সম্পাদকীয়

মন্দের রাহুগ্রাসে আমরা

Society is made of people, we are under the influence of Rahu

Truth of Bengal, বাবুল চট্টোপাধ্যায়ঃ বলছি সমাজ নিয়ে। সমাজ মানুষের তৈরি। আমরা রাহুগ্রাসে রয়েছি। মন্দের রাহুগ্রাসে। মনেহয় মনুষ্যত্ব প্রায় শেষ। পুড়ে শেষ। ছাই! তাও মানছি এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে সব শেষ। বড়ছোটকে মারে এটা পুরনো কথা। মাৎসায়ন। সরি, দুর্বলকে অত্যাচার করেই সবলতা বাড়ে। মানে, সবলের অত্যাচারেই দুর্বল মরে। ব্যস, সবল সফল। এখানে সব দিক থেকে সবলতার কথা বলছি। মানে ঠিকমতো সন্ধ্যা নেমেছে ভালই। ‘ভাল’ শব্দটি আর কতকাল সুস্থ রাখা যাবে! কথায় আছে–নিজে ভাল তো জগৎ ভাল।

ভুল। হ্যাঁ, এখনকার হিসাবে ভুল। কাঁটাতারে আমরা। অনেকটা চেপে আছি। সুতরাং পিষে আছি। এক পুরুষ যদি উপরি উপার্জন করে তো অন্য পুরুষ সুখের ঘরে। নইলে নয়-দেখো বাপের না থাকলে কী হয়! আবার বেশি থাকলেও ভয়! কী হয়, কী হয়! মনেহয় অন্তত উত্তর পুরুষ ঠিকমতো ‘মানুষ’ হবে না। তাই মনে করি ঠিকমতো দারিদ্র্য যে দেখেনি সে কিছুই দেখেনি। দেখার চোখ দিয়ে দেখুন সব সাফল্যের পেছনে রয়েছে অপরিসীম অভাব এবং সেইসূত্রে চরম পরিশ্রম।

বোকা আর চালক বোঝা যায় কার কত ডিসিপ্লিন তা দেখে। আপনি যাকে আপনি দুর্বল মনে করছেন দেখা গেল সে হয়তো সাফল্য পেল গগনচুম্বী। আর যার থেকে আশা করেছেন সে দেখবেন হয়তো হতাশায় হাবুডুবু। কেন জানেন? কারণটা হল সে সব কিছু সময়ে ও সিস্টেমে করেছে। যে এটা যত বেশি মানবে এবং করবে সে তত বেশি  দ্রুত সাফল্য পাবে। সাফল্যের কোনও শর্টকাট নেই। কিন্তু ক্লিন ডিসিপ্লিন আমরা তেমন আর দেখতে পায় না। কারণ অনেক আছে।

যার অন্য অনেক প্রকারে না গিয়ে শুধু এটুকু বলতে পারি গৃহের পরিবেশের কথা। গৃহের পরিবেশ যদি শাসনে ছোটবেলা থেকে যথেষ্ট হয় তবে আর বড় বয়সে আর তেমন মন্দের রাহুগ্রাসে পড়তে হবে না। আর যদি পড়তেও হয় তবে তা কাটিয়ে উঠতে খুব দ্রুতই সক্ষম হবে। আর এই পারার নামই জীবন।

কিন্তু কী যে হচ্ছে এখানে আমরা কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। এখন খবর প্রায় দেখা যাচ্ছে ধর্ষণ ও পরে হত্যা। কিছুদিন আগেই ঘটে গেল কৃষ্ণনগর-কাণ্ড। একটি অল্প বয়সী মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কারণ প্রেম সংক্রান্ত। ঘটনায় রাহুল নামে একটি ছেলে অ্যারেস্ট হয়েছে। তদন্ত যত এগোচ্ছে জানা যাচ্ছে অনেক কথা। অনেক অনেক কথা। বুঝতে অসুবিধা হয় এমন একটি একটি হাই প্রোফাইল জায়গায় এমন ঘটনা হল কী করে!

কেনই বা সে ওখানেইমৃত্যুর পথ বেছে নিল। থানা পাঁচশো মিটারের মধ্যে হলেও কী করে এমন কাণ্ড হল! কেন পুজো মণ্ডপের চৌহদ্দির মধ্যে এমন ঘটনা ঘটল! এ রকম হাজার প্রশ্ন চলে আসে। কিন্তু জানা যায় যেমনটি ভাবা হয়েছিল ঠিক তেমন ঘটনা নয়। সুইসাইড নোট অন্য কথা বলে। সেখানে মেয়েটি তার মৃত্যুর জন্যে নিজে ছাড়া অন্য কাউকে দায়ী করেনি। আবার তার ভয়েস মেসেজে একই কথা পাওয়া যায়।

আবার এও জানা যায় যে তার ‘উড বি’-কে ‘স্বামী’ নামেই ফোনে সেভ করে। এও জানা যায় যে ছেলেটি সেই রাতে তার নিজের বাড়িয়েই ঘুমায়। তবে কি এই প্রেমে অন্য কেউ! মানে গন্ধ সেই ত্রিকোণ প্রেমের। পুলিশ তদন্ত করছে। অন্যদিকে মেয়েটির বাড়ি থেকে বলছে, তাদের মেয়েযথেষ্ট সাহসী। আত্মহত্যা সে করতেই পারে না। আরও দাবি করছে যে, তাদের মেয়ের মৃত্যুর জন্যে রাহুলই দায়ী।

