দেশ

কর্মস্থলে ঊর্ধ্বতনের ভর্ত্সনা ফৌজদারি অপরাধ নয়: সুপ্রিম কোর্ট

Reprimanding superiors at work is not a criminal offense: Supreme Court

Truth Of Bengal: কর্মস্থলে ঊর্ধ্বতনের ভর্ত্সনা বা তিরস্কারকে “ইচ্ছাকৃত অপমান” বলে গণ্য করা যাবে না এবং এ কারণে ফৌজদারি মামলা করা উচিত নয়। এমনটাই রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে, এ ধরনের মামলাগুলোর অনুমোদন দিলে তা পুরো শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবেশকে বিপর্যস্ত করতে পারে, যা একটি কর্মস্থলের জন্য অপরিহার্য।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল ও সন্দীপ মেহতা সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জানিয়েছে, কেবলমাত্র রূঢ় আচরণ, অসভ্যতা বা অভদ্রতা একা অপরাধ হিসাবে গণ্য হতে পারে না। আইপিসির ৫০৪ ধারার অধীনে “ইচ্ছাকৃত অপমান” বলে তা গণ্য হতে হলে সেই অপমানের উদ্দেশ্য অবশ্যই শান্তি বিনষ্ট করার মতো হতে হবে।

আইপিসির ৫০৪ ধারা অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃত অপমান যদি শান্তিভঙ্গের উদ্দেশ্যে করা হয়, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার সর্বোচ্চ সাজা দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। তবে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এটি পরিবর্তিত হয়ে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৩৫২ ধারার অধীনে এসেছে।

সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেয় ২০২২ সালের একটি মামলার শুনানির পর, যেখানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ পার্সনস উইথ ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅ্যাবিলিটিজ-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের বিরুদ্ধে একজন সহকারী অধ্যাপককে অপমান করার অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগকারীর দাবি ছিল, তিনি পরিচালকের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করায় পরিচালক তাকে অন্য কর্মীদের সামনে কঠোর ভাষায় ভর্ত্সনা করেন। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটিতে পর্যাপ্ত পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (PPE) কিট সরবরাহের ব্যর্থতার অভিযোগও ওঠে, যা কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করেছিল।

শীর্ষ আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায়, চার্জশিট এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, অভিযোগের ভিত্তি মূলত অনুমাননির্ভর। এগুলো কোনোভাবেই আইপিসির ২৬৯ (অসাবধানতাবশত সংক্রামক রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা) এবং ২৭০ (ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাণঘাতী রোগ ছড়ানো) ধারার আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায় না।

আদালত বলেছে, “একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কর্মস্থলে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অধস্তনদের সতর্ক করার অধিকার রয়েছে। তাই, এমন পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতনের ভর্ত্সনাকে ‘ইচ্ছাকৃত অপমান’ বলে বিবেচনা করা যায় না।”

ফেব্রুয়ারি ১০ তারিখে দেওয়া এই রায়ে আদালত আরও জানিয়েছে, “একজন কর্মকর্তার জন্য এটি যৌক্তিক প্রত্যাশা যে, তার অধস্তনরা আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন।”

Related Articles