Cyber Awareness: ইন্টারনেটের অদৃশ্য ফাঁদে ছাত্র সমাজ
কেউ গেমের ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করছে, কেউ আবার অপরিচিত বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়ছে
মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল: স্কুলের ইউনিফর্ম পরা কিশোরটি ক্লাসের ফাঁকে মেসেঞ্জারে বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া করছে। অন্যদিকে এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে অপমানজনক কমেন্টের বন্যা। কেউ গেমের ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করছে, কেউ আবার অপরিচিত বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়ছে– এই দৃশ্যগুলো আজকের ডিজিটাল যুগে নিত্যনৈমিত্তিক হলেও, বাস্তবের মাটিতে এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর। আর সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতাকে থামাতেই শহর-গ্রাম জুড়ে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে হুগলির কোন্নগরের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম নিয়ে পড়াশোনা করতে আরম্ভ করে দু’বছরের বেশি সময় আগে থেকে। সাইবার ক্রাইম নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে সে দেখতে পায় যে আজকের ছাত্র সমাজ সাইবার ক্রাইমের শিকার যেমন হচ্ছে, তেমনই কেউ কেউ সাইবার ক্রাইমের জগতের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে এবং এই শিকারের মূল কারণ তাদের সাইবার ক্রাইম নিয়ে অবগতির অভাব। ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অবগতি ছড়ানোর জন্য সে প্রতিষ্ঠা করে ‘সাইবার কেয়ার’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ‘সাইবার কেয়ার’ বিগত দু-বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জায়গাতে সচেতনতা প্রোগ্রাম করে চলেছে। স্থানীয় স্কুল, ক্লাব, বইমেলা ও বিজ্ঞানমেলায় তারা সাইবার সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকের কাছে– নিঃশুল্ক, স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগে। সাইবার কেয়ার বিশ্বাস করে একমাত্র সচেতনতাই সাইবার জালিয়াতি ও অন্যান্য সাইবার অপরাধের থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে (Cyber Awareness)।
আরও পড়ুন: Campus Tragedy: অধ্যাপকের যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে গায়ে আগুন, হাসপাতালে মৃত্যু ওড়িশার ছাত্রীর
আজকাল ছাত্র এবং যুব সমাজের প্রায় প্রত্যেকের হাতে নিজেদের অধীনে কোনও না কোনও ইলেকট্রনিক ডিভাইস আছে এবং তাতে ইন্টারনেট কানেকশন আছে, ফলে ছাত্রছাত্রীরা এবং যুব সমাজের অন্যান্যরা প্রত্যেকেই শুধু লেখাপড়া ছাড়া অন্যান্য প্রচুর দরকারি কাজ ইন্টারনেট থেকে করে নিচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের স্কুলের প্রজেক্ট ওয়ার্ক করে এবং নিজেদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস ও ক্যারিয়ার গড়ার জন্য বিভিন্ন ক্রিয়া-কলাপ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করে থাকে। কিন্তু এই অসংখ্য দরকারি জিনিসের মধ্যে কখনও কখনও অপরাধীরা তাদের ফাঁদ পেতে রাখে যুব সমাজকে বিপথে চালনার জন্য এবং তাদেরকে চুপিসারে ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আজকাল অসংখ্য খবরের মাঝখানে কোনটা সঠিক, কোনটা বেঠিক তারা বুঝতে পারে না। সেরকমই সাইবার অপরাধ, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে তাদের সম্যক জ্ঞান বা ধ্যানধারণা না থাকার জন্য ছাত্র- যুবদের মধ্যে তরল মতি ছেলে-মেয়েরা সাইবার অপরাধ এবং সাইবার নিরাপত্তার যে দুর্বলতা, সেগুলোকেও বুঝতে না পেরে