
Truth of Bengal: বিপ্লব চৌধুরী: কথিত আছে একবার এক মা তাঁর মৃত সন্তানের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি নিয়ে গৌতম বুদ্ধের কাছে আসেন। তখন গৌতম বুদ্ধ সেই মাকে এক বাটি সর্ষে আনতে বলেন এমন পরিবার থেকে, যেখানে মৃত্যু প্রবেশ করেনি কোনওদিন। আশা করি এর পরের অংশটা আমাদের সবার জানা। ঠিক তেমনই মুশকিল এখন এমন একটি পরিবার খুঁজে বের করা যেখানে ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্টের অসুখ, ফ্যাটি লিভার, মানসিক অসুস্থতা কিংবা কিডনির সমস্যা নেই।
আর ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রান্তের সংখ্যাও দিন প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের আর্থিক অবস্থা বড়ই দুর্দশার। একেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, সন্তানের শিক্ষার খরচ, আর্থিক টানাপোড়েনে দিন গুজরান করতে হচ্ছে অনেককেই। এছাড়া আমাদের দেশে আকাশছোঁয়া ওষুধের দাম, ক্রমবর্ধমান ডাক্তারের পরামর্শ ফি থেকে শুরু করে, নানাবিধ মেডিক্যাল টেস্টের খরচ জোগাতে নাজেহাল সাধারণ মানুষ।
অত্যাবশ্যকীয় ১১টি ওষুধের দাম সারা দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে সম্প্রতি। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের ৫৭ শতাংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারের ঘাটতি রয়েছে, অর্থাৎ ১০৯২৬ জনের জন্য বরাদ্দ মাত্র একজন ডাক্তার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর কথায় যেটা থাকা উচিত ১০০০ জনের জন্য একজন ডাক্তার। গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার রুগ্ন পরিকাঠামো ও চিকিৎসকের অপ্রতুলতার জন্য সবাই এখন স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে শহরমুখী। ফলে সরকারি হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সেখানে শয্যা না পাওয়ার ঘটনা, রোগী ভর্তি না হওয়ার ঘটনা প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ নাগালের বাইরে। বাড়িতে অসুখ প্রবেশ করলে চিকিৎসা করাতে প্রতি মাসে ব্যক্তির আয়ের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ খরচ হয়ে যায়। ভারতে ৬২.৬ শতাংশ মানুষের আর্থিক সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে চিকিৎসার খরচ। চিকিৎসা খরচ এইরূপ মহার্ঘ হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর ভারতে ৩.৯ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের শিকার। ভারতে পরিবার প্রতি গড়ে ৩৬৩২ টাকা চিকিৎসা খাতে বাৎসরিক খরচ হয়। যদিও এমন অজস্র পরিবার আছে যাদের এক মাসের ওষুধ কিনতেই এই সমপরিমাণ টাকা কিংবা তার অধিক খরচ হয়ে যায়। আর হার্ট, কিডনির অসুখ হলে সেক্ষেত্রে খরচ আরও বেড়ে যায়। মারণব্যাধি ক্যান্সারের কারণে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় পরিবার।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০৪৫ সালের মধ্যে ভারতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হবে ১৩.৪ কোটি, উচ্চরক্তচাপ জনিত ২০.৭ কোটি এবং ২০২৫ সালের মধ্যে হার্ট রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩.৮ কোটি হবে। শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা ৬.৪ কোটি ও ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা ৩৮ লক্ষ হওয়ার অনুমান করা হচ্ছে। এইরূপ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো উদ্বেগের যে এখনও অধিকাংশ মানুষের স্বাস্থ্যবিমা নেই। আর যাদের আছে তারা স্বাস্থ্যবিমার ঊর্ধ্বমুখী প্রিমিয়ামের টাকা দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন।
বয়স্কদের স্বাস্থ্যবিমায় প্রিমিয়ামের পরিমাণ আরও অধিক। আর সব থেকে দুঃখের বিষয় হল ভারতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাজেটে মোট জিডিপি-র মাত্র ২ শতাংশ। অতএব কতটা যন্ত্রণাদায়ক সাধারণ মানুষের অবস্থা সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হাজার হাজার পরিবার প্রতি বছর স্বাস্থ্যজনিত খরচের বোঝা টানতে গিয়ে দারিদ্র্য রেখার নিচে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় অবিলম্বে স্বাস্থ্য কাঠামোর উন্নতি থেকে শুরু করে ওষুধের দাম ও স্বাস্থ্যবিমার খরচ কমানোর সরকারি উদ্যোগ জরুরি।