জানার পরিধি নিয়ে গর্ববোধ নয়, জানার গভীরতা বাড়ান
Don't be proud of the breadth of your knowledge, but increase the depth of your knowledge.

Truth Of Bengal: শ্যামল কান্তি ধর: ভারতীয় গণতন্ত্র বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র। সেই শক্তপোক্ত চারটি স্তম্ভর উপর দাঁড়িয়ে আছে যথাক্রমে ১. পার্লামেন্টেরি ব্যবস্থা বা আইন সভা ২. এক্সসেকুইটিভ সিস্টেম তথা কার্যনির্বাহী ব্যবস্থা, ৩. জুডিশিয়ারি সিস্টেম বা বিচার ব্যবস্থা, ৪, চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যম সব থেকে আলোচিত ও আলড়িত সংস্থা। এদের দুটি বিভাগ প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া। বর্তমানে প্রযুক্তি গত অগ্রগতির ফলে এরা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা জেনে আসছি এই সংস্থাটি স্বাধীনভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে খবর পরিবেশন করে থাকে যা সমাজ ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সোপান হিসেবে গণ্য করা হয়। নিঃসঙ্কচে নির্ভয়ে কাজ করা, সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলায় তাদের অন্যতম কাজ।
সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই। এমন খবর কখনই করা উচিত নয় যাতে সামাজিক অবক্ষয়ের ক্ষেত্রগুলি উৎসাহিত হয়। বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া গুরুত্ব পূর্ণভূমিকা পালন করে থাকে। সামিজিক জীবনে দ্রুত প্রভাব সৃষ্টিকারী এই মাধ্যম। এক মিনিটের একটি পক্ষপাত তুষ্ট অনিয়ন্ত্রিত খবরের অভিঘাতে মুহূর্তে তচনচ করে দিতে পারে একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থকে। যা আমরা বঙ্গবাসী লক্ষ করেছি বিগত বছর গুলিতে। বিশেষ করে গত ৯ই অগাস্ট ২৪। তরুণী চিকিৎসক তিলোত্তমার মর্মান্তিক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে রকমারি সব ঘটনার ঘনঘটায় বিপর্যস্ত বাংলার জনজীবন। তবে এটাও ঠিক এই চতুর্থ স্তম্ভের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে বর্তমান কালের চলতি রাজনৈতিক ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা ইত্যাদির ওপর। সর্বপরী আমবাঙালির রোজ নামচা। সুতরাং, এই স্তম্ভের পরিচালক মন্ডলীর দৃষ্টি ভঙ্গি, কর্মীবর্গের নিয়ম শৃঙ্খলা আইন কানুন জ্ঞান বা জানার পরিধির সঙ্গে সঙ্গে জানার গভীরতার দিকে একশোই একশো ভাগ যত্নবান হওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমানে সেটার অভাববোধ করছে আমবাঙালি।
এবারে আইনসভার বর্তমান ভূমিকা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার তাগিদ অনুভব করছি। ভারতীয় পার্লামেন্টারী ব্যবস্থা অর্থাৎ আইন সভা। এখানে দুটি কক্ষ আছে লোকসভা ও রাজ্যসভা। একটি নতুন আইন প্রণয়ন বা আইন সংশোধন দুটিতেই লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাস করাতে হয়। সুতরাং, আইন সভাকে আপন কক্ষ পথে থেকে স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে পক্ষপাতহীন হয়ে সমাজের হিতকর ছাড়া কোন কিছুর মূল্যেই অহিতকর কোনোকিছুকেই প্রাধান্য দেওয়া চলবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভুরিভুরি ঘটনা সংখ্যার জোরে সমষ্টির জোরে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে আইন সভায় মনের মতো বিল পাশ করিয়ে নেওয়ার মত ঘটনা। অন্যান্য বিরোধী দলের সদস্যরা মরিয়া হয়ে বিরোধিতা করেও আটকতে পারল না। এটা কি ঠিক?
দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বারবার অভিযোগ করে, আইনসভায় শাসকপক্ষ কোনো কোনো ক্ষেত্রে পক্ষপাততুষ্ট হয়ে স্বার্থসিদ্ধিকারী একটি আইন পাশ করিয়ে নিচ্ছে। নজরে পযড়ে, আইন সভার দুই কক্ষেই ব্যাপক হৈচৈ, হট্টগোল চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল, কেউ করো কথা শুনছে না, দুই কক্ষেরই পবিত্রতা নষ্ট করে নির্লজ্জের মতো ব্যবহার, আচার আচরণ। মিডিয়া খুললেই দেখা যাচ্ছে, এমন সব ক্রিয়াকলাপ কেউ কারো দিকে তেড়ে যাচ্ছে, তো কেউ আবার হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুড়ে মারছে। অসংসদীয় কথার ফুলঝুরি ছুটছে। মানে এমন একটা পরিস্থিতি যে সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে এক সঙ্গে বসে সেই দৃশ্য দেখায় যায়না। কিছু কিছু মিডিয়া আবার সারাদিন এটাই বেশি বেশি দেখাচ্ছে, যেন ভূ-ভারতে তাদের আর কোনো কাজ নেই। ফলে আইনসভার প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি কিছুই থাকছে না।
এরপর আরও একটি স্তম্ভর কথায় আসছি। যাকে বলা হয় এক্সেকিউটিভ, কার্যনির্বাহী ব্যবস্থা পঞ্চায়েত থেকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত সরকারকে সচল রাখার জন্য সরকারি কার্যক্রমকে একটা সিস্টেমেটিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মাথার উপরে যারা থাকে তাদেরকে আমলা বলা হয়। আমলাদের দ্বারা পরিচালিত ব্যবস্থাকে আমলাতন্ত্র বলা হয়। এখানে শুধু আমলারাই নয়, একজন চৌকিদার, ঝাড়ুদার থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত কার্যনির্বাহ করে থাকেন।
এই পথগুলিকে পাবলিক সার্ভেন্টও বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে বেশিরভাগই নিজেকে পাবলিক পাবলিক সার্ভেন্ট ভাবতে আনকমফোর্টফিল করে সবাই নিজেকে পলিটিক্যাল সার্ভেন্ট ভাবতে স্বাচ্ছন্দ বা গর্ববোধ করেন। ফলে কোন ঘটনার বা কর্মের সারভিলেন্স এর কাজটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। ছোট বড় সব ঘটনাতেই এরাজের ক্ষেত্রে বারবার দেখা যাচ্ছে সরকারের প্রধান মুখ অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীকে দাগিয়ে দেওয়ার জঘন্য একটা প্রয়াস চলছে। যা বাংলায় নয়া রাজনৈতিক কালচারের সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটি একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা। এটি নিয়ে বাংলার বাঙালিদের এব্যাপারে ভীষণ সজাগ থাকতে হবে। যেসব অত্যন্ত পাওয়ারফুল সংস্থাগুলি আছে সেগুলি স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ থেকে কাজ করবে বা করা উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রেও তার ভুরিভুরি অন্যথা হচ্ছে। তারাও নিজেদেরকে পাবলিক সার্ভেন্ট ভাবতে হিনমন্যতায় ভুগছে। পলিটিক্যাল সার্ভেন্ট ভাবতে কমফোর্টফিল করছে এই ভাবনা থেকে অতিসত্বর সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে। জানা বা বোঝার গভীরতার দিকে নজর দিতে হবে। তা না হলে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক স্পর্শকাতর বিষয়গুলির উপসংহারে পৌঁছানো যাবে না বলেই আমার মনে হয়।
এবার গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ এক ধাপ, যেটিকে শেষ ধাপও বলা যেতে পারে, ইন্ডিয়ান জুডিশিয়ারি সিস্টেম বা বিচার বিভাগ বা বিচার ব্যবস্থা। মহামান্য আদালত, মহামান্য বিচারক এই শব্দ গুলি অতি সম্ভ্রমের সঙ্গে উচ্চরিত হয়ে থাকে। এই যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে ভোগবাদের দুনিয়ায়, ভোগ সর্বস্ব মানসিকতা, ভোগ সর্বস্ব ব্যাবস্থা আমাদের সমাজকে আজ আষ্টেপিস্টে বেঁধে ফেলেছে। অত্যন্ত অনাভিপ্রেত, সারা চাকুরির টার্ম ধরে সমস্ত রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা সম্মান দুহাতে ভোগ করলাম, ওয়ান ফাইন্ড মর্নিং আমার বৈরাগ্য আসলো, আর সরকারি গোলামি করবো না, রাজনীতি করবো, জনপ্রতিনিধি হব, জনসেবা করব, সুখে শান্তিতে বাকি জীবন কাটাবো, এটিই হচ্ছে সত্যিকারের ভোগবাদের ভাইরাস। যেখানে সব কিছুই সম্ভব হয়।
যাইহোক ইদানিং কালের আরজি করের ঘটনা এই দশকের অন্যতম আলোচিত ও আলোড়িত বিষয়। সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু তার সাজাকে কেন্দ্র করে ভীষণ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তদন্তভার রাজ্য পুলিশ থেকে নিয়ে সিবিআইকে দেওয়া হয়। একটি শব্দবন্ধ নিয়ে খুব আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে যাকে বলা হচ্ছে ‘বিরলতম’। অপরাধে বিরলতম ঘটনা রাজ্যে আগেও ঘটেছে। ‘ছেলের রক্তে ভাত মেখে মাকে খাওয়ানো হয়েছে’, এমন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে রাজ্য। দুঃখের বিষয় সে মাও বিচার পায়নি। এমন অনেক ঘটনা রাজ্যে ঘটেছে, যেসব ঘটনা আজও বারবার আলোচিত হয়। বাংলার মানুষ চান যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক ঘটনায় কঠোর সাজা হোক অপরাধীর।