চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত! ক্যান্সার রোধকারী প্রাকৃতিক উপাদান আবিস্কার বিজ্ঞানীদের
New horizons in medical science! Scientists discover natural ingredients that prevent cancer

Truth Of Bengal: একটি নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এমন একটি প্রাকৃতিক যৌগ চিহ্নিত করেছেন, যা ক্যান্সার ও মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS)-এর মতো স্নায়ুবিক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সালফিউরেটিন (Sulfuretin) নামের এই উদ্ভিদজাত ফ্ল্যাভোনয়েড বিশেষ একটি এনজাইমকে দমন করতে পারে, যা ক্যান্সারের অগ্রগতি ও স্নায়ুর ক্ষতির সঙ্গে জড়িত।
গবেষণাটি সম্প্রতি Journal of Biological Chemistry-তে প্রকাশিত হয়েছে এবং SciTechDaily-তে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
সালফিউরেটিন কীভাবে কাজ করে?
বিজ্ঞানীদের মতে, সালফিউরেটিন CEMIP (Cell Migration-Inducing and Hyaluronan-Binding Protein) নামে এক এনজাইমকে প্রতিহত করতে পারে। এই এনজাইম স্বাভাবিক অবস্থায় হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ভেঙে ফেলে, যা শরীরের বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যখন এটি বেশি মাত্রায় ভেঙে যায়, তখন দুটি বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়:
- স্নায়ুর ক্ষতি – CEMIP মায়েলিন পুনর্গঠনে বাধা দেয়, যা MS, স্ট্রোক, ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি, ডিমেনশিয়া এবং সেরিব্রাল পালসির মতো রোগের জন্য দায়ী।
- ক্যান্সারের অগ্রগতি – এই এনজাইম টিউমার কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটায়, ফলে ক্যান্সার দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির (OHSU) গবেষক ল্যারি শারম্যান (Larry Sherman, Ph.D.) বলেন, “আমরা এমন একটি প্রাকৃতিক যৌগ খুঁজে পেয়েছি, যা এই ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করতে পারে। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।”
সালফিউরেটিনের সম্ভাব্য চিকিৎসা ব্যবহার
গবেষকরা মনে করছেন, CEMIP এনজাইম কেবল MS ও ক্যান্সারের সঙ্গেই নয়, বরং অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণজনিত মস্তিষ্কের ক্ষতি, ত্বকের সংক্রমণ এবং আলঝেইমার রোগের সঙ্গেও জড়িত।
এ কারণে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সালফিউরেটিন একাধিক রোগের চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে এবং এটি নিউরোডিজেনারেটিভ (স্নায়ুবিক অবক্ষয়জনিত) ও প্রদাহজনিত রোগের জন্য একটি সম্ভাব্য ওষুধ হতে পারে।
এই গবেষণার পেছনে রয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব পোর্টল্যান্ডের সাবেক রসায়ন অধ্যাপক অ্যাঞ্জেলা হফম্যান (Angela Hoffman, Ph.D.)। তিনি ও তাঁর শিক্ষার্থীরা বহু বছর ধরে উদ্ভিদজাত বিভিন্ন যৌগ নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন।
গবেষক অ্যালেক পিটার্স (Alec Peters) নিশ্চিত করেছেন যে সালফিউরেটিন টিউমার কোষ ও মায়েলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এখন বিজ্ঞানীরা সালফিউরেটিনের কার্যকারিতা প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছেন। যদি এটি সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এটি মানবদেহে নতুন ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত
একটি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ক্যান্সার ও স্নায়ুবিক রোগের চিকিৎসার সম্ভাবনা বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের জন্য এক বড় আশার আলো। গবেষণার পরবর্তী ধাপগুলো সফল হলে, সালফিউরেটিন একাধিক প্রাণঘাতী রোগের জন্য কার্যকর একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে উঠতে পারে।