রান্নাঘর

তুপর্ণর থেকে চেনা কলকাতার প্রাচীনতম চিনা রেস্তোরাঁ ‘ইউ চিউ’

Eau Chew Chinese restaurant in kolkata

The Truth of Bengal: তুপর্ণর থেকে চেনা কলকাতার প্রাচীনতম চিনা রেস্তোরাঁ ইউ চিউ অর্ডার দেওয়ার জন্য সেরা। সান ইয়াৎ সেন কী খেতে ভালবাসতেন, জানিস? বিকেলবেলা এইরকম গুগলি দেওয়ার অভ্যাসটা ঋতুপর্ণ ঘোষের পুরোনো। তাই আমি চমকালেও ঘাবড়ে গেলাম না। কিন্তু কমিউনিস্ট শাসনের আগে চিনের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় নেতা কী খেতে ভালবাসতেন, তা জানার উপায় কী? নতুন কোনও বই ঋতুদা সংগ্রহ করেছে নাকি? এমন একটা হাসল এবং তারপরে যে কথাটা বলল, সেইটা স্টাম্প ছিটকে দেওয়ার মতো। ওরে অশিক্ষিত! একেবারে হাতেনাতে টেস্ট করে দেখতে হয়, সান ইয়াৎ সেন কী খেতে ভালবাসতেন, জানিস না! সান ইয়াৎ সেন-এর অনুগামীরা একসময় কলকাতায় পালিয়ে চলে এসেছিলেন। এখানে অনেক ব্যবসা খুলেছিলেন!

ঋতুদার কথায় বুঝলাম, আজ নিশ্চয়ই নতুন কোনও রেস্তোরাঁয় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। যাঁরা কখনও তাঁর আমন্ত্রণে সকালে ইন্দ্রাণী পার্কের বাড়িতে ফুলকো লুচি আর সাদা আলুর তরকারির সঙ্গে হরেকরকম আচার দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরেছেন, তাঁরাই জানেন এই সেলিব্রিটি পরিচালক কতটা খাদ্যরসিকও ছিলেন। কিন্তু কোন চিনা রেস্তোরাঁ এবার ঋতুপর্ণ ঘোষের মনে ধরেছে?

চাঁদনিতে যেখানে অনেক খবরের কাগজের অফিস, এবং যে রাস্তার দু-ধারেই ঋতুপর্ণ ঘোষের স্বচ্ছন্দ বিচরণ ছিল, তার থেকে ১০০ মিটার মতো এগিয়ে গেলেই গণেশ অ্যাভিনিউয়ের শুরু। গণেশ অ্যাভিনিউ ধরে দু-পা বিবাদী বাগের দিকে এগোলেই বাঁ হাতে ইউ চিউ রেস্তোরাঁ। একটা পেট্রোল পাম্পের ভিতর দিয়ে একটা জরাজীর্ণ বাড়ির দোতলায় লাগানো বোর্ড দেখে ঢুকে পড়তে হবে। বাড়ি অথবা ইন্টিরিয়র, কোনও কিছু দেখলেই যে রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে ভক্তি জন্মাবে না, তার নাম ইউ চিউ। কিন্তু ঋতুদার সঙ্গে এক সন্ধ্যায় প্রথম যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, অথেনটিক চাইনিজ কুইজিন-এর কলকাতায় সবচেয়ে প্রাচীনতম ঠিকানা গণেশ অ্যাভিনিউয়ের এই রেস্তোরাঁ, ইউ চিউ। হুয়াং পরিবার চার প্রজন্ম ধরে কলকাতায় এই রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন। এবং এখনও এই রেস্তোরাঁর সব রান্না পরিবারের সদস্যরা করেন, কোনও বাইরের রাঁধুনি নেই। সেই কারণেই বোধহয় চিনের মূল ভূখণ্ডের খাবারের মেজাজ, গন্ধ এত ধরে রাখতে পেরেছে ইউ চিউ।

রেস্তোরাঁর দরজা যখন সবে আবার সন্ধ্যায় খোলার বন্দোবস্ত হচ্ছে, তখন ইউ চিউ-তে যাওয়াটা একেবারে অন্যতম অভিজ্ঞতা হতে পারে। আর না হলে ফুড অ্যাপ তো আছেই। ইউ চিউয়ের খাবার একবার অর্ডার করে খেলে সেই স্বাদ ভোলা মুশকিল। বিশেষ করে যে-কোনও গ্রেভি ডিশের। আমার নিজের ফেভারিট সেজোয়ান যে-কোনও পদ, সেটা ফ্রায়েড রাইস হোক বা সেজোয়ান ফিশ। অবশ্য মান্দারিন ফিশও খুব ভাল, খেতে খেতে চোখ বুজলে মনে হতে পারে ওই মশলা, ওই গন্ধ সাংহাই ছাড়া আর কোথায় পেয়েছেন…. ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রথম দিন নিয়ে গিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, বেইজিংয়ে যেমন মনপসন্দ স্যুপ অর্ডার করলে সব নিয়ে এসে টেবিলেই ছোট উনুনে বানিয়ে দেওয়াটা রেওয়াজ ছিল, কলকাতার প্রাচীনতম চিনে রেস্তোরাঁ হিসেবে ইউ চিউও সেটাই অনুসরণ করত। একদম কাস্টমারের টেবিলে কাস্টমাইজড কুকিং। বিভিন্ন বিধিনিষেধে এখন সেইসব রীতিনীতি চলে গেলেও ইউ চিউয়ের সাপ হোক কিংবা চিংড়ির বিভিন্ন পল, হোয়াং হো অববাহিকার ওই মন কেমন করা স্বাদটা পাওয়া যাবেই। লকডাউনের এই পৃথিবীতে যাঁরা অর্ডার করে খাবার আনাবেন, তাঁদের জেনে রাখা ভাল ইউ চিউয়ের খাবার একটু মহার্ঘ। কিন্তু আবার একই সঙ্গে এটাও সত্যি যে প্রচুর পরিমাণে দেয়। তাই শেষ পর্যন্ত খরচ বেশি হচ্ছে বলে মনে হয় না। রবিবারে অর্ডার করার জন্য তাই ইউ চিউকে ভাবা যেতেই পারে।

Related Articles