কেন্দ্রের বঞ্চনার পরেও মানুষের পাশে রাজ্য, কেন বললেন চন্দ্রিমা
Why did Chandrima say that the state is on the side of the people despite the deprivation from the center?

Truth Of Bengal: জয় চক্রবর্তী: কেউ কারও ব্যক্তিগত টাকা এখানে দিচ্ছেন না। মানুষের টাকা থেকেই দেশের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়। রাজ্যের বিভিন্ন খাতে প্রাপ্য টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘ সময় ধরে আটকে রেখেছে। তবুও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের প্রথম দফার শেষ দিন ছিল। বাজেট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জবাবি ভাষণে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘কেন্দ্র দীর্ঘ সময় ধরে টাকা আটকে রেখেছে। কিন্তু এটা তো ভিক্ষা নয়। এটা অধিকার। কিন্তু সেই অধিকারকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।’
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের টাকা দীর্ঘ সময় ধরে কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রেখেছে। বিধানসভার অধিবেশনে অভিযোগ করলেন অর্থমন্ত্রী। হিউম্যান রিসোর্ট থেকে শুরু করে আবাস যোজনার খাতে প্রচুর টাকা বাকি রয়েছে। বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ’একাধিক কেন্দ্রীয় দল এই রাজ্যে এসেছে। সংশ্লিষ্ট অফিসারের গ্রিন সিগন্যালের পরেও রাজ্য সরকারকে বঞ্চনা করছে কেন্দ্র।’ অধিবেশনে তিনি আরও বলেন, ‘নাম নিয়ে কি এসে যায়? আমি জলস্বপ্ন বললাম নাকি জল জীবন মিশন বললাম তাই নিয়ে কত কথা। টাকাটাই আটকে দিল।’
২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর আবাস যোজনা সম্পর্কে সবুজ সংকেত দিয়ে চিঠিও এসেছিল। তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দেয়নি। অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে ১০০ দিনের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলছেন ভুয়ো জব কার্ডের জন্যই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। আপনারও তো কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েছিলেন। তাদের রিপোর্টের পরেও টাকা দিলেন না কেন?’
এরপর অর্থমন্ত্রীর তথ্য দিয়ে বলেন, ‘অন্ধ্রপ্রদেশে ৩৪ লক্ষের ওপর ভুয়ো জব কার্ডের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশে সংখ্যাটা ৩২ লক্ষের ওপর। মহারাষ্ট্রে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার এর বেশি ভুয়ো জব কার্ডের সন্ধান মিলেছে। রাজস্থানে ১২ লক্ষের ওপর এবং উত্তরপ্রদেশে ৮৯ লক্ষের ওপর ভুয়ো জব কার্ড। কই এইসব রাজ্যগুলির টাকা তো আপনি বন্ধ করলেন না? তা হলে শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন?’
পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনাচিন্তা প্রথম থেকেই ছিল। লক্ষীর ভাণ্ডার থেকে শুরু করে মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনাকে রোধ করার জন্য অপরাজিতা বিল। ভারতীয় জনতা পার্টির বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন স্কচ অ্যাওয়ার্ড অর্থ দিয়ে কিনেছে রাজ্য সরকার। বিষয়টি নিয়ে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এই বিষয়ে চন্দ্রিমা বলেন, ‘যে কোনও পুরস্কার বা এমন অ্যাওয়ার্ডের ব্যাপারে পার্টিসিপেশন অ্যাপ্লিকেশন করতে হয়। কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্যও করা হয়েছিল। বা রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য করা হয়। এখানে অর্থ দিয়ে অ্যাওয়ার্ড কেনার প্রশ্ন নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘মহিলাদের মর্যাদা মানুষের মর্যাদা কী করে আদায় করতে হয় সেই লড়াই শিখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ আমরা কেউ বলি না রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। আমরা সবাই বুঝি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ উনি নিজেকে মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ওনার থেকে অনেক শেখার আছে।’
রাজ্য সরকার অনেক ধার করছে এমন অভিযোগ বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি একাধিকবার অধিবেশন কক্ষে তুলেছে। তার জবাবও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ধারের পরিমাণ কেমন হবে সেটাও বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। ৭ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৭০ কোটি টাকার মতো আমাদের ধার নিতে হবে। মনে রাখতে হবে সমস্ত রাজ্যই ধার নেয়।’ অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘মহারাষ্ট্র ডবল ইঞ্জিন সরকার ৮ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকার ওপরে ধার নিয়েছে। তেলেঙ্গানা ৯ লক্ষ কোটি টাকার ওপরে ধার নিয়েছে। তা হলে শুধু বাংলার কথা উঠছে কেন?’
উত্তরবঙ্গ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেছেন। বিজেপির এক বিধায়ক উত্তরবঙ্গকে ফের আলাদা করার ডাক দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গে উন্নয়নের ব্যাপারে কোনও খামতি নেই বলে অধিবেশনে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে রাজ্যপালের ভাষণ দিয়ে শুরু হয়েছিল বাজেট অধিবেশন। বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় সেই অধিবেশন শেষ হয়েছে। ফের শুরু হবে মার্চ মাসের ১০ তারিখ থেকে। মার্চ মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলবে।
কেন্দ্রের কাছে আটকে থাকা রাজ্যের প্রাপ্য টাকা
- জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প- ৩৫৮০.৯৫ কোটি টাকা
- হিউম্যান রিসোর্স (হেলথ এন্ড মেডিক্যাল)- ৪৪৭.৬০ কোটি টাকা
- আয়ুষ- ৭৯.৯৭ কোটি টাকা
- ন্যাশনাল সেফটি ফর ওম্যান (ফার্স্ট ট্রাক কোর্ট)- ১.০৪ কোটি টাকা
- মনরেগা- ৬৫১৯.৫৯ কোটি টাকা
- প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা- ৮১৪০.৯৩ কোটি টাকা
- পিএমএওয়াই- ১৪৬.৩১ কোটি টাকা