খেলা

ফুটবলার থেকে ব্যবসায়ী, তবুও তরুণের হৃদয়ে রয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল

From footballer to businessman, East Bengal remains in the heart of the young man

Truth Of Bengal: সুদীপ্ত ভট্টাচার্য – পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র শৈলশহর দার্জিলিং। কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে অবস্থিত এই পাহাড়ি শহরের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দেশ-বিদেশের বহু পর্যটককেই। তারই টানে এখানে ছুটে আসেন তাঁরা। ম্যালের বেঞ্চে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে গরম চা-এর কাপে তুফান তোলেন দার্জিলিংয়ে বেড়াতে আসা সকলেই।

ম্যালের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা সোজা নেমে গিয়েছে চকবাজারের দিকে, সেখানেই এখন নিজের দোকান সাজিয়ে পুরোপুরি ব্যবসতে মন বসিয়েছেন একদা ময়দানের প্রাক্তন ফুটবলার তরুণ মুখিয়া।

বর্তমানে ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেও, ফুটবলার হিসেবেই নিজেকে পরিচিতি দিতে চান তিনি। কেননা, একটা সময় চামড়ার গোলাকার বস্তুটিই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান সবকিছু। ছোটবেলায় থেকেই ফুটবলের প্রতি তাঁর অগাধ ভালবাসা। তাই একটু বড় হতেই ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছিলেন তরুণ।

ধীরে ধীরে ফুটবলের প্রতি প্রেম আরও গভীর হয়েছিল। নামডাকও হয়েছিল এলাকায়। সেই সুবাদে এ পাড়া, ও পাড়াতে ফুটবলের ম্যাচ হলেই ডাক পড়ত কিশোর তরুণের। তবে ফুটবল খেললেও পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছেন সমান তালে।

মেট্রিকুলেশন পাস করার পরই পাহাড় থেকে নেমে তরুণ চলে আসেন শিলিগুড়িতে নর্থ-বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য। সেখানে এসে একদিন চোখে পড়ে যান এই ইউনিভার্সিটির কর্মী চন্দন ঘোষের। যিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন চন্দনের ফুটবল খেলা দেখে। ভেবেছিলেন ফুটবলের মক্কায় এই পাহাড়ি যুবককে সুযোগ করে দিলে খারাপ হয় না! ঠিকমত তৈরি করতে পারলে একদিন হয়ত এই ছেলেটিই দাপিয়ে বেড়াবে ময়দানের সবুজ গালিচায়। সেইমতো তরুণকে তিনি সেই সময়কার ময়দানের অন্যতম জায়ান্ট কিলার খিদিরপুর ক্লাবে খেলার জন্য।

এরপর একটুকু না থেমে তাঁর এই ফুটবল জীবনের কথাগুলি মুঠো ফোনে অবিরাম বলে চললেন লাল-হলুদের প্রাক্তন ফুটবলারটি। তরুণ বলেন, সেই সময় চন্দনদার হাত ধরেই আমার গড়ের মাঠে প্রবেশ। সালটা ছিল ১৯৭৭। মাত্র একবছর আমি খিদিরপুর ক্লাবে খেলেছিলাম। সেই সময় ওই ক্লাবের দায়িত্ব ছিলেন প্রয়াত ভূতনাথ বিশ্বাস।

মাত্র এক বছর খেললেও খিদিরপুর ক্লাবের ওই পরিবেশ আমায় মুগ্ধ করেছিল। এরপর ১৯৭৮-এ আমি চলে যাই লাল-হলুদ শিবিরে। ইস্টবেঙ্গলের স্বর্ণযুগ চলছে তখন। একঝাঁক ফুটবলার। কাকে ছেড়ে কার কথা বলব। সবাই স্টার। তবুও মাঝে মাঝে দু একটা ম্যাচ আমি খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাই বাধ্য হয়েই পরের বছর রাজস্থানে চলে যাই। সেখানে একবছর কাটিয়েই চাকরির সূত্রে চলে গিয়েছিলাম সিকিমে। এরপর ফুটবল সেইভাবে খেলা হয়নি আমার।

কিন্তু মাত্র একবছর খেলেই লা-হলুদের জার্সিকে আপন করে নিয়েছেন তরুণ। এখন সে পুরোপুরি ব্যবসায়ী।

ম্যালের ধারে চকবাজারে গেলেই দেখা মিলবে ইস্টবেঙ্গলের এই প্রাক্তন ফুটবলারের সঙ্গে। কথায় কথায়, তরুণ বলেন, কলকাতা থেকে কেউ এসে যখন ফুটবলের কথা বলে, মনটা তখন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় আমার। হয়ত এখন গেলে অনেকেই আমাকে চিনতে পারবেন না। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল আমার হৃদয়ে থেকে গিয়েছে আজীবন। আর থেকেও যাবে যতদিন আমি এই পৃথিবীতে থাকব। তরুণ বললেন, জানেন এখনও যখন শুনি দল জিতেছে, আমার আনন্দ হয়। আর টিম হারলে অন্যদের মত দুঃখ হয় আমারও। সত্যিই লাল-হলুদের তাঁকে এখনও যে প্রচণ্ড যন্ত্রণা দেয় সে কথা জানাতেও ভুললেন তরুণ ।

তরুণের সেই ইস্টবেঙ্গল এখন আর নেই। ঝাঁ-চকচকে তাঁবুর পাশাপাশি রয়েছে মাল্টিজিম শুরু করে ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত। তবুও বহু ইতিহাসের স্বাক্ষি বহন করে চলা আরও একবার ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে রয়েছে দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা তরুণের। বললেন, সময় পেলেই ছুটে যাব। বহুদিনের ইচ্ছা আছে। দেখি কবে তা পূরণ হয়, বলেই কথা শেষ করলেন তরুণ মুখিয়া।