জঙ্গলমহলে সুবর্ণরেখার পাড়ে সম্প্রীতির মেলবন্ধনে দেবী দুর্গার আরাধনা
Adoration of Goddess Durga in harmony on the banks of Golden Line in Jangalmahal

Truth Of Bengal : ঋজু বাগ, ঝাড়গ্রাম : একই দেশের মধ্যে বাংলার বাইরে যখন সংখ্যালঘুদের নানা ঘটনায় হিংসার শিকার হতে হয় সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে ভিন্ন রূপ। বঙ্গে দেবী দুর্গার আরাধনায় সম্প্রীতির মেলবন্ধন। সুবর্ণরেখার পাড়ে মহামিলনের পুজোর বেদী। নদীর তীরে খোলা বাতাসে এগারো গ্রামের দুই হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্যোগে হচ্ছে দেবী দুর্গার আরাধনা। নদী পার্শ্ববর্তী ১১টি গ্রামের মানুষের পরিচালনায় সর্বজনীন এই পুজো হয় ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার সুবর্ণরেখা নদীর তীরে অবস্থিত মহাপাল গ্রামে।
এবার ৬১ বছরে পড়ল এই মহাপাল সর্বজনীন দুর্গোৎসব পুজো কমিটির পুজো। প্রতিবারের মত এবারেও পুজো কমিটির সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ সহ এই পুজোর অন্যান্য দায়িত্বে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন রয়েছেন। যা এই পুজোর মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা বহন করে। পুজো কমিটির হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা জানান ,’দুটি সম্প্রদায়ের মানুষ মিলে হয় এই পুজো। মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের পুজোর জন্য যে সমস্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় সব বেশ নিষ্ঠাভরে পালন করেন তাঁরা। শুধু দায়িত্ব পালন নয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন এখানে মায়ের প্রসাদও খান। ‘এই পুজোর পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন পুজো নেই।
তাই নদী পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের কাছে এই পুজোর গুরুত্বই আলাদা। নদী লাগোয়া ভক্তাপাট, মালিসাই, শালবনি, খামার, জাহানপুর এক একটা হিন্দু, মুসলমানের জনপদ। এই রকম এগারোটি গ্রামের গ্রামবাসীরা নিজেরা টাকা দিয়ে প্রতিবছর দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠেন। নিজেদের চাঁদা তোলা থেকে পুজোর জোগাড় করা সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে হয়। এভাবেই চলে আসছে ৬০টি বছর। এখানে কোন জাতি ধর্মের বেড়া নেই। নেই কোন অস্পৃশ্যতা। সবাই এক। দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয় সবার মধ্যে।
যাঁকে যা দায়িত্ব দেওয়া হয় তিনি তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের এক সদস্য জানান, গ্রামের মানুষ মেলামেশায় জাতি ভেদাভেদে বিশ্বাস করেন না। হিন্দু মুসলিম বলে কিছু নেই। সকলে চাঁদা দেওয়া থেকে শুরু করে পুজোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হিন্দু ভাইদের সঙ্গে সমানভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন।
পুজো আয়োজনের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা এতটাই সুন্দর যে জাতপাতের ভেদাভেদকারীদের কাছে ঈর্ষার কারণ হয়ে ওঠে। শুধু দুর্গাপুজো নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মহরম থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য অনুষ্ঠানে হিন্দুরা মহরম থেকে শুরু করে সংখ্যালঘুদের আরো অন্যান্য অনুষ্ঠানে সেখানে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যায়।