ফ্রান্সডঙ্গী থেকে চন্দননগরের রূপান্তর,প্রসিদ্ধ জগদ্ধাত্রীপুজো,ঝর্ণাধারায় আলো
The transformation from Francesdongi to Chandannagar The famous Jagaddhatri Puja

Truth of Bengal, দেবাশীষ ঘোষ: চন্দননগরের প্রসিদ্ধদের মধ্যে অন্যতম অঙ্গ হল তাঁতশিল্প। ফরাসডাঙ্গার শাড়ি, ধুতি, গামছা নামকরণে বিখ্যাত। এদের একটা তন্তুবায় সমিতি ছিল সমাজ সচেতন। এরা সংখ্যায় ছিলেন ১৪০০ ঘর। বিভিন্ন স্থান থেকে তুলো আসতো। পুরনো দলিলে দেখা যায় ভ্যানিলা থেকে দ্যুক দর লেঁয়া জাহাজে তুলো আসত চন্দননগরে। সেই তুলো দিয়ে তৈরি হতো। প্রথমে কাপড় তৈরির জন্য হাতে চালানো মাকুই ব্যবহার হতো। পরে শুরু হয় হাতে চালানো ঠকঠকি তাঁত। এখানকার ধুতি ও শাড়ির এবং গামছার রং পাকা ছিল এমন সুন্দর পাকা রং পাওয়া যেত না অন্য জায়গায়।
অনেক আগে ২৫০ থেকে ৩০০ নম্বর সুতোর কাপড় বোনার জন্য দক্ষ শিল্পী ছিলেন এখানে। বাংলার তাঁত শিল্প নিয়ে বিদেশিদের অনেক মন্তব্য রয়েছে। এখানকার তাঁতিরা কোনও বৃহৎ আধুনিক যন্ত্র ছাড়াই সুন্দর ও অতি সূক্ষ্ম কাপড় তৈরি করতেন।বাংলার বস্ত্রশিল্প ছিল গ্রামীণ কুটির শিল্প। বস্ত্র শিল্পের ব্যবসা বাড়লে তা শহরমুখী হয়। প্রকৃত এবং শ্রেণিগতভাবে সম্পূর্ণ তন্তু শ্রেণি গড়ে ওঠে অষ্টাদশ শতকের একেবারে প্রথম থেকে।
যদিও ষোড়শ শতকের তাঁতিদের কথাও লিখেছেন ইংরেজ পর্যটক পিচ। বাংলার তাঁতি পরিবার তৈরি হতো সাধারণত কৃষি পরিবার থেকে।চাষি পরিবারের অনেক সদস্যইতাঁতের কাজ জানতেন, যেমন জেলেরা জানতেন জাল বুনতে। চাষিরা অবসর সময় কাপড় বুনতো এ কথা ঐতিহাসিক সুশীল চৌধুরিও বলেছেন। এইসব চাষি পরিবার থেকে ক্রমশ তাঁতিদের উত্থান হতে থাকে। শেষে দেখা গিয়েছিল চাষিদের মধ্যে থেকে একটি শ্রেণি তাঁত শিল্পকেই আশ্রয় করে পূর্ণ সময়ের জন্য তাঁতি শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়। চন্দননগরের তাঁতিরা ছিল এমনই।
দাস, রক্ষিত, ভড়, কুণ্ডু এই চার পদবির তাঁতিরা বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। কেশরকুনি তাঁতিরা প্রতিপত্তিশালী ছিল। আরও প্রতিপত্তিশালী ছিল ঝাম্পানিয়া তাঁতিরা। জামদানি তাঁতিরাও খুব বিখ্যাতছিলেন।কিন্তু তারা চন্দননগরের মানুষ ছিলেন না। জাগদিয়ায় চন্দননগরের ফরাসিদের ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র থেকে জানা যায়, এখানে বাফতা ও গাড়া, এই দুইধরনের কাপড় বেশি বিক্রি হতো। আর আসতো সিল্কের কাপড়।
সুতরাং বলতে পারা যায় যে চন্দননগরের বুকে বাফতা, গাবা, সিল্ক এবং কিছুটা নিম্নমানের মসলিন। তাঁতের শাড়ি ও ধুতি বিক্রির বাজার ছিল প্রসারিত। ফরাসি শাসনের অধীনে থেকেও নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে ব্যবসা শুরু স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল।
জগদ্ধাত্রীপুজোর গোড়ার কথা,ঈশ্বরের আউর বাগানে বাংলার মূর্তিশিল্প সক্রিয় বৈশিষ্ট্য সমুজ্জ্বল। বাংলার সমাজে আদিবাসী প্রভাব এবং অন্যদিকে বাণিজ্য থেকে প্রভৃত আয় বাংলার মূর্তিশিল্পকে বিবর্তনশীল এক বিশিষ্ট পরিচয়ে সমৃদ্ধ করেছিল। বহু বছরের পর বছর বিভিন্নপুজোর মাধ্যমে সমাজ মনের ব্যায়াম করে। জগদ্ধাত্রী এমনই এক দেবী। আসেন দুর্গাপুজোর গন্ধের রেখা ধরে। দুর্গার পর লক্ষ্মী, কালী তারপর জগদ্ধাত্রী।
তিনি জগৎকে ধারণ করেন। জগদ্ধাত্রী চতুর্ভূজা। চারটি হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনু ও বান। দেবী সিংহবাহিনী রক্তাম্বড়া। বধ করেছেন করিন্দ্রাসুরকে। অসুর এখানে হস্তি। দেবীর গায়ের রং উদিত সূর্যের আভার মতো। গলায় ঝুলছে নাগয়জ্ঞোপবীত। হাতি বধ কেন? উত্তর দিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ,‘মানুষের চঞ্চল মন খ্যাপাটে হাতির মতন। হাতির বিনাশ মানে চঞ্চল মনের বিনাশ।’