নুরের হাতে গড়ে উঠছে দুর্গা প্রতিমা ,প্রকৃত অর্থেই দুর্গাপুজো আজ সর্বজনীন
Durga Pujo 2023

The Truth of Bengal: বর্তমান সময়ে যখন ধর্ম নিয়ে আমাদের মধ্যে কত বিভেদ। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উঠছে বিভাজনের দেওয়াল। সেখানে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে নুর মহম্মদের হাতের তৈরি দুর্গা প্রতিমা পৌঁছে যাওয়ার অপেক্ষায় মণ্ডপে মণ্ডপে। দুর্গাপুজোকে প্রকৃত অর্থেই তাই বলা হয় সর্বজনীন। বয়স তখন মাত্র ৫ বা ৭ বছর হবে। শিশুমনের খেয়ালে একদিন কাদা-মাটি নিয়ে খেলতে খেলতেই বানিয়ে ফেলা খেলনা প্রতিমা। আবার কখনও স্কুল যাওয়া আসার পথে স্থানীয় পুকুরে ভাসান দেওয়া প্রতিমার কাঠামো তুলে বাড়িতে নিয়ে এসে খেলতে খেলতেই তাতে কাদামাটির প্রলেপ দেওয়া। ছেলেবেলার ভালবাসার খেলাই আজ জীবিকা হয়ে উঠেছে নুরমহম্মদ চৌধুরির।
পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া মহকুমার আন্দুলিয়ার অঞ্চলের বছর পঞ্চান্নর নুরমহম্মদ পেশায় মৃৎশিল্পী। ছেলের ভালবাসায় কখনও বাধা দেননি বাবা শেখ জাভেদ। স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনিদের নিয়ে সুখী এবং ভরা সংসার নুর মহম্মদের। এলাকায় শিল্পী হিসেবেও যথেষ্ট নামডাক আছে তাঁর। হলদিয়ার বড় বড় মণ্ডপে শোভা পায় তাঁর গড়া দুর্গাপ্রতিমা। কিন্তু শুরুর দিনগুলি এতটা সহজ ছিল না। বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। প্রথাগত শিক্ষা পান রাধাকৃষ্ণ সামন্তের কাছে। তারপর শুরু করেন নিজের ব্যবসা। অনেক বাধা এলেও পিছিয়ে আসেননি এই শিল্পী। গড়ে চলেছেন দুর্গা প্রতিমা।
এখন মূর্তি গড়ার কাজে পাশে পেয়েছেন নিজের স্ত্রী এবং ছেলেকেও। সারা বছর ধরে মূর্তি গড়লেও দুর্গাপুজোর সময়েই তাঁর ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে। তাঁর তৈরি মূর্তি যায় জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে। হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি গড়লেও নিজের ধর্মকে কখনও অবহেলা করেননি নুরমহম্মদ। নিয়ম করে নামাজ পড়েন তিনি। কাজের চাপে রমজানের রোজা রাখতে না পারলেও নিয়মিত মসজিদে যান। নুর মহম্মদ চান, মানুষ সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে ভালবাসুক। আর সেই স্বপ্নপূরণে নিজের একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন হিন্দু পরিবারে। নুর মহম্মদের মতো মানুষের জন্য সত্যিই আজ দুর্গাপুজ হয়ে উঠেছে সর্বজনীন।
Free Access