রাহুলের পরিবার দাবি করে, তাদের ছেলে এমন কাণ্ড কিছুতেই করতে পারে না। রাহুলঅ্যারেস্ট হাওয়ার পরে তার ওপরে আসা সমস্ত দোষ নির্বিকারে অস্বীকার করে। মেয়েটির পরিবার চাইছে সিবিআই তদন্ত। আবার এও জানা যায় ছেলেটির আরএকটি বিবাহ আছে। এই প্রবন্ধ লেখা অবধি এতটাই জানা যায়। তদন্ত চলছে। কোনদিকে যাবে আমরা কেউ জানি না।

এরকম ঘটনা আরও বহু আছে। আর ধর্ষণ খুনের ঘটনা তো আমরা আকছার দেখছি। আমাদের মধ্যে শিহরণ তুলেছিল আরজি কর-এর ঘটনা। কী নারকীয় ঘটনা! গোটা রাজ্য, গোটা দেশ, গোটা পৃথিবী তোলপাড় হচ্ছে এই নিয়ে। হাওয়ার-ই কথা। কিন্তু তাও জাস্টিস মেলা ভার। আমাদের সুপ্রিমকোর্টের ওপর পুরো ভরসা আছে। তবে কী জানেন সামগ্রিক ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার বলেই এর মধ্যে কোনও রাজনীতি আমাদের সহ্য হচ্ছে না।

আমরা পুরোপুরি হতাশ হচ্ছি এই নিন্দনীয় ঘটনায়। আমাদের বিশ্বাস কোথায় যেন তলানিতে ঠেকেছে। আমরা ভুলেই গিয়েছি আমরা কোন মূল্যবোধে বেঁচে থাকবো! আরজি কর-এর ঘটনা আমাদের চোখ কান কিছুই জাগায়নি। কারণ তার পর থেকে আরও অনেক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটে চলেছে। অনেকেই বাইরের রাজ্যেরসঙ্গে আমাদের রাজ্যের এই ধরনের নারকীয় ঘটনা কম হওয়াতে আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন। কিন্তু সেটা কি ঠিক? এই ধরনের কোনও ঘটনাই কি আমার সংস্কৃতির আদর্শ বাহক? হয়তো বিবেক আমাদের এর সঠিক উত্তর দিতে পারবে।

সুতরাং ভাবনার সময় এসেছে। আমরা কোথায় আছি, কেমনভাবে বেঁচে আছি। এমনটা হওয়ায় কি-ই বা কারণ! মনে হয়, আমাদের গৃহের পরিবেশ খুব ছোটবেলা থেকে বেশ পলকা। আমার কোথায় যেন সঠিক শিক্ষা দিতে পারছি না আমাদের সন্তানদের। আমরা খুব ভাল নেই।  তবে আমদের ভাল কিভাবে থাকতে হবে এখন এটাই আমাদের কাছে মস্ত চ্যালেঞ্জ। আমার মনে হয় সিস্টেমে থাকতে হবে।

যেখানে যা হচ্ছে তা ভাল হচ্ছে না– আপনি আমি তা ভালভাবেই জানি। কিন্তু আপনার একার পক্ষে চেঞ্জ করা সম্ভব নয়। আবার সত্যিটা জেনেও স্রোতে গা ভাসানো কষ্টকর। তবে কী করা যাবে! মেনে নেওয়া বিবেক দংশন। আমার তো মনে হয়, প্রতিবাদ করা কোনও অন্যায় নয়। তবে প্রতিবাদ হতে হবে একেবারে স্বচ্ছ। কোনওকাঙ্ক্ষিতস্বার্থ সেখানে থাকলে চলবে না। কথা বলা বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের মৌলিক অধিকারে আছে। ভয় কোনওভাবেই পেলে চলবে না। আর ছোটবেলা থেকে এমন পরিবেশকে গুরুত্ব দিতে হবে যেখানে মানুষ হাওয়াটাই যেন প্রাধান্য পায়।

নিজেকে চিনতে শেখা, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস যেন টলে না যায়। বাকিটা ইশ্বর ঠিক করবেন। আপনার বিশ্বাস জোগাবে। ভাল করে ভেবে দেখুন, যদি কৃষ্ণনগরের মেয়েটি কনফিডেন্স থাকতো তবে তাকে অত সহজে আত্মহত্যা করতে হতো না। এমন কত আছে। পরীক্ষায় রেজাল্ট আশানুরূপ না হাওয়া থেকে শুরু করে চাকরি মনোমতো না হাওয়া বা ছেলেমেয়েউচ্ছন্নে যাওয়ার মতো কত হতাশা আমাদের আত্মহত্যার রাহুগ্রাসে নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটাই কথা বলব, জীবনে জাগান বিশ্বাসের এম, জানবেন মন্দের রাহুগ্রাস ভঙ্গুর সিস্টেম।