তারা বিপদে পড়ে যায়। স্কুলের পড়ুয়ারা অনেক সময় সাইবার অপরাধের লক্ষ্য হয়ে থাকে, কেন না সাইবার অপরাধীরা জানে কচিকাঁচা ছাত্রছাত্রীরা সমাজ-মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলেও তারা বহু নিয়ম জানে না। বিনোদন এর জন্য তারা যে মোবাইল গেম খেলে, সেই গেমের মধ্যেও কী যে বিপদ লুকিয়ে আছে তারা বুঝতে পারে না। বহু ক্ষেত্রে তারা বাবা-মায়ের পয়সা নষ্ট করে, নিজেদের কেরিয়ারকে নষ্ট করে ফেলে এবং অনেক সময় গেমের ভয়েস-চ্যাটিং এর মাধ্যমে অজানা লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে ফেলে এবং একা একা সাক্ষাৎ করে। সেই সাক্ষাতের সময় তারা অনেকে বিপদে পড়ে যায়। এছাড়া আছে— সাইবার বুলিং, গেম অ্যাডিকশন, ফিশিং, পরিচয় গোপন করে প্রতারণা ইত্যাদি। এই সমস্ত ক্ষেত্রে প্রযুক্তির দোষ নেই, মূল সমস্যা হল-– সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব (Cyber Awareness)।
Truth of Bengal fb page: https://www.facebook.com/share/193NB43TzC/
এক্ষেত্রে, ‘সাইবার কেয়ারে’র কর্ণধার শ্রী হিমালয় মণ্ডল বলেন, ‘যুব সমাজ যত বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে তত বেশি সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। সাইবার ক্রাইমের জন্য যত না প্রযুক্তির দায়, প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করার দায় অনেক বেশি। আর সঠিকভাবে ব্যবহার করতে গেলে সঠিক সাইবার সচেতনতা অত্যন্ত দরকারি। তাই আমরা সাইবার সচেতনতা বাড়ানোর মিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমরা স্কুলে গিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিটের প্রোগ্রাম করি। তার মধ্যে থাকে অডিও ভিসুয়াল শো। আমরা নিজেরাই প্রোজেক্টার, স্ক্রিন এবং অন্যান্য ডিভাইস নিয়ে স্কুলে যাই। আমাদের মেইন টার্গেট অডিয়েন্স হল- সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ভিডিয়ো গেম খেলতে গিয়ে বর্তমান দিনের যে সমস্ত অঘটনগুলি ঘটে চলেছে, সেগুলিকে আমরা তুলে ধরি। ভিডিয়ো গেম এর ইন-গেম চ্যাট বক্সকে সাইবার অপরাধীরা কীভাবে অপব্যবহার করে সে কথা আমরা উল্লেখ করি। এমনকী, কখনও কখনও ইন-গেম চ্যাটবক্সকে ব্যবহার করে উগ্রপন্থীরা ভিডিয়ো গেম খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ডিজিটাল অ্যাকাউন্টের যথা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির হদিস নিয়ে নেয় এবং দেশবিরোধী ক্রিয়াকলাপের বিষ ছড়িয়ে দেয় এবং তাদের দলে ছাত্র-ছাত্রীদের ভেড়ানোর চেষ্টা করে। কেউ কেউ ভিডিয়ো গেমের নেশায় মশগুল হয়ে যায়। তারা ভিডিও গেমে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য বাস্তবের কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের প্রাণঘাতী সব কাজ করে ফেলে যেটা অত্যন্ত দুঃখের ও বেদনার। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রচার করি গ্রাম-শহর উভয় ক্ষেত্রেই কেমন করে আস্তে আস্তে সাইবার বুলিং বাড়ছে এবং সাইবার বুলিং-এর যারা শিকার হচ্ছে তারা অনেকে সহ্য করতে না পেরে ডিপ্রেশনে চলে যায়। আর ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। আস্তে আস্তে সে একা হয়ে যায়। সাইবার বুলিং এর চাপ সহ্য করতে না পেরে কোনও কোনও ছাত্র বা ছাত্রী নিজেদের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে ফেলে। পাওয়ার পয়েন্টের স্লাইড শো-এর মাধ্যমে আমরা ছাত্রদেরকে বোঝাই এই রকম ঘটনা কারও সঙ্গে যেন না ঘটে। ‘সাইবার কেয়ার’-এর আন্দোলন একদিকে যেমন প্রযুক্তির সঙ্গে মানবিকতার সংযোগ তৈরি করছে, অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিচ্ছে (Cyber Awareness)।





