রান্নাঘর

গঙ্গার ধারে বসে বৈঠকী আড্ডা আর কন্টিনেন্টাল ফুড সাথে ‘সানসেট ট্রাভেল কাফে’র আকর্ষণ

The attraction of the 'Sunset Travel Cafe' with sit-down chats and continental food

The Truth of Bengal,সুমন ভট্টাচার্য: কোনও বিষণ্ণ মন খারাপ করা বিকেলে যদি ‘একলা আকাশে’ এই গানটির কথা মনে পড়ে তাহলে সোদপুরের সুখচরে’নীহার অন দ্য গ্যাঞ্জেস’-এ ‘সানসেট ট্রাভেল কাফে’-তে চলে যেতেই পারেন। ভাগ্যে থাকলে হয়তো দেখবেন এই গানের গীতিকার এবং গায়ক সন্দীপন রায় নিজেই গঙ্গার দিকে তাকিয়ে গানটা গাইছেন। আর এইরকম গান শুনলে আর যা যা লাগে, যেমন ভারতের সেরা সব চা-বাগানের থেকে বাছাই করা চা কিংবা মাছের রকমারি পদ আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকবে। মাছ ছাড়াও এই ‘সানসেট ট্রাভেল কাফে’- তে চমৎকার সব কন্টিনেন্টাল ডিশ অবশ্যই পাওয়া যাবে। আর এইসব খাওয়া- দাওয়া, গান শোনার ফাঁকে কাফের ইতিউতিতে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন অন্য ট্রাভেল ডেস্টিনেশনের বুকিংও কেউ সেরে ফেলতে পারেন। আসলে গঙ্গার তীরে বাঙালিয়ানার ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাগানবাড়িটি শহরের কোলাহল এবং যাবতীয় কিছু থেকে নিরিবিলিতে চলে যাওয়ার চমৎকার ঠিকানা। এমনিতে ‘নীহার অন দ্য গ্যাঞ্জেস’ আসলে ছুটি কাটাবার ঠিকানা। বিশাল বাগানবাড়ির নীচের তলায় তিনটি ইউনিটে পাঁচটি ঘর রয়েছে গঙ্গার তীরে বসে ছুটি কাটানোর জন্য। আর রয়েছে চমৎকার একটি মঞ্চ এবং একেবারে গঙ্গার গা ঘেঁষে একটি কাফে টেবিল।

এই সবকিছু মিলিয়ে উইকেন্ড ছুটি কাটানোর যে ধরনের ঠিকানাকে আজকাল বাঙালি খোঁজ করে তার একটা ‘এক ছাদের  তলায় সবকিছু’-র মতো সমাধান রয়েছে। বন্ধুবান্ধবরা মিলে উইকেন্ড কাটাতে চাইলে বা শহরের বাইরে কোনও গেট টুগেদারের আয়োজন করতে হলে ‘নীহার অন দ্য গ্যাঞ্জেস’ আইডিয়াল ডেস্টিনেশন। সেই ‘নীহার অন দ্য গ্যাঞ্জেস’কে সকলের কাছে আর একটু আকর্ষণীয়, আরও বেশি লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই টুরিস্ট ডেস্টিনেশনের দুই কর্ণধার, দিয়ালী বিশ্বাস আর সরোজিৎ রায় শুরু করেছেন ‘সানসেট ট্রাভেল কাফে’। যদি কেউ ‘নীহার অন দ্য গ্যাঞ্জেস’-এ নাও থাকেন তাহলেও বিকেল চারটে থেকে সন্ধে পর্যন্ত তাঁদের জন্য খোলা রয়েছে দোতলায় প্রায় ২৫০০ বর্গফুটের ছড়ানো ছিটানো বিশাল কাফেটি। একদিকে যেমন চমৎকার সব পদ আর সেরা সব চায়ের সম্ভার থেকে বেছে নেওয়ার প্রলোভন, অন্যদিকে তেমনই গঙ্গা দেখতে দেখতে বৈঠকী মেজাজে আড্ডা দেওয়ার আমন্ত্রণ।

অর্থাৎ উনবিংশ শতাব্দীতে উত্তর কলকাতার যে বনেদি বড়লোক পরিবার হাতিবাগানের অট্টালিকা ছেড়ে গঙ্গার ধারের এই বাগানবাড়িতে আসর জমাতে আসতেন, তাঁদের সেই সময়ের মেজাজ এবং আমেজ এখনও কেউ পাবেন ‘নীহার অন দ্য গ্যাঞ্জেস’-এর ‘সানসেট ট্রাভেল কাফে’তে গেলে। একদিকে বাঙালির বাবু কালচারের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা আসবাব কিংবা গঙ্গার তীর থেকে বয়ে আসা মলয় সুশীতল বাতাস যেমন আপনাকে মনে করাবে, ‘মেজাজটাই তো আসল রাজা, আমি রাজা নই’ তেমনই উনবিংশ শতকের ওই সময়টা বাঙালি অভিজাত ইউরোপীয় মেজাজের যেসব খাবারদাবার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে ভালবাসতেন সেইসবই আবার আপনার সামনের প্লেটে অপেক্ষা করবে। ‘নীহার অন দ্য গ্যাঞ্জেস’-এর ‘সানসেট ট্রাভেল কাফে’-তে আমার অবশ্য পছন্দের সানসেট প্ল্যাটার। যেখানে ডিমের ডেভিল থেকে মাছের নানা পদ সাজানো থাকে স্যালাড আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই সহযোগে। কিন্তু কারও যদি অন্য কোনও কন্টিনেন্টাল ডিশ পছন্দের হয়, তাহলে তাও পাওয়া যেতে পারে এই কাফেতে।

Related Articles