স্বাস্থ্য

সুস্থ সংস্কৃতির একান্ত প্রয়োজন বর্তমানে

A healthy culture is desperately needed today

Truth of Bengal,বাবুল চট্টোপাধ্যায়: একটা সময় ছিল যখন এই বিষয় নিয়ে লেখার কোনও প্রয়োজন ছিল না। কারণ সুস্থ পরিবেশ ছিল ঘরে ঘরে। ফলে সুস্থ সমাজ দেখা যেত সব পরিবেশে। সবাইকে নিয়ে চলার একটা রীতি বা চল ছিল। ফলে আর যায় হোক না কেন একটা ভালমন্দ সেন্স তৈরি হতো সহজে। ফলে খুব তাড়াতাড়িই বাড়ির বড়দের কাছ থেকে ভাল শিক্ষা পেয়ে যেত ছোটরা। খুব সহজে। না, এখন আর তা হয় না। মানে দেখা যায় না সেই পরিবেশ।

কারণ মানুষ এখন আর তেমন যৌথ পরিবার নেই। অন্যদিকে পরের ছেলে পরমানন্দ গোছের ভাব সকলের। ফলে সময়ের তালে তালে চলা হয়ে উঠেছে মানুষের অভ্যেস। অন্যদিকে মানুষ আর কোনও ভাল-মন্দ জ্ঞান নিতে চাইছে না। সকলে এখন সেল্ফ সেন্টার হয়ে পড়েছে। আমাদের ছোটবেলা থেকেই কোনও সঠিক শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। সবাই যে যার মতো করে ভাবছে। কেউ নিজের থেকে বেশি কিছু ভাবতে পারছে না।

মানে অন্যের জন্যে ভাবনার কোনও সময় নেই। যেন কেউ কারও নয়। এমনকী রক্তের সম্পর্কেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। তাই আমাদের লেখার তাগিদ হয়ে পড়েছে একটা সুস্থ সংস্কৃতির প্রয়োজন আজকের সমাজে। আমরা জানি আমরা ভাল নেই। আমরা ভাল নই। কারণ অনেক আছে। যার মধ্যে অবশ্যই একটা বড় কারণ হল আমাদের একটা অর্থনৈতিক অবস্থা। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে কিছুতেই ধরে রাখতে পারছি না।

এক্ষেত্রে একটা কথা আমাদের ভাবতে হবে যে আমরা কোনও কম্পিটিশনে না গিয়ে আমাদের সাধ্যের মধ্যে নিজেদের চলতে হবে। কোনও মতেই কোনও তুলনা বা প্রতিযোগিতায় গেলে চলবে না। আমি আমার পরিসরে চলবো- এই ভাবনাকে আমাদের জীবনে জাগাতে হবে। কাউকে হিংসে করে আখেরে আমার কোনও লাভ হবে না– এই ধারণাটিতে আমাদের চলতে হবে। আমি যা পারি তা আমারই।

অন্য কেউ আমার হয়ে কিছু করতে পারবে না। আমার সুখ আমার দুঃখ আমারই। কেউ তা লাঘব করতে পারবে না। আবার আমিও অন্যের কিছু একান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারবো না। সুতরাং আমার জেলাস বা হিংসে আমার মানায় না। ঠিক এই ধারণা থাকলে সুস্থ সংস্কৃতি আমাদের চলে আসবে। কোনও একদিন বা একভাবে এটা সম্ভব নয়। একেবারে ছোটবেলা থেকে এটাকে আমাদের মধ্যে শেখানো প্রয়োজন। আমরা শুধু নিজের কথা ভেবে চলেছি।

এমনটা হলে চলবে না, কারণ জানতে হবে আমার আশেপাশের পরিবেশটাও আমার। আমার সেটা রক্ষা করার দায়িত্ব আছে। সুতরাং এই দাযিত্বপালনকারী জ্ঞানকে অনুভবে আনতে হবে। চালমান জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটেছে আমাদের সভ্যতা। আজকের যুগে আমার সবাই এক ফাস্ট লাইফে বাস করছি। আমাদের ভাবনার সময় নেই। আমদের কোনও কাজে ভালবাসার সময় নেই। আমরা সবাই কেমন যেন যন্ত্রে পরিণত হয়ে গিয়েছি। বিষয়টি আমদের খুব চেনা।

তা হল আমদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের বিন্দুমাত্র শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। আমরা সবাই ছুটছি সেই অর্থের সন্ধানে যে এই সুখের ঠিকানা আছে। কিন্তু সত্যি কি তাই? মনে তো হয় না। বরং আমার তো মনে হয় একটা বাড়তি চাকচিক্য আমাদের একেবারে অন্ধ করে দিচ্ছে। আর আমরা ঠিক সেই কারণে ছুটে চলেছি অধিক অর্থের মোহে। আর সেখানেই হয়েছে আমাদের বিপদ।

