সম্পাদকীয়

Tips for Mental Health: মন খারাপ বা ডিপ্রেশন? আপনি কি জানেন আপনার মানসিক অবসাদের আসল কারণ কী? (

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শরীর ও মনের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দেয় কিন্তু আমাদের দেশে মনের শুশ্রূষা আড়ালেই থেকে যায়।

বিপ্লব চৌধুরী: বাংলা গানের ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু তাদের একটি গানের কলিতে গেয়েছে ‘ত্বকের যত্ন নিন’। তবে আমি একটা শব্দ বদল করে বলতে চাই আজকের আধুনিক ও চরম ব্যস্ত জীবনে অতি অবশ্যই মনের যত্ন নিন। সার্বিক ভাবে ভাল থাকার মূল ভিত্তি হল মানসিক সুস্বাস্থ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থ অবস্থা। শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতিকেই সুস্থতা বা স্বাস্থ্য বলা যাবে না। মন শরীরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শরীর ও মনের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দেয় কিন্তু আমাদের দেশে মনের শুশ্রূষা আড়ালেই থেকে যায়। বরং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কুসংস্কার ও ভুল ধারণাই বেশি দেখা যায়। শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে সমস্যা নেই, প্রকাশ্যে সেই বিষয়ে কথা বলতেও সমস্যা নেই কিন্তু মন খারাপ হলে কিংবা মানসিক সমস্যার কথা ও মনোবিদের কাছে যেতে অনীহা ও কুন্ঠা আজও দেখা যায়।

শরীর একদম ফিট, কিন্তু মনটা ভাল নেই, সেক্ষেত্রে শরীর সুস্থ হয়েও কোনও কাজে মন বসে না, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হতে হয় সবসময়। অন্যদিকে মন চাঙ্গা থাকলে শরীর খারাপ হলেও রোগের সঙ্গে লড়াই করা যায়। তাই মনের যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন। কোনওভাবেই মনকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। মনখারাপ, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ যে নামেই ডাকি না কেন এর নেপথ্যে নানা কারণ থাকতে পারে। যেমন, কর্মক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণের চাপ, ভবিষ্যৎ চিন্তা, দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি, প্রিয়জনের মৃত্যু, অপছন্দের কাজ করা, অপরাধ বোধ, পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়া, দীর্ঘ শারীরিক অসুস্থতা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরশীলতা, কম শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদি।

পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্ব জুড়ে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা মানসিক অবসাদের শিকার। ২০১৫-১৬ সালের ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি কুড়ি জনের মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় আক্রান্ত, মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মানুষ মানসিক অবসাদের শিকার। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে, কান্নাকাটি করা, নিজেকে নিরর্থক দোষী কিংবা ব্যর্থ মনে করা, সম্পর্কে অবিশ্বাস চলে আসা, কোনও কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা, সবটাই নেতিবাচক হচ্ছে চারপাশে এমন মনে হওয়া, ভাল না লাগা– এই সব লক্ষণ দেখা দেয়। আজকের ব্যস্ততম জীবনে মনের তো দূর, শরীরের যত্ন নেওয়ারই সময় নেই মানুষের কাছে। এটাই মানসিক সুস্থতার লক্ষ্যে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অজ্ঞানতাও একটা কারণ। তবে মন ভাল রাখতে মনোবিজ্ঞানীদের কিছু পরামর্শ মেনে চলা খুবই জরুরি, মনকে অবহেলা করে সম্পূর্ণ ভাল থাকা সম্ভব নয়। নিরাশা বা হতাশাজনিত দুশ্চিন্তাকে দিনে অন্তত ১০-১৫ মিনিট সময় দিতে হবে নতুবা দিনভর একই দুশ্চিন্তা বার বার মনকে গিলে খাবে। এক্ষেত্রে মনে জন্ম নেওয়া দুশ্চিন্তাগুলো খাতায় লিখে ফেললে মনের চাপটা কিছুটা কমবে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের সঙ্গে সম্মুখে কথা বলতে হবে, ধৈর্য্য হারালে চলবে না। মনের চাপকে বাড়তে দেওয়া যাবে না। কিছুই করতে ভাল না লাগলেও অন্তত বাড়ির ছাদে কিংবা প্রকৃতির মাঝে একটু হাঁটাচলা করা, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন খুব কাজে আসে এই সময়। এছাড়াও পছন্দের গান শোনা, সহজ সরল ভাষার লেখা ইতিবাচক গল্পের বই পড়া, কমেডি শো দেখলে মনের ভারী ভাবটা কিছুটা হালকা হবে। ছবি আঁকা বা কিছু সৃষ্টিশীল কাজ করলে নিজের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা জন্মাবে। এই ছোটো ছোটো পদক্ষেপগুলিই মনকে ভাল রাখবে আর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হবে। সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে গেলে প্রয়োজনে মনোবিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে।

Related Articles