রান্নাঘর

অথেন্টিক চাইনিজ ফুড খেতে চান? তাহলে অবশ্যই ট্রাই করুন কলকাতার ছাতাওয়ালা গলির ‘টুং নাম

Chinese food resturant

The Truth of Bengal: ‘তুমি ‘তেরে নাম’-এ যাবে? সলমন খানের সিনেমা দেখতে যাবে? ঋতুপর্ণ ঘোষ সলমন খানের ‘তেরে নাম’ দেখতে যাবে? আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না!। “ওরে অশিক্ষিত, ওটা তেরে নাম নয়, টুং নাম। অথেন্টিক চাইনিজ ফুড পাওয়া যায়। এতদিন মধ্য কলকাতায় অফিস করছিস, আর টুং নাম-এর খাবার খাসনি?’ এই কথোপকথনটা আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগের, যখনও মধ্য কলকাতার ছাতাওয়ালা গলির ‘টুং নাম- এর সঙ্গে আমার নিত্য সহবাস শুরু হয়নি। কিন্তু বহু জিনিসের জন্য সেরা বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে গেলে। যাঁর উপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখা যায়, সেই ঋতুপর্ণ ঘোষ যে চাইনিজ রেস্তোরাঁকে এত নম্বর দিচ্ছেন তাকে যে চিনে নিতেই হবে, সেটা বুঝে গিয়েছিলাম। বিশেষ করে ঋতুদা প্রথম দিনই বলে দিয়েছিলেন, এই চাইনিজ রেস্তোরাঁর  ‘ক্যান্টোনিজ ফুড’ বা ‘মেই ফুন’ লা-জবাব। আর সত্যিই তো, পরে হিসেব করে দেখেছি, আমার তিন দশকের পেশাদারি জীবনে দুই দশকই যে মধ্য কলকাতায় কেটেছে, সেখানকার খাওয়া-দাওয়ার সেরা ঠিকানাগুলোকে তো চিনে রাখতেই হবে। চিনতে গেলে চিনেদের এই চিনা-রেস্তোরাঁকে চেনাটা বাধ্যতামূলক।

মধ্য কলকাতার যে মহল্লায় সুশান্ত সিং রাজপুত ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ সিনেমার শুটিং করে গিয়েছিলেন, সেই টেরিটি বাজারের উলটোদিকের গলিতে টুং নাম’-এর আস্তানা। যাঁরা ‘টুং নাম’-এ গেছেন, তাঁরা জানেন, চেহারায় বা বৈভবে এই রেস্তোরাঁ কারও সঙ্গেই পাল্লা দিতে পারবে না। এতটাই সাধারণ, এতটাই আড়ম্বরহীন। কিন্তু খাবার? কোনও কথা হবে না। সেই জন্যই হোম ডেলিভারিতে অন্য যে-কোনও রেস্তোরাঁকে বলে বলেই গোল দেয় অথেন্টিক চিনা খাবারের অন্যতম সেরা ঠিকানা। যে-কোনও ফুড ডেলিভারি অ্যাপেও তাই ‘টুং নাম’-এর রেটিং যেমন উপরের দিকে তেমনই তাকে নিয়ে ভোজন রসিকদের উচ্ছ্বাসও কম নয়। চিনের রং লাল হওয়ার আগেই যাঁরা সে দেশ থেকে পালিয়ে এসে ব্রিটিশ উপনিবেশের অন্যতম সেরা শহর কলকাতায় থাকতে শুরু করেছিলেন, তাঁদের বড় অংশই থাকতেন মধ্য কলকাতার এই টেরিটি বাজার, ছাতাওয়ালা গলি, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের আশেপাশে। এই অঞ্চলে তাই মাও-পূর্ববর্তী চিনা-নেতা সান-ইয়াৎ-সেন-এর নামে যেমন রাস্তা আছে, তেমনই চিনা জুতোর দোকান বা চিনা রেস্তোরাঁর সংখ্যাও কম ছিল না।

আজকের কলকাতাতে হয়তো সেই চিন থেকে চলে আসা মানুষদের সংখ্যা কমেছে, কমেছে তাঁদের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসাও, কিন্তু এখনও এই গলিতে, সেই গলিতে রয়ে গেছে খাঁটি চিনা খাবারের বেশ কিছু ঠিকানা। তারই উজ্জ্বলতম উদাহরণ “টুং নাম’। কী খেতে হবে টুং নাম থেকে? প্রয়াত চিত্রপরিচালক এবং জীবনরসিক হিসেবে সুবিদিত ঋতুপর্ণ ঘোষের পরামর্শ মানলে যে-কোনও ধরনের মেই ফুন। সেটা চিকেন কিংবা প্রন, যে-কোনও কিছুর সহযোগী হতে পারে। আর ‘টুং নাম’- এর ক্যান্টোনিজ চাউমিনের খ্যাতিও অনেক দিনের। আমি অবশ্য এই রেস্তোরাঁর ক্রিসপি চিকেন কিংবা ফিশ উইথ ভেজিটেবলস-এর কট্টর ভক্ত। একবার খেতে গেলেই বুঝতে পারবেন, এই ফুড আউটলেটের সস থেকে শুরু করে সব উপাদানই কতটা ‘অথেন্টিক চাইনিজ’। হাক্কা, কিংবা গ্রেভি, যে-কোনও নুডলস চাখলেই সেটা আরও বেশি করে মালুম হয়ে যাবে। আমার মতো অনেক ভোজনরসিক দর্শনে না গিয়ে ভোজনে বেশি আগ্রহী বলে ‘টুং নাম’-এ গিয়ে বসে খেতেও সদা উৎসাহী। কিন্তু যাঁদের টেরিটি বাজারের গলিখুঁজি পেরিয়ে এই ফুড আউটলেট খুঁজে নিয়ে বসে খেতে অস্বস্তি আছে, তাঁদের জন্য হোম ডেলিভারি পছন্দের উপায়। ‘টুং নাম’ যে-কোনও ভোটে অন্য কোনও ফুড আউটলেটকে যে হারিয়ে দিতে পারে, তার আর একটা কারণ দাম। এই মাগিগণ্ডার বাজারেও এই রেস্তোরাঁর অধিকাংশ খাবারের দাম ২০০ টাকার নীচে। যথেষ্ট পরিমাণে খাবার, এবং অথেন্টিক চিনা রান্না, এই সব কিছুকে মাথায় রাখতে হলে টুং নাম-কে ভাল না বেসে উপায় নেই।

Related Articles