পাকিস্তান থেকে পরিচালনা? X- হ্যান্ডলের নতুন ফিচারে ভারতের রাজনৈতিক মহলে ঝড়
উদাহরণস্বরূপ, কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার অ্যাকাউন্টে “বেসড ইন দ্য ইউনাইটেড স্টেটস” দেখাচ্ছে।
Truth Of Bengal: এলন মাস্কের এক্স–এর নতুন ফিচারে ভারতের রাজনীতিতে ঝড়। কোন অ্যাকাউন্ট কোন দেশ থেকে খোলা হয়েছে তা দেখা যাচ্ছে এক্স-এ। আর তাতেই তৈরি হয়েছে এই পরিস্থিতি। রাজনৈতিক দিক থেকে কয়েকটি সক্রিয় অ্যাকাউন্ট যাদের মধ্যে সরকারের সমালোচকরাও আছেন, সেই সব অ্যাকাউন্ট ভারতের বাইরে থেকে পরিচালিত হচ্ছে বলে দেখা গিয়েছে। এই তথ্য সামনে আসার পর বিজেপি দাবি করেছে যে, কিছু প্রো-কংগ্রেস এবং অ্যান্টি-হিন্দু এক্স হ্যান্ডেল পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে চালানো হচ্ছে।
পাকিস্তান থেকে পরিচালনা? X- হ্যান্ডলের নতুন ফিচারে ভারতের রাজনৈতিক মহলে ঝড় pic.twitter.com/FyPl3c1PBl
— TOB DIGITAL (@DigitalTob) November 25, 2025
উদাহরণস্বরূপ, কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার অ্যাকাউন্টে “বেসড ইন দ্য ইউনাইটেড স্টেটস” দেখাচ্ছে। একইভাবে, মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের অ্যাকাউন্টের অবস্থান হিসেবে আয়ারল্যান্ড দেখাচ্ছে। এছাড়াও, সরকারের বিরুদ্ধে সরব থাকা বহু অ্যাকাউন্টই ভারতের বাইরে ভিত্তিক বলে পাওয়া গেছে, যাদের বেশিরভাগেই “সাউথ এশিয়া” লেখা রয়েছে।

এই ঘটনা কংগ্রেসকে ঘিরে চাপ বাড়াতে বিজেপিকে নতুন সুযোগ দিয়েছে। আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য এই প্যাটার্নকে ভারতের সামাজিক আলোচনাকে প্রভাবিত করতে এবং ভুয়ো তথ্য ছড়াতে পরিচালিত একটি বিশ্বব্যাপী সমন্বিত অপারেশন বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি টুইট করেন, “বিপুল সংখ্যক প্রো-কংগ্রেস, অ্যান্টি-হিন্দু এবং বিভাজনমূলক জাতভিত্তিক অ্যাকাউন্ট আসলে ভারতের ভেতর থেকে পরিচালিতই হচ্ছে না। বহু অ্যাকাউন্ট পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে চালানো হচ্ছে। প্রায় সবাই তাদের ইউজারনেম বহুবার বদলে পরিচয় গোপন রাখার চেষ্টা করেছে।”
তিনি আরও লেখেন, “এতে কী বোঝায়? ভারতের সামাজিক পরিসরকে প্রভাবিত করা, ভুয়ো তথ্য ছড়ানো ও অভ্যন্তরীণ বিভাজন গভীর করার জন্য একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। এই চক্রান্ত এখন উন্মোচিত।”
নতুন ফিচারটি এক্স–এর স্বচ্ছতা বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ, কারণ প্ল্যাটফর্মটি দীর্ঘদিন ধরেই ভুয়ো তথ্যের জন্য সমালোচিত। এখন “অ্যাবাউট দিস অ্যাকাউন্ট”–এ ক্লিক করলেই দেখা যায় অ্যাকাউন্টটি কোথা থেকে চালানো হচ্ছে, কতবার ইউজারনেম বদলানো হয়েছে এবং কোথা থেকে এক্স অ্যাপ ডাউনলোড করা হয়েছে।
বিজেপি নেতারা বলেন, এই উদাহরণগুলো সরকারের সেই দাবি সত্য প্রমাণ করে যে, সিএএ–বিরোধী আন্দোলন বা এখন-প্রত্যাহৃত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মতো পূর্ববর্তী প্রতিবাদকে যেসব এক্স হ্যান্ডেল জোরালো করেছিল, সেগুলোর অনেকই বিদেশ থেকে চালানো হচ্ছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিজেপি নেতা প্রীতি গান্ধী বলেন, অ্যান্টি-সিএএ আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন এবং ২০২০ দিল্লি দাঙ্গার সময়ও একই ধরনের প্যাটার্ন দেখা গিয়েছিল—সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো, আন্দোলন উসকে দেওয়া এবং বিকৃত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া।
তিনি টুইট করেন, “অবস্থাটা এত গভীর যে এখন সরকারি কংগ্রেস হ্যান্ডেলগুলোও বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। যখন পার্টি-ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টেই বিদেশি লগইনের ছাপ পাওয়া যায়, তখন বড় প্রশ্ন উঠে আসে—কংগ্রেসের ডিজিটাল বার্তা আসলে কে তৈরি করছে?”