আমরা হাঁপিয়ে উঠলেও কিছুতেই কম্পিটিশন ছাড়ছি না। কিন্তু কেন যে তা করছি তা আমরা তলিয়ে ভাবছি না। আর ঠিক এর ফলেই অনেক সময় সুস্থ সংস্কৃতি ধরে রাখা যাচ্ছে না। তা হলে কি আমরা এ কথা বলতে পারি না যে আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে নিজ হাতে ধ্বংস করে চলেছি। আমরা যে সংস্কৃতির ধারক ও বাহক তাকে কি আমরা ঠিকভাবে রাখতে পারছি? বোধহয় না। আর এর জন্যে আমরা নিজেরাই দায়ী। চারিদিকে নানা অপসংস্কৃতি হয়ে চলেছে। কী তার কারণ? একবার ভেবে দেখলে জানতে পারবেন এর জন্যে আমরা কতটা দায়ী।

আর কীভাবেই বা আমরা দায়ী। আমাদের কোথায় যেন সভ্যতা হারিয়ে গিয়েছে। সমস্ত ক্ষেত্রে এক পচনশীল অবস্থা। আপনি কোথাও সেভ নন। সর্বত্র যেন লোলুপতা গ্রাস করে নিয়েছে এই সমাজে। কোথাও শান্তি নেই। খুন, ধর্ষণ, চুরি, রাহাজানি, মদ, জুয়া, পরকিয়া কিছু বাকি নেই এই অপসংস্কৃতির সমাজে। একটা ভয়ঙ্কর খারাপ সময়ের মধ্যেই আমরা চলেছি। আমাদের কোনও শিক্ষাই যেন কোনও কাজে লাগছে না। আমরা চারিদিকে যে অপসংস্কৃতি দেখছি সেগুলিকে কোনও প্রতিবাদ করছি না। আসলে প্রতিবাদের ভাষা আমাদের হারিয়ে গিয়েছে।

আর আমরা দোষ দিচ্ছি সমাজের। আমরা ভাবছি পেছনের দিকের কথা। কিন্তু সত্যি কি তাই? আসলে আমাদের সাহস হারিয়ে গিয়েছে। আর আমরা দোষ দিচ্ছি পিছুটান বা ভয়ের। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা সত্যি নয়। আমাদের বলা আর করার মধ্যে এক বিস্তর ফারাক। আমরা মুখে বলি এক আর করি আর এক। আমাদের ভাবার সঙ্গে ভাষার কোনও মিল নেই। কাজের সঙ্গে মতের কোনও মিল নেই। আর আমরা দোষ দিয়ে দিই সমাজের।

কোনওভাবেই আমরা নিজের দোষ কিছুতেই দেখি না। এটাই আমাদের সমস্যা। আমাদের দোষ না দেখতে পাওয়া এক চরম ক্ষতির দিক। আমরা ভাল তখনই যখন আমার চারপাশটা আমি বা আমরা ভাল রাখতে পেরেছি। আমরা কি সত্যিই তা পারি? কবে শিখবো আমরা আমাদের মূল্যবোধকে! কবে শিখবো আমার আমাদের মান সম্মান বোধকে জাগ্রত করতে! আমরা আমদের জাত্যাভিমান কবে জাগাতে শিখবো! কেমন আমাদের আচার-আচরণ সভ্যতা আমাদের রুচিবোধ হবে তাই বা কবে জানবো! এগুলি খুবই কমন প্রশ্ন।

আমার তো মনে হয় সুস্থ শিক্ষা দিতে হবে একেবারে ছোটবেলা থেকে। সব ধরনের ভাল শিক্ষাকে একটা শিশুর মধ্যে দিলে ও তাকে ধারণ করলে এমনিতেই ভাল শিক্ষায় রপ্ত হবে আগামী প্রজন্ম। সুতরাং সময় খারাপের দোহাই দিয়ে আমরা আমাদের নিজেদের কাজ থেকে বিচ্যুত হতে পারি না। আর জানতে হবে আমাদের জীবনে অর্থটাই সব নয়। অর্থ একটা সময় পর্যন্ত ঠিকঠাক। কিন্তু তার পরেও একটা জীবন আছে।

আমাদের  সেই জীবনকে খোঁজ করতে হবে। সেই জীবনে আমাদের বাঁচতে হবে। আর ঠিকঠাক বাঁচতে হবে। কেমন করে কীভাবে আমরা খুশি থাকতে পারি তা আমাদের বেছে নিতে হবে। খুউ ছোট ছোট বিষয়েও খুশি থাকা যায়। জানতে হবে খুশি মানে জৌলুস আবেগ নয়। আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

আমদের মূল্যবোধকে জাগাতে হবে। অন্যের খুশিতেও নিজেকে মেলে ধরতে হবে। সকলকে সমান সম্মান ও শ্রদ্ধা দিতে হবে। শুধু নিজের কথা ভাবলে চলবে না। গোটা সমাজের কথাকেও ভাবতে হবে। তবেই সুস্থ সংস্কৃতিকে আনা সম্ভব। আমরা মানুষ হিসাবে আমাদের মানবিক বোধকে জাগাতে পারলেই আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে পারবো। আমরা কি তা সত্যিই পারবো না? পারলে হৃদয়ের অনুভূতিতে সাড়া দিন প্লিজ।