের পর এক বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। আর্থিক সঙ্কটে পড়েন রাজেন্দ্র কুমার। এক সময়ের হিট ছবির নায়ক রাজেন্দ্র কুমার বহু সিনেমায় পার্শ্ব অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করতে বাধ্য হন।

আর্থিক সমস্যার কারণে সাধের বাংলো বেচতে বাধ্য হন রাজেন্দ্র কুমার। ৭-এর দশকে বাংলোটি কিনে নেন বলিউডের সুপারস্টার রাজেশ খান্না। ধূমকেতুর মতো উত্থান রাজেশ খান্নার। ৭-এর দশকে পরপর ১৭টি সিনেমা বক্স অফিসে হিট হয়ে রেকর্ড গড়েন রোমান্টিক হিরো রাজেশ। তিনিই বাংলোর নাম রাখেন আর্শীবাদ। তবে বাংলো মোটেও আর্শীবাদ নিয়ে আসেনি তাঁর জীবনে। সাতের দশকের শেষ দিকে ধীরে ধীরে বলিউডের শাহেনশাহ “অ্যাংগ্রি ইয়াং ম্যান” অমিতাভ বচ্চনের কাছে আসন হারাতে শুরু করেন রাজেশ খান্না। বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে তাঁর একের পর এক সিনেমা। আর্থিক সঙ্কটে পড়েন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনেও টালমাটাল অবস্থায় পড়েন উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করা রাজেশ। স্ত্রী ডিম্পল ২ মেয়ে টুইঙ্কল ও রিঙ্কিকে নিয়ে এই বাংলো ছেড়ে চলে যান। সাফল্যও অধরা হতে শুরু করে একাকী রাজেশের। এক সময় কোনো কাজ ছিল না তাঁর৷ বেশিরভাগ সময় লিংকিং রোডে নিজের অফিসেই কাটাতেন রাজেশ। মৃত্যুর আগে ৩ দশক পর পুরনো আর্শীবাদ বাংলোতে ফের থাকতে শুরু করেন তিনি। তবে তার আগে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। ২০১৪ সালে বাংলোটি ৯০ কোটি টাকায় কেনেন এক শিল্পপতি। ২০১৬ সালে আইকনিক আর্শীবাদ বাংলো ভেঙে ফেলা হয়।

Related Articles