
Truth Of Bengal: বাবুল চট্টোপাধ্যায়: কথাটা দায়িত্ব নিয়ে বলছি– এ সমাজ অজ্ঞতায় ভুখা। জানি না এটা বলার পর কতজন রে রে করে তেড়ে আসবেন। হয়তো অনেকেই বলবেন সমাজ বহু মানুষকে নিয়ে গঠিত। আমরা সকলে সমাজবদ্ধ মানুষ। আর ভাল-মন্দ সব মিশিয়ে সমাজ গড়ে উঠে। তাই বলে গোটা সমাজকে অজ্ঞতায় বিচার করার আমি কোন মহাজন? মানলাম সে কথা।
তবে কী জানেন, এখনকার সময়ে আমরা যা দেখছি সেখানে খারাপ বা মন্দ সব জেনেও কোনও কিছুতেই ঠিক বিচার করতে পারছি না। কেন পারছি না তা অনেকেই জানি না। অনেকেই স্রোতের সঙ্গে চলছি। ভাল-মন্দ সেন্স আমাদের হারিয়ে গিয়েছে। কোনটা ভাল বা কিসে ভাল আমরা তাই তো জানি না।
আবার কিসে মন্দ তাও আমাদের ঠিক জানা নেই। আমরা তো সবাই ‘চাই না হতে নববঙ্গের নবযুগের চালক’। তবুও কি আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারি? না, পারি না। তা হলে কি আমরা সেই অজ্ঞতায় ভুখা রইলাম না? প্রশ্নটা তো থেকেই গেল।
এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে আমরা খুব নিরাপদে আছি বা আমরা খুব ভাল আছি। আমরা জাস্ট বেঁচে আছি। কী ভাবে বেঁচে আছি তাও আমাদের অজানা। এখানে বড় ছোটকে মারে। খুব ভালভাবে মারে। আর একদল জেনে বুঝে মরে।
কারণ তাদের নাকি কিছু করার নেই। সত্যিই কি তাই? আমাদের শিরদাঁড়াটা কোথায় গেল! আমরা কেনই বা মরে মরে বাঁচব বলতে পারেন? একদল মানুষ খুব ভুলভাল কাজ করছে। আর এভাবেই তারা সমাজ চালাচ্ছে। আর বাকিরা ভয়ে কাবু। কিছু করতে পারছে না। মাথায় বিরাট হাত আছে।
সুতরাং, আপনি জীবনে খুব কালো হলেও বেশ ভাল। কেউ আপনার দিকে আঙুল তুলে কথা বলতে পারবে না। আপনি বুক ফুলিয়ে চলা ফেরা করতে পারবেন। আর এখানেই আমাদের শিরদাঁড়ার প্রশ্ন। হয়তো আমরা একা পারবো না, কিন্তু আমরা সমবেত হলে তো সেই কাজ যা অনায়াসেই করতে পারি। সমবেত হলে আপনাকে রোখে কে। আমাদের মন তখন মন্দের বিরুদ্ধে সাড়া দেবে। কিন্তু আমাদের সমবেত হওয়ার লোক আজ বড় অভাব। আমরা ভাবি অনেক কিন্তু করি কম। আমাদের বলা আর করার মধ্যে বিস্তর ফারাক। সুতরাং আমরা অজ্ঞ। আসলে আমরা জানিই না কি করলে ভাল ও সুস্থ থাকবো। আর তার জন্যে লাগে কতখানি সাহস। ভুল বললাম। লাগে অদম্য সাহস।
সাহস আমাদের কম বেশি সকলেরই আছে। মানে বারুদ আছে সবার। কিন্তু তা জ্বালানোর লোকের বড় অভাব। কে তাকে জ্বালাবে। আর কী ভাবেই বা তা জ্বালাবে। কেন জ্বালানো যায় না বলুন তো? কারণ আমরা কোথায় হারিয়ে গিয়েছি আমাদের ইচ্ছেগুলি থেকে। সব কিছুতেই আমাদের হারিয়ে গিয়েছে আমাদের মন।
এক কথায় এক পচনশীল পদার্থে পরিণত হয়েছে আমাদের মন। তার ভাব তার ভাষা কর্মকাণ্ড বড়ই গোলমেলে। এমন কোনও মানুষ নেই যে এই প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে। জানতে হবে আমাদের যা ভালবাসার ঘর তা আমাদের বিবেকের নয় পর। আমাদের লড়াই কোথায় গেলো! আমাদের তাকে ছাড়লে তো চলবে না। যে করেই হোক যেমন করেই হোক আমাদের লড়াই ছাড়লে চলবে না। আসলে আমরা জানিই না আমরা কি করছি আর কেনই বা করছি।
এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে আমাদের আর কিছু করার নেই। জানবেন আমরা যা পারি তা আমাদের ভেতরের শক্তি। আমরা তাকে জাগালাম কই! একবার জাগান না দেখবেন কোনও কিছু আপনার অসাধ্য নয়।
আমাদের ভাল চিন্তাকে কোনও ভাবেই মেরে ফেললে চলবে না। ভেতরের শক্তি হল সেই শক্তি যা আপনাকে উদ্দীপনা জোগায়। কিন্তু সেখানে আমাদের নীরব থাকলে চলবে না। কোনও ভাবেই চলবে না। প্রতিবাদ করতে হবে। হ্যাঁ, অন্যায়ের প্রতিবাদ।
আপনি ভাবছেন প্রতিবাদ করতে গিয়ে মরি আরকি। কী সমাজ ব্যবস্থা পড়েছে! এখানে অন্যায় ভুরি ভুরি হচ্ছে। ভুল বললাম। অন্যায় প্রতি মুহূর্তে হচ্ছে। আর সেই প্রতিবাদে নিজে শরিক হয়ে মরি আর কি! কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন এই করতে করতে আমরা কোথায় গিয়ে ঠেকব!
আমাদের সমাজ আর সেই সমাজের মানুষগুলি কেমন দিশাহারা! কিন্তু তেমনটা হলে তো চলবে না। ভয় পেলে চলবে না। যেটা দেখার আমরা নিজের কাছে নিজে না হেরে যাই! আর তা হলে সব শেষ। আমাদের উত্তর প্রজন্ম কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলতে পারেন? আমরা খুব সহজে বশ্যতার শিকার হয়ে পড়ছি।
না, এমনটা হলে চলবে না। এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে দশজন আপনাকে যা বলছে তা দশজন বলছে বলেই ঠিক। এমনটা তো হতেই পারে যে ওই দশজনই তোষামোদ বা স্রোতে গা ভাসিয়ে চলা লোক। তবে সেই সমাজ অজ্ঞতায় চললো না? এর থেকে বের হাওয়ার একটাই রাস্তা। তা হল আপনার ইচ্ছা, নিষ্ঠা, সততা, সাহস সঙ্গে সচেতনতা। কি, মানবেন তো?