
The Truth of Bengal,Mou Basu: নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা সাদা তুলোর মতো মেঘ আর মাঝে মধ্যে ঝেঁপে বৃষ্টি ভালো মতোই জানান দিচ্ছে শরতের বার্তা। বাঙালির শ্রেষ্ঠ কার্নিভাল দুর্গাপুজো এখন হাজির দোরগোড়ায়। মায়ের আগমন বার্তায় প্রাণচঞ্চল আপামর বঙ্গবাসী। চিত্তাকর্ষক মনবাহারি থিমে মন জয় করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পুজো হাতিবাগান নবীন পল্লির পুজো কমিটি। এবছর আবোল তাবোলের প্রকাশের শতবর্ষ। আবার সুকুমার রায়ের প্রয়াণেরও শতবর্ষ। স্রষ্টা সুকুমার রায় ও তাঁর সৃষ্টি “আবোল তাবোল”-এর জন্ম-মৃত্যুর এক মৌলিক মেলবন্ধন এবছর। আবোল তাবোলের শতবর্ষে সুকুমার স্মরণে হাতিবাগান নবীন পল্লির। এবছর পুজোর সৃজনের দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী অনির্বাণ দাস। হাতিবাগান নবীন পল্লির এবছরের থিমের ট্যাগ লাইন-
” সুকুমার স্মরণে নবীন পল্লি হাতিবাগান
আবোল তাবোল অসম্ভব উতপটাং”
শিল্পী অনির্বাণ জানান, সুকুমার রায়ের লেখা আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার আজো জুড়ি মেলা ভার। খুব সহজ সরল রসিক ভঙ্গিতে তিনি বহু খটমট বিষয়কে জলবৎ তরলং ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। তাঁর নিজের কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, ‘যাহা আজগুবি, যাহা উদ্ভট, যাহা অসম্ভব তাহাদের লইয়াই’ লিখেছিলেন ‘খেয়াল রসের বই’। বইয়ের ভূমিকায় ‘কৈফিয়ত’-ও দিয়েছিলেন-‘সে রস যাঁহারা উপভোগ করিতে পারিবেন না, এ পুস্তক তাঁহাদের জন্য নহে।’ শারদোৎসবে তাই হাতিবাগান নবীন পল্লিতে থিমের মাধ্যমেই আমি সুকুমার রায়কে ও তাঁর অসাধারণ সৃষ্টি আবোল তাবোলকে স্মরণ করব।’
অনির্বাণ আরো জানান, ‘আবোল তাবোল প্রকাশের মাত্র ১০ দিন আগে ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন সুকুমার রায়। কিন্তু আজো যত রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড হয় সবকিছুরই সবচেয়ে যোগ্য ‘কৈফিয়ত’টি মেলে তাঁর ‘ভুলের ভবে অসম্ভবের ছন্দেতে।’ আজো তাঁর করে যাওয়া প্রশ্ন, ‘নেড়া বেলতলায় যায় ক’বার?’তারই উত্তর খুঁজে চলেছি আমরা। আজো কোনও গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গিয়ে রাতে আয়নায় নিজের মুখ দেখলে ‘আলোয় ঢাকা অন্ধকার’ চোখে পড়ে।’ পাগলা দাশুর ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘বঙ্গসাহিত্যে ব্যঙ্গরসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়েছে। কিন্তু সুকুমারের অজস্র হাস্যোচ্ছ্বাসের বিশেষত্ব তাঁর প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণীর রচনা দেখা যায় না।’ বাঙালির প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের উক্তির পর আর কিছুই বলার থাকে না। তবু আজো আবোল তাবোল পড়তে বসলে আমাদের বুক কেঁপে ওঠে। কেন না একশো বছর আগের লেখাতেও আজও খুঁজে পাওয়া যায় সমকালীনতা। সেখানেই সুকুমারের অমরত্ব।’
গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজোর মতোই আবোল তাবোলের পংক্তি উল্লেখ করে তাই হাতিবাগান নবীন পল্লির সুকুমার স্মরণ-
“যে সব লোকে পদ্য লেখে,
তাদের ধ’রে খাঁচায় রেখে,
কানের কাছে নানান্ সুরে,
নামতা শোনায় একশো উড়ে,
সামনে রেখে মুদীর খাতা
হিসাব কষায় একুশ পাতা।।”