সম্পাদকীয়

কীর্তন সম্রাজ্ঞী রাধারানী দেবী

Kirtan Empress Radharani Devi

Truth Of Bengal: স্বপন কুমার দাস: মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের খুদু গোটা দেশের কাছে পরিচিত ছিলেন কীর্তন সম্রাজ্ঞী রাধারানী দেবী নামে। তিনি শুধু গান নয়, নাটক থিয়েটার সিনেমায় অভিনয় করেছেন আবার সমাজে দুঃখী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলামের স্নেহধন্য রাধারানী দেবী। রাধারানী দেবী শিল্পী হন হরি মাখন দাসের হাত ধরে। তিনি অভিনেত্রী হয়েছিলেন রতন বাঈয়ের অনুরোধে। রাধারানী দেবীর শাস্ত্রীয় সংগীতের দখলের পেছনে ছিল মঞ্জু সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রম।

একজন মুসলিম হয়েও রাধারানী দেবীকে তালিম দিয়েছিলেন। আবার রাধারানী দেবী সকলের নজরে আসেন জিয়াগঞ্জের বিখ্যাত রায় বাহাদুর সুরেন সিং নেহালিয়া আয়োজিত ঝুলন উৎসবে। কলকাতায় তাঁকে তুলে ধরেন এই রায় বাহাদুরের পরিচিত হরিসাধনবাবু। আবার কীর্তনে তালিম নিয়েছিলেন সে যুগের বিখ্যাত কীর্তন শিল্পী পঞ্চানন ভট্টাচার্যের কাছে। কাজী নজরুল ইসলাম নিজে তাঁকে গান শিখিয়েছিলেন। রবীন্দ্র সংগীত শিখেছিলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিকের কাছে।

তিনি সে যুগের বিখ্যাত সাহিত্যিক এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঞ্চালক নৃপেন কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে পড়েছিলেন। আনুষ্ঠানিক বিবাহ না করলেও সারা জীবনতাঁকেই স্বামী মেনেছেন, এমনকী নৃপেনবাবু মারা গেলে তিনি বৈধব্য জীবন পালন করেছেন। শেষ জীবনে রাধারানী দেবী খুব আর্থিক কষ্টের মধ্যে পড়েছিলেন। পুরস্কার পাওয়া স্বর্ণপদক, সোনার ওপর মেডেল থেকে শুরু করে কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র বিক্রি করে দিয়েছিলেন অভাবের তাড়নায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ আগস্ট এক বর্ষণমুখর দিনে বিদায় নিয়েছিলেন রাধারানী দেবী।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি আফসোস করে বলেছিলেন, এমন এক গুণী শিল্পী যার হাত ধরে অল ইন্ডিয়ার রেডিওর কটক সেন্টারের উদ্বোধন হয়েছিল তাঁর জন্য কোন উদ্যোগ আজ পর্যন্ত চোখে পড়ল না।

অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর নামজাদা শিল্পী ছিলেন রতন বাঈ। তিনি রাধারানীর গায়কি, উর্দু উচ্চারণ এবং ব্যক্তিত্বময়ী চেহারায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সিনেমায় অভিনয় করার পরামর্শ দেন। ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’, ‘প্রিয় বান্ধবী’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘কাশীনাথ’, ‘মা ও ছেলে’, ‘সাত নম্বর বাড়ি’-সহ বেশ কয়েকটি বাংলা এবং ‘সুনহেরা বাল’, ‘সিধা রাস্তা’, ‘গজ়ল’, ‘রসিলি’, ‘লাজ’-সহ তিরিশটিরও বেশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। দুই প্রখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী তুলসী চক্রবর্তী এবং নীহারবালা দেবীর পরামর্শে মঞ্চে অভিনয়ও শুরু করেন রাধারানী। ‘সাজাহান’, ‘ঝড়ের রাতে’, ‘সিরাজদ্দৌলা’, ‘পরিণীতা’, ‘চণ্ডীদাস’, ‘বিন্দুর ছেলে’ ইত্যাদি বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। নির্বাক চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন এই কীর্তন সম্রাজ্ঞী।

সরকারিভাবে বা বেসরকারিভাবে। রাধারানী দেবীর নামে কোন পুরস্কারও চালু করা হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। অবিলম্বে রাধারানী দেবীর জন্মস্থান জিয়াগঞ্জে তার আবক্ষ মূর্তি বসানো হোক। জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জ পুরসভার নিকট সেই দাবিউঠুক। মুর্শিদাবাদে শুরু। কিন্তু তাঁর কীর্তনের মাধুর্য ছড়িয়ে পড়েছিল সীমানা ছাড়িয়ে সারা দেশে।