দেশ

গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ সম্ভব: সুপ্রিম কোর্ট

Rape charges can be proved even if there are no injury marks on private parts: Supreme Court

Truth of Bengal: টিউশন শিক্ষকের হাতে এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ৪০ বছরের পুরনো ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির সাজা বহাল রেখেছে। আদালত রায়ে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, ধর্ষণের শিকার নারীর গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও, অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণ করা যেতে পারে।

অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে দাবি করেছিল যে, ভুক্তভোগীর গোপনাঙ্গে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই, তাই ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব নয়। সে আরও দাবি করে যে, ভুক্তভোগীর মা “অসচ্চরিত্রের মহিলা” এবং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।

তবে বিচারপতি সন্দীপ মেহতা ও প্রসন্ন বি বরালের বেঞ্চ এই দুই যুক্তিকেই নাকচ করে দিয়েছে। বিচারপতিরা বলেছেন, “শুধুমাত্র চিকিৎসা পরীক্ষায় গুরুতর আঘাত না পাওয়াটা ভুক্তভোগীর নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে না।”

বিচারপতি প্রসন্ন বি বরালে রায়ে লেখেন, “প্রত্যেক ধর্ষণের মামায় ভুক্তভোগীর গোপনাঙ্গে আঘাত থাকবে—এমন কোনো নিয়ম নেই। প্রতিটি মামলার বিচার নির্ভর করে নির্দিষ্ট প্রমাণ ও পরিস্থিতির ওপর। আমরা আবারও বলছি, ভুক্তভোগীর গোপনাঙ্গে আঘাতের অনুপস্থিতি মামলার ভিত্তিকে দুর্বল করে না।”

সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, ধর্ষণের মামলায় ভুক্তভোগীর সাক্ষ্যকে আহত সাক্ষীর সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ, নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্য থাকলে শুধু ভুক্তভোগীর বয়ানের ওপর ভিত্তি করেও অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।

অভিযুক্ত যে ভুক্তভোগীর মায়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, সে সম্পর্কেও সুপ্রিম কোর্ট কঠোর মন্তব্য করেছে। আদালত বলেছে, “মায়ের কথিত চরিত্রের সঙ্গে এই মামলার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি শুধুমাত্র ভুক্তভোগীর সাক্ষ্যকে খাটো করার একটি প্রচেষ্টা।”

এই মামলা ভারতের বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার একটি দুঃখজনক উদাহরণ। ১৯৮৪ সালের ১৯ মার্চ যখন স্কুলছাত্রী টিউশন ক্লাসে গিয়েছিল, শিক্ষক কৌশলে অন্য দুই ছাত্রীকে বাইরে পাঠিয়ে তাকে ঘরে আটকায়। এরপর, তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। বাইরে অপেক্ষমাণ ছাত্রীরা দরজায় ধাক্কা দিলেও, তা খোলা হয়নি। পরে মেয়েটির দাদী এসে তাকে উদ্ধার করেন।

অভিযোগ দায়ের করতে গেলে অভিযুক্তের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা মেয়েটির পরিবারকে হুমকি দেয়। কিছুটা দেরিতে হলেও এফআইআর দায়ের করা হয়।

১৯৮৬ সালে নিম্ন আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়। তবে এলাহাবাদ হাইকোর্ট এই রায় বহাল রাখতে ২৬ বছর সময় নেয়, আর সুপ্রিম কোর্ট আরও ১৫ বছর পর চূড়ান্ত রায় দেয়।

এই রায় আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার সমালোচনা তুলে ধরে, কিন্তু একইসঙ্গে স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির সাক্ষ্যকেও পর্যাপ্ত প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অপরাধীদের জন্য একটি কড়া সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।

Related Articles