দেশ

বিক্রম–১ রকেটের উদ্বোধন, ভারতের বেসরকারি মহাকাশ যাত্রার নতুন দিগন্ত

প্রথম তিন ধাপে কঠিন জ্বালানি এবং শেষ ধাপে হাইপারগলিক তরল জ্বালানির ইঞ্জিন, যা কক্ষপথে সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ দেয়।

Truth Of Bengal: ভারতের বেসরকারি মহাকাশ প্রযুক্তিতে যুক্ত হল এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। বৃহস্পতিবার হায়দ্রাবাদে স্কাইরুট অ্যারোস্পেসের অত্যাধুনিক ‘ইনফিনিটি ক্যাম্পাস’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানেই প্রথমবার প্রকাশ্যে এল দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি দেশের প্রথম বেসরকারি অরবিটাল–শ্রেণির রকেট ‘বিক্রম–১’। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত কয়েক বছরে ভারত মহাকাশ গবেষণায় যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকটি দেশই পারে। মহাকাশ খাতে বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য দরজা খুলে দেওয়ায় উদ্ভাবন আরও দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।হায়দরাবাদ–ভিত্তিক স্টার্টআপ স্কাইরুট অ্যারোস্পেস তৈরি করেছে চার–ধাপের এই রকেট। ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জনক বিক্রম সারাভাইয়ের নামে এর নামকরণ। রকেটটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ মিটার ও ব্যাস ১.৭ মিটার। মূল উদ্দেশ্য  ছোট স্যাটেলাইট দ্রুত, সহজে এবং কম খরচে কক্ষপথে পাঠানো।

রকেটটির পুরো কাঠামো কার্বন-ফাইবার ।  ফলে ওজন হালকা হলেও শক্তিশালী।মাত্র ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় কোনও উৎক্ষেপণ স্থানে অ্যাসেম্বল করে লঞ্চ করা সম্ভব।টুকরো অবস্থায় বিশ্বের যেকোনও জায়গায় নিয়ে গিয়ে উৎক্ষেপণ করা যাবে— ফলে গ্রাহকদের ভারতেই আসতে হবে না।এতে ব্যবহৃত ৩ডি-প্রিন্টেড লিকুইড ইঞ্জিন উৎপাদন-সময়ে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় করে।নিম্ন কক্ষপথে ৩৫০ কেজি পর্যন্ত পে-লোড বহনক্ষমতা। সান-সিঙ্ক্রোনাস অরবিটে ২৬০ কেজি পর্যন্ত তুলতে সক্ষম। একাধিক স্যাটেলাইট একসঙ্গে বা আলাদা কক্ষপথে স্থাপন করা সম্ভব। প্রথম তিন ধাপে কঠিন জ্বালানি এবং শেষ ধাপে হাইপারগলিক তরল জ্বালানির ইঞ্জিন, যা কক্ষপথে সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ দেয়।

গত তিন বছরে মহাকাশ খাতে বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য নীতি সহজ করেছে কেন্দ্র। ‘বিক্রম–১’ সেই পরিবর্তনেরই বাস্তব সাফল্য। এতদিন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ইসরোর ‘পিএসএলভি’ ছিল বিশ্বের ভরসা। কম খরচে উৎক্ষেপণ সুবিধার কারণে আন্তর্জাতিক বিপণিতেও ছিল ভারতের একাধিপত্য। এবার সেই জায়গায় বেসরকারি প্রতিযোগী হিসেবে উঠে এল স্কাইরুট— যা ভারতীয় মহাকাশ শিল্পে এক স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।আইআইটি–র দুই প্রাক্তনী পবন চন্দন ও নাগা ভরত ডাকাকে নেতৃত্বে তৈরি এই রকেট এ দেশের তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী দক্ষতা ও ঝুঁকি নেওয়ার সাহসের প্রতীক।ছোট স্যাটেলাইটের দ্রুত বাড়তে থাকা বৈশ্বিক বাজারে জায়গা করে নিতে ২০২৬ সালের শুরুতেই প্রথম মিশন পাঠানোর লক্ষ্য স্কাইরুটের।ভারতের মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে ‘বিক্রম–১’ এক নতুন দিগন্ত যেখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের হাতে হাত মিলিয়ে ভারতকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার আশা করছে বিজ্ঞানমহল।

Related Articles