রান্নাঘর

বাঙালি খাবার দিয়ে রসনা তৃপ্তি করতে চান? তাহলে জগন্নাথ হোটেল আপনার যাওয়ার নিশ্চিন্ত ঠিকানা

Jagannath Hotel

The Truth of Bengal: চিতল তেল মাছের পেটি। কিংবা সর্ষে ইলিশ। গলদা চিংড়ির মালাইকারি। বাঙালির হৃদয়ের ভাষা দিবসে এইরকম বাঙালি খাবার দিয়ে রসনা তৃপ্তি করতে চান, অথচ বাঙালির রেস্ত অনুযায়ী? তাহলে কলেজ স্ট্রিটের ‘বর্ণপরিচয়’ মার্কেটের ভিতরে জগন্নাথ হোটেল আপনার যাওয়ার নিশ্চিন্ত ঠিকানা হতে পারে। আদতে পাইস হোটেল, কিন্তু বাঙালির নিজস্ব। খাবারের দুর্দান্ত ‘আউটলেট’। উত্তর বা মধ্য কলকাতায় যাঁদের অফিস বা কাজকর্মের জন্য যেতে হয়, তাঁরা জগন্নাথ হোটেলে খাননি, এটা হতেই পারে না। কারণ, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত হরেক রকম বাঙালি রান্না আপনি চাখতে পারছেন নিজের ইচ্ছেমতো। মটন কারি, চিকেন কারি সবই পাওয়া যায়, এবং মেলে বাঙালির দুপুরের কিংবা রাতের ভাতের সঙ্গে মেখে খাওয়ার চেহারায়। দামও চমৎকার নাগালের মধ্যে। কিন্তু জগন্নাথ হোটেলের আসল খ্যাতি মাছের জন্য। পার্শে পাবদা থেকে শুরু করে চিতলের তৈলাক্ত পেটি, কিংবা মৌরলা মাছের চচ্চড়ি, অর্থাৎ বাঙালিয়ানার সঙ্গে জড়িয়ে মাছের যেসব পদ, তার সবই পাওয়া যায় কলেজ স্ট্রিটের এই ছোট্ট পাইস হোটেলে। ছোট হলেও ‘বর্ণপরিচয়’ মার্কেটের ভিতরে এই খাওয়ার হোটেলের আয়োজন চমৎকার।বসে খাওয়ার সুবন্দোবস্ত আছে। মহিলারা যদি যান, বা কেউ সপরিবারে যায়, তাহলে দোতলায় আলাদা চেয়ার টেবিল। আর নীচের তলায় সকলের জন্য ‘গণ ব্যবস্থা’। যে-কোনও পাইস হোটেলের মতোই ‘জগন্নাথ’-এও ভাত, ডাল আর ঝুরি আলুভাজা দিয়ে শুরু করাটা ভাল। তার সঙ্গে থাকতে পারে মোচার কোনও পদ বা শুক্তো। বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন ধরনের সবজিরও, মানে তরকারিরও জোগান থাকে জগন্নাথ হোটেলের হেঁশেল থেকে। কখনও সেটা ফুলকপির তরকারি হতে পারে, আবার কখনও মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘণ্ট। এই পর্যন্ত যা বললাম তা সবই ইনিংসের গোড়াপত্তন করে ‘ফার্স্ট ডাউন’ বা ‘সেকেন্ড ডাউন’ পর্যন্ত। জগন্নাথ হোটেলে মিডল অর্ডারের আসল ব্যাটিং শুরু হয় পছন্দ মতো মাছ বাছাই করার পরে। এবং সেটা কাতলা মাছের পেটি হলেও ‘লা জবাব’। এত বড় সাইজের, তৈলাক্ত কাতলা মাছের

পেটি খাওয়াটা সত্যিই দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। আর দামটাও এমন, যে কখনও মাছ খাওয়ার পর বুকে চিনচিনে ব্যথা হবে না। খাওয়া যদি মাছ নিয়ে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চান, মানে আপনি ‘অ্যাডভেঞ্চারাস’ হন, তাহলে অসংখ্য পছন্দ রয়েছে আপনার সামনে। সর্ষে বাটা দিয়ে ইলিশ থেকে শুরু করে পাবদা বা ট্যাংরার ঝাল, তোপসে বা মৌরলার বিভিন্ন পদ পাবেন জগন্নাথ হোটেলের মেনু তালিকায়। আছে ছোট চিংড়ির ঝোল থেকে গলদা চিংড়ির মালাইকারির মতো মন ভাল করে দেওয়া মাছের ‘ডিশ’ও। মাছটাই যেহেতু জগন্নাথ হোটেলের ‘স্পেশালিটি’, তাই সপ্তাহের যে-কোনও দিন কলেজ স্ট্রিটের এই পাইস হোটেলে ঢুকে যে-কোনও ধরনের মাছের পদ চেখে নিতে পারেন। আমি তো এমনকি প্রবাসে, মানে বিদেশে বসবাসকারী বাঙালি বন্ধুদের নিয়ে জগন্নাথ হোটেলে গিয়ে চিতল মাছের ‘পেটি’ও পেট পুরে খেয়ে এসেছি। চিতল মাছ হয়তো জগন্নাথ হোটেলে অন্য মাছের পদের থেকে একটু বেশি দামি, কিন্তু তাও শহরের অন্য যে সব বাঙালি খাবারের রেস্তোরাঁ তাদের ‘মেনু চার্ট’-এ চিতল রেখেছে, তার তুলনায় অর্ধেক দাম কলেজ স্ট্রিটের এই পাইস হোটেলে।

জগন্নাথ হোটেলের কথা বলতে গেলেই আসলে মাছের কথা এত বেশি করে চলে আসে যে অন্য পদ বা রান্না নিয়ে বেশি আলোচনা হয় না। ঠিক যেমন ‘রয়‍্যাল’- এর ক্ষেত্রে, মানে রয়‍্যাল ইন্ডিয়ান হোটেলের ক্ষেত্রে ‘মটন চাপ’ আর ‘বিরিয়ানি’ তারকা আকর্ষণ, তেমনই জগন্নাথ হোটেলে মাছের পদগুলোই ব্লকবাস্টার। সেইজন্যই মটনের বিভিন্ন পদ বা শেষ পাতের চাটনি নিয়ে খুব আলোচনা হয় না। কিন্তু আসলে ওই শেষ পাতে চাটনিও ‘স্লগ ওভার’-এ ব্যাটিংয়ের মতোই দুর্দান্ত। কখনও টম্যাটো, কখনও জলপাই আবার ঋতু অনুযায়ী অন্য কোনও কিছুর চাটনি দিয়ে জগন্নাথ হোটেল একেবারে মুগ্ধ করে দিতে পারে। আপনার প্রত্যাশার ‘আস্কিং রেট’ এত বেড়ে যাবে যে আপনি বারে বারে এই পাইস হোটেলে ফিরে আসতে চাইবেন।জগন্নাথ হোটেল আসলেই অনেকটা রাহুল দ্রাবিড় বা চেতেশ্বর পূজারার মতো, হয়তো পাইস হোটেল হওয়ার কারণে চেহারায় বা ভিতরের ‘ইন্টিরিয়র’-এ কোনও চমক নেই, কিন্তু বাঙালি খাবারের জন্য একেবারে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। কেউ যদি বাঙালিয়ানায় বিশ্বাস করেন এবং শুধুমাত্র খাবারই তাঁর কাছে একমাত্র বিচার্য বিষয় হয়, তাহলে জগন্নাথ হোটেলে বার বার ফিরে যেতেই হয়।

Related Articles