সম্পাদকীয়

রাশিয়ার ইউক্রেনের উপর নিউক্লিয়ার মিসাইল নিক্ষেপন ও পুতিনের ভারত সফরের ঘোষণা

Russia launches nuclear missiles on Ukraine and announces Putin's visit to India

Truth of Bengal,প্রবাল ব্যানার্জীঃ রাশিয়া তাদের মিসাইল ধ্বংসকারী সিস্টেম এস-৪০০ দ্বারা গত সপ্তাহে ইউক্রেনের তরফ থেকে নিক্ষিপ্ত আমেরিকান ৬টি দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রমকারি মিসাইলকে ও গ্রেট ব্রিটেনের পাঠানো স্টর্‌ম শ্যাডো মিসাইল ধ্বংস করে দেয়। ইউক্রেনেরে রাশিয়া আক্রমনের পড়ে সকল ইউক্রেনিয়ানবাসী ভীত হয়ে পড়ে রাশিয়ার পাল্টা আক্রমনের ভয়ে। রাশিয়াও ইউক্রেন বর্ডারে তাদের নিউক্লিয়ার বোমা বহনকারী মিসাইল সাজিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে প্রত্তুত্যরের। আমেরিকা ও ইউরপের সকল দেশ থেকে তাদের সকল ইউক্রেনের রাজধানী কিভে বসবাসকারী সরকারী কর্মচারীদের সতর্ক বার্তা পাঠিয়ে দেয়, নিশ্চিত নিরাপত্তায় আশ্রয় নেওয়ার জন্যও স্থানীয় খবরের উপর চোখ রাখার জন্য।

তাদেরকে জানানো হয় যেকোনো মুহূর্তে রাশিয়া কিভ শহরে বোমা বর্ষণ শুরু করতে পারে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনেস্কিও নিজের দেশবাসীকে সতর্ক করা শুরু করেন যে আমেরিকার সাধারণ নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় লাভের পর তারাও হয়ত আর আমেরিকার সাহায্য পাবে না। এমত অবস্থায় রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে অর্থের অভাবে তারা সম্ভবত হেরে যেতে পারে। আমেরিকায় ট্রাম্পের জয়লাভের পর রাশিয়াও অনুধাবন করতে সক্ষম হচ্ছে যে তারা এই দীর্ঘ মেয়েদি যুদ্ধে জয়লাভ করতে চলেছে।

তাই প্রেসিডেন্ট পুতিন আগের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে ও সেই সব দেশে বাণিজ্য সফর শুরু করতে চলেছে, যেখানে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে তিনি যেতে পারেননি। ভারতও সেই সব দেশের মধ্যে একটি দেশ। রাশিয়ার তরফ থেকে তারা প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফর ঘোষণা নিশ্চিত করে ফেলেছে। রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রক আশাবাদী পুতিনের ভারত সফর নিয়ে, কারণ তারা চায় ২০৩০ এর মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমান ১০০ বিলিয়ান ডলার পার করে যাক।

যার বর্তমান পরিমান ৬০-৬৫ বিলিয়ান ডলারের মত। আর এই বানিজ্যিক লেনদেনের বৃদ্ধি দুই দেশের পারস্পরিক মুক্ত বানিজ্য নীতি ছারা কখনই সম্ভব নয়। এই নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা আমি আমার আগের প্রতিবেদনে করেছি। ভারত রাশিয়ার দ্বি-পাক্ষিক আলচোনার মুল বিষয়বস্তু হবে কোন কোন দ্রব্য রাশিয়া ভারতে বিনা শুল্কে পাঠাতে পারবে ও কোন কোন দ্রব্য ভারত রাশিয়াতে বিনা শুল্কে পাঠাতে পারবে। বর্তমানের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ৬০-৬৫ বিলিয়ান ডলার হলেও তার মধ্যে ভারতের গুরত্বপূর্ণ আমদানিক্রিত দ্রব্য হল অপরিশোধিত পেট্রলিয়াম তেল।

পুতিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভন ভারতের সাথে এই দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে নিতে চায় কারণ তারা জানে, ট্রাম্প একবার প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করে দিলে সে চেষ্টা করবে বিশ্বের দরবারে আমেরিকাকে বৃহত্তম পেট্রলিয়াম রপ্তানিকারক রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরার।  ট্রাম্প নিজের পূর্ববর্তী সময়কালেও (২০১৭-২০২১) এই একই নীতি গ্রহন করেছিলেন, যার ফলে বিশ্ব-বাজারে তেলের দাম অনেকটাই কমেও ছিল।

আমেরিকা আর রাশিয়ার এই তেল রপ্তানির নীতির ফলে সুবিধা ভারত সহ সেই সকল দেশ পাবে যারা আমেরিকা অথবা রাশিয়ার থেকে আরো কম দামে তেল সংগ্রহ করতে পারবে।  আর এর ফল স্বরূপ ভারত আর্থিক দিক থেকে লাভবান হবে বলেই আশা করা যায়। ট্রাম্প রাশিয়াকে আর নতুন করে কোন বানিজ্যিক বাধা নিষেধ আরোপ করবে না কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের ব্যাবসায়ে প্রতিযোগী হিসাবে নিজেদের নাম লেখাবে। এমনকি চিন হতে আমদানিকৃত দ্রব্য গোটা পৃথিবীর কাছে আরও দামি হয়ে উঠবে কারণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র চিনের উৎপাদিত দ্রব্যের উপর ৪০%-৬০% শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।

এতে লাভ ভারতীয় সংস্থা গুলির হবে, তারা আরও বেশি মাত্রায় সস্তা পন্য বিদেশের বাজারে রফতানি করতে সক্ষম হবে। এই সবের মাঝে ২১শে নভেম্বর, পুতিন ইউক্রেনের কিভ শহরে ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল নিক্ষেপন করলেন। যুদ্ধের ইতিহাসে এই প্রথম কোন দেশ অপর কোন দেশকে পারমাণবিক বোমা বহনকারী আইসিবিএম মিসাইল নিক্ষপন করল। এতদিন যাবত আইসিবিএম মিসাইল শুধুমাত্র পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্যই ব্যবহৃত হত। এই প্রথম কোন দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে আইসিবিএম মিসাই নিক্ষেপন করল।

যদিও মিসাইলে পারমানবিক বোমার ওয়ার হেড লাগানো ছিল না। ভালো কথায় বলতে গেলে রাশিয়া আদপেই এই মিসাইল নিক্ষেপন ইউক্রেনকে ভয় দেখানোর জন্য করেনি ; তারা  আমেরিকা ও অন্যান্য ইউরপিয়ান দেশ গুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চেয়েছে তারা পারমানবিক যুদ্ধে কতটা সক্ষম। এবং ইউক্রেনের মত কেউ যেন আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা চিন্তাও না করে। তারা এই যুদ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করে অন্যান্য দেশের সাথে ব্যাবসা বানিজ্যে মনোনিবেশ করতে চায়।

Related Articles