রাজ্যের খবর

দূর্গাপুজোর আগে ব্যাস্ততা নেই তাঁতি পাড়ায়! যুগের তালে হারিয়ে যাচ্ছে তাঁত শিল্প

Ramjibanpur Tantshilpo

The Truth of Bengal: পুজো আর পচিঁশ দিন বাকি।সময় খুব কম। সাজুগুজু করে  উত্সব প্রাঙ্গনে কে না যেতে চায় বলুন ? আট থেকে আশি,.সবাই নজরকাড়ার জন্য আলাদা কিছু পরতে চান।তাই শপিং করার সময়,কুর্তি-চুড়িদার বা জিনস টপের বিষয়ে বেশ চুজি নিউজেনারেশন। কোন পোশাক পরলে ট্রেন্ডি বা স্টাইলিশ লাগবে তা বাছাই করার জন্য মল বা ট্রাডিশনাল দোকাবে গিয়ে বুঝে নিচ্ছেন এই প্রজন্মের ক্রেতারা।কেউ কেউ আবার শাড়ি পরেও ঐতিহ্যের ধারা বয়ে বেড়াতে চাইছেন।সেখানেও পুজো ফ্যাশনের বিষয়টি মাথায় রাখছেন ক্রেতারা।কেনাকাটার বাজারে বৈচিত্র্যের এই সম্ভারের মাঝে যাতে বাংলার তাঁতের শাড়ি হারিয়ে না যায় তারজন্য কারুকার্যে বদল আনা হচ্ছে।ক্রেতা দুরস্ত তাঁতের শাড়ি  উপহার দিতে বাংলার শিল্পীরা এখন থেকেই আলাদা কিছু তৈরির চেষ্টা করছেন।পঃ মেদিনীপুরের রামজীবনপুরের সেই বদলে যাওয়া ছবিটাই ধরা পড়ল।  আর মাত্র হাতে গোনা কয়েক টা দিনের অপেক্ষা তার পরেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গা উৎসব, আপামর বাঙালি মেতে থাকে এই পুজোয়। পুজোতে নারীদের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারে একমাত্র  তাঁতের শাড়ি।

পুজো মানেই চরম ব্যাস্ততা থাকে তাঁতিপাড়ায়। কিন্ত এই বছর ছবিটা যেন আলাদা। আজ আমরা উপস্থিত হয়েছিলাম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রামজীবনপুরে, বহু প্রাচীন এই তাঁত শিল্প কে ধরে রেখেছে এলাকার মানুষজন। আজও “খটাস খটাস”  শব্দে সকালে ঘুম ভাঙে রামজীবনপুর বাসীদের। ছোট থেকে বড় সকলেই এই তাঁদের শাড়ি তৈরির কাজে হাত লাগান।এক একটি তাঁতের শাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে প্রাই ২-৩ দিন । এলাকার তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পরিবার দের দাবি হাতে বোনা তাঁতে সময় লাগে প্রচুর, সেক্ষেত্রে সরকারি সহযোহিতা পাওয়া গেলে মেশিন দিয়ে তাঁত তৈরি করতে পারবো তাতে সময় অনেকটাই কম লাগবে। পাশাপাশি সুতোর তাঁত বন্ধের জন্য বেড়েছে সিল্কতাঁতের চাহিদা। রামজীবনপুর এলাকায় আগে যেখানে ২০০-২৫০ টি পরিবার এই তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল এখন সেট কমে ১০০-১৫০ বাড়িতে এসে ঠেকেছে।

প্রত্যকের সংসার চলে এই তাঁত শিল্প থেকে। কখনো ময়ূর, কখনো আবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে উঠে এই তাঁতের শাড়িতে, যা সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে নারীদের। বাঙালি মেয়েরা বরাবর শাড়ি পরতে ভালোবাসে। পার্বন দিন হোক বা বিয়েবাড়ি!।  আভিজাত্যের সুর বয়ে চলে এই তাঁতের শাড়ি।  রামজীবনপুরের প্রসিদ্ধ তাঁত শিল্প তাই আজও বহাল রেখেছে বেশ কয়েক টি পরিবার। যুগের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে আর কতোটা ধরে রাখতে পারবেন এই তাঁত শিল্পকে সেদিকেই তাকিয়ে শিল্পীরা। আনুমানিক পাঁচশো বছর ধরে ভারতে প্রসিদ্ধি পেয়েছে তাঁতশিল্প। তৎকালে দু’রকম তাঁত শাড়ির প্রচলন ছিল। এক ধনীগৃহের মসলিন। অন্যটি সাধারণের সুতির শাড়ি। তাঁত মূলতঃ একধরনের যন্ত্র,তুলোজাত সুতো থেকে কাপড় বানানো যায় তা থেকে । ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের বসাক সম্প্রদায় আদি তাঁতি। বাংলা ভাগের পর তাঁরা পশ্চিম ও পূর্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যান। তখন তাঁতের পসার ছিল ভালো। অনেকেই কাজ শিখে জীবন চালাতো। তেমনই প্রসিদ্ধ তাঁতশিল্প ছিল রামজীবনপুরেও । বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়ে রা এই কাজের সঙ্গে আর যুক্ত হতে চাচ্ছে না কারণ লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তাঁত শিল্পীরা। হারিয়ে যাওয়ার পথে রামজীবনপুরের এই প্রসিদ্ধ তাঁতীপাড়া।

Related Articles