আরও একটি অদ্ভুত উদাহরণ হলো ‘দিয়া শর্মা’ এবং ‘যশিতা নাগপাল’—উভয়ের অ্যাকাউন্টই পাকিস্তানে ভিত্তিক পাওয়া গেছে। দু’জনের অ্যাকাউন্টেই বিজেপি ও সরকারের বিরুদ্ধে পোস্ট ছিল।
মঙ্গলবার ‘দিয়া শর্মা’–র অ্যাকাউন্টে দেখা যায় সেটি সাসপেন্ড। অন্যদিকে ‘যশিতা নাগপাল’, যিনি নিজেকে “রাজনীতি ও সামাজিক ইস্যু উন্মোচনকারী সাংবাদিক” বলে দাবি করেন, একটি পোস্টে লেখেন যে তাকে শুধু কংগ্রেসই নয়, ভারতের আরও রাজনৈতিক দলও নিয়োগ করেছিল।
তার পোস্টে লেখা, “কয়েক মাস আগে আমায় কংগ্রেস-সহ ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক দলও তাদের ক্যাম্পেইনের অংশ হতে নিয়োগ করেছিল। সৌভাগ্যক্রমে, আমি বর্তমানে যেসব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছি সেগুলোর লোকেশন আগে থেকেই বদলে রেখেছি।”
বিজেপির মালব্য আরেকটি পোস্টে লেখেন, এটি “নতুন প্রজন্মের কংগ্রেস সমর্থকদের” একটি ঢেউ, যাদের বেশিরভাগই পাকিস্তান বা বাংলাদেশের বলে এখন উন্মোচিত হচ্ছে।

তাঁর ভাষায়, “এই অ্যাকাউন্টগুলো হয় আইএসআই-সংযুক্ত সংগঠন, যারা অ্যান্টি-ইন্ডিয়া প্রোপাগান্ডা ছড়ায়, অথবা সীমান্তের ওপারের ব্যক্তিরা, যারা কংগ্রেস সমর্থনের মুখোশে অ্যান্টি-হিন্দু বিদ্বেষ ছড়ায়।”
তিনি আরও বলেন, এটি সেই “বারবার দেখা যাওয়া অসামঞ্জস্যতা”–র সঙ্গে যুক্ত—নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের হাইপ এবং বাস্তব ফলাফলের মধ্যে ফারাক।
তার দাবি, “এই ‘সমর্থন’ ভারতীয় নয়—এটি বট নেটওয়ার্ক, এজেন্সি ও সীমান্তপার অপারেশনের মাধ্যমে তৈরি। এটি প্রকৃত ভোটারের প্রতিফলন নয়।”
শুধু ভারতেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও এই নতুন ফিচার বিতর্ক তৈরি করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাগা সমর্থকদের বেশকিছু প্রভাবশালী অ্যাকাউন্ট যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভিত্তিক পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ৩.৯২ লাখ ফলোয়ারসহ ‘MAGA NATION’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট পূর্ব ইউরোপ থেকে পরিচালিত।
‘TRUMP_ARMY’ নামে আরেকটি অ্যাকাউন্ট, যেটিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেও উল্লেখ করেছিলেন, সেটি ভারতে ভিত্তিক বলে পাওয়া গেছে। এর প্রোফাইলে এখন লেখা, “একজন ভারতীয়, যে আমেরিকা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মাস্ককে ভালোবাসে”—বিবিসির রিপোর্টে এমনটাই বলা হয়েছে।
এরকম আরও বহু অ্যাকাউন্ট আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত বলে পাওয়া গেছে।
ফলে অনেকে অবস্থান ফিচারের নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এক্স–এর হেড অফ প্রোডাক্ট নিকিতা বিয়ার বলেছেন, তথ্য ৯৯% সঠিক।
তবে কেউ যদি ভিপিএন ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে থাকেন, তাহলে লোকেশন সঠিক নাও হতে পারে। ফিচারে আপডেট আনার পর এক্স এখন লোকেশন বাটনের পাশে একটি ছোট ডিসক্লেমার যোগ করেছে, যেখানে বলা আছে—এই তথ্য সম্পূর্ণ নির্ভুল নাও হতে পারে।
ডিসক্লেমারে লেখা, “অ্যাকাউন্টের ভিত্তিক দেশ বা অঞ্চল সাম্প্রতিক ভ্রমণ বা অস্থায়ী অবস্থানের কারণে পরিবর্তিত হতে পারে। এই তথ্য সবসময় সঠিক নাও হতে পারে এবং সময়ে সময়ে বদলাতে পারে।”






