কলকাতা

দক্ষিণ দাঁড়িতে “চাকের ফেরে” জীবন গড়ার ডাক দিচ্ছেন শিল্পী

Durga Pujo 2023

The Truth of Bengal,Mou Basu: নামি-দামি মৃৎশিল্পীদের সমাজে প্রচুর কদর। তাঁদের স্তুতি গাইতে ব্যস্ত সবাই। কে আগে এসব নামি-দামি মৃৎশিল্পীদের শিল্প কীর্তি তুলে ধরবে তা নিয়ে নিরন্তর প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু এসব চাকচিক্যের পাশেই ব্রাত্য, অবহেলিত থেকে যাচ্ছেন অনামী মৃৎশিল্পীরা। যদিও তাঁদের শিল্পকর্ম নামী শিল্পীদের চেয়ে কোনো অংশে কম অসামান্য নয়। মাতৃবন্দনার শুভ লগ্নে দক্ষিণদাঁড়ির মৃৎশিল্পী ও তাঁদের অসামান্য শিল্পকীর্তিকেই বন্দনা করছে দক্ষিণদাঁড়ি ইয়ুথস। দক্ষিণদাঁড়িতে কুম্ভকারদের চাকের ফেরে জীবন গড়ার ডাক দিচ্ছেন শিল্পী অনির্বাণ দাস।দক্ষিণদাঁড়ি ইয়ুথসের এবারের পুজোয় থিমের ট্যাগলাইন হল “চাকের ফেরে জীবন গড়ে। রোদে জলে ভিজে ওরা কাজ করে।।”থিম শিল্পী অনির্বাণ দাস জানান, “কালের চাকে ঘুরে তিলে তিলে রূপ পায় জীবন। কত শত গল্প, ঘটনার হাত ধরে জীবন রূপ পায়। যেমন করে শিল্পীর চাকে কাদামাটি ঘুরে ঘুরে রূপ পায়। কখনো ঘট হয়ে কখনো প্রদীপ হয়ে দেবী মহামায়ার শ্রীচরণে ঠাঁই পায়। কখনো আবার মাটির খুরি তৈরি হয় যা আমাদের রসনাতৃপ্তিতে সাহায্য করে।

রসনাতৃপ্তির পরই খুরি শেষ হয়ে যায় অচিরেই। আবার কখনো ছাঁচ থেকে উঠে এসে দেবদেবীর রূপ পায়। কখনো ভাঁটিতে মাটির তৈরি সামগ্রী পুড়িয়ে লাল রঙ করে কখনো বা ঝলমলে রঙে রাঙিয়ে তোলেন মৃত্তিকা শিল্পীরাই। শিল্পীদের অসামান্য কাজের দক্ষতা ও পরিশ্রমের জোরেই পায়ের তলার কাদামাটি মাথায় ওঠে, প্রণাম পায়, আদর পায়, মান পায়। কিন্তু শিল্পীদের অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়। তাঁদের জীবনের চাকা কালের হাতে নীরবে, নিভৃতে ঘুরপাক খেতে খেতে একইভাবে ঘুরে চলে।”অনির্বাণ আরো জানান, খাস কলকাতার বুকে গড়ে উঠেছে নানান নামকরা অঞ্চল। শহর কলকাতা আজ অনেক বিস্তৃত হয়েছে। গর্বভরে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে নয়া শহরাঞ্চলের নতুন নতুন ইমারত। নামজাদা অঞ্চলে নামি-দামি মৃৎশিল্পীদের বাস। কিন্তু নতুন গড়ে ওঠা শহরের পায়ের কাছে পড়ে থাকে সর্বহারা কুম্ভকারদের নানা রঙে রঙিন ছোট্ট পৃথিবী দক্ষিণদাঁড়ি।

গিন্নি দুর্গা আর ছোট ছোট কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, গণেশদের নিয়ে ওঁদের ছোট্ট পৃথিবী, ছোট্ট ছোট্ট সংসার। আছে ওঁদের চাক, ওঁদের জাদুদণ্ড। আছে ছাঁচ, তুলি, রঙ। প্রাণহীন কাদামাটি শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় প্রাণ পাওয়ার আশায় পড়ে থাকে। নামি-দামি মৃৎশিল্পীদের কীর্তি তুলে ধরতে ব্যস্ত সংবাদমাধ্যম। তাঁদের পুরস্কার দিতে ব্যস্ত শিল্পরসিক থেকে সমাজের অভিভাবকরা। নামি-দামি মৃৎশিল্পীদের কীর্তির মূল্য দিতে ব্যস্ত পুজোর উদ্যোক্তারাও। নামি-দামি মৃৎশিল্পীদের স্তুতিতে মশগুল সমাজের হোমড়াচোমরারা। এসব নামি-দামি মৃৎশিল্পীরাই যেন ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। কিন্তু দক্ষিণদাঁড়ির মৃৎশিল্পীদের সে কপাল কোথায়? বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থানের তালিকায় ব্রাত্য তাঁদের পৃথিবী। তাই এবারের এসব চিরবঞ্চিত অবহেলিত, অনাদৃত মৃৎশিল্পীদের সম্মান জানাচ্ছে দক্ষিণদাঁড়ি ইয়ুথস।

Free Access

Related Articles