
Truth Of Bengal: অনেকে বলেন, ছন্দে থাকতেই খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দিতে হয়। তাতে বিদায়টা সম্মানজনক হয়। প্রিয় খেলোয়াড়কে নিয়ে ভক্তদেরও গর্ব হয়। কিন্তু সবাই কি তা মানেন? আন্দ্রে রাসেলের কথাই ধরুন। টি–টোয়েন্টির এই ফেরিওয়ালা বিশ্বের প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলেছেন। বিপিএল, আইপিএল, পিএসএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশের শিরোপা জিতেছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে জিতেছেন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। এই সংস্করণে নিজেকে সর্বকালের অন্যতম সেরার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। তবে আরও অনেকের মতো রাসেলও সোনালি সময় পার করে ফেলেছেন। এ মাসেই নিজের ৩৭তম জন্মদিনের কেক কাটবেন। এরপরও খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু রাসেল যে আর আগের রাসেল নেই! ব্যাটিং–বোলিং দু’টিতেই জৌলুশ হারিয়ে এখন যেন শেষের ডাক শুনতে পাচ্ছেন। এবারের আইপিএলে তাঁর লাগাতার ব্যর্থতা সেটিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ৪ ইনিংস ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১৭ রান করেছেন রাসেল। দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি একবারও।
আইপিএলে বর্তমান বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে রাসেলের ছক্কার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি (২১০টি)। সেই রাসেল এবার মারতে পেরেছেন মাত্র একটি ছক্কা। ৮৫.০০ স্ট্রাইক রেট তাঁর সঙ্গে একেবারেই বেমানান। পাশাপাশি ৩ ইনিংসে বল করে ৫ উইকেট পেয়েছেন বটে, কিন্তু ইকোনমি রেট ১৩.৫৩।
বোলিংও করছেন অনেকটা দায়সারাভাবে। যেন বল করতে হয় বলেই করা! ফিটনেসেও কিছুটা ঘাটতি আছে। বিশেষ করে ফিল্ডিংয়ে। অথচ দল হিসাবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের যে অর্জন, তাতে অনেকটা কৃতিত্ব আন্দ্রে রাসেলের। এক যুগ ধরে কলকাতার সঙ্গে আছেন। জিতেছেন দু’টি আইপিএল খেতাব। দু’বার হয়েছেন টুনার্মেন্ট–সেরা।
এই লম্বা সময়ে শাহরুখ খানের দলকে প্রায় অসম্ভব পরিস্থিতি থেকে একাধিক অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছেন, ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে হয়ে গিয়েছেন দলটির অপরিহার্য অংশ। কলকাতাও তাই রাসেলকে বছরের পর বছর ধরে রেখেছে। কিন্তু আইপিএলের চলতি মরসুমে এখনও পর্যন্ত আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি।
রাসেলের এমন ধারাবাহিক ব্যর্থতার শুরু কিন্তু এবারের আইপিএলেই নয়। বলা যায়, প্রায় ১০ মাস ধরে তিনি ফর্ম–খরায় ভুগছেন। গত বছরের জুন থেকে মঙ্গলবার লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে কলকাতার হারের ম্যাচ পর্যন্ত রাসেল ৪৬টি স্বীকৃত টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ব্যাটিং করেছেন ৪৩ বার।
কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি, এই সময়ে তাঁর একটি ফিফটিও নেই! সর্বোচ্চ অপরাজিত ৪০ রানের ইনিংস খেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে (এমএলসি) লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্সের হয়ে। এই সময়ে ৩৩ ইনিংসে বোলিং করে উইকেট ২২টি, ইকোনমি রেট ৯.৬১।
২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে জাতীয় দলেও অনিয়মিত রাসেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এরপর খেলেছেন একটিমাত্র ম্যাচ। ২০২৫ সালে আরও বাজে সময় পার করছেন রাসেল। এ বছর ১৫ ইনিংসে ১২.৫৮ গড়ে তাঁর রান ১৫১। স্ট্রাইক রেট ১৩৪.৮২, যা তাঁর ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের (১৬৮.৫৯) চেয়ে অনেক কম। রাসেলের ফর্ম–খরা নিয়ে আরও ভয়াবহ তথ্য হল, সর্বশেষ ১৫ ইনিংসের মধ্যে দশবার এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়েছেন, সর্বশেষ ১০ ইনিংসে একবারও দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
বোলিংয়েও যা–তা অবস্থা রাসেলের। ২০২৫ সালে ৭ ইনিংসে বোলিং করে উইকেট মাত্র ৭টি। ১২.৫৫ ইকোনমি বলে দিচ্ছে, কতটা ‘রানদাতা’ হয়ে উঠেছেন তিনি। পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার হওয়ার পরও এ বছর খেলা ১৬ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৭টিতে বোলিংয়ে আসার বড় কারণ তাঁর ওপর থেকে অধিনায়কদের আস্থা হারিয়ে ফেলা। ওভারপ্রতি ১২–এর বেশি রান বিলানো তাঁর জন্য নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাসেল যে বহুদিন ধরে ফর্মে নেই, নিশ্চয় তা জানা ছিল সব ফ্র্যাঞ্চাইজির। তবু তাঁকে অঢেল অর্থ দিয়ে কিনেছে কিংবা ধরে রেখেছে নামটা ‘আন্দ্রে রাসেল’ বলেই। গত বছর ঘরের মাঠে ব্যর্থ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শেষে খেলতে নেমেছিলেন লস অ্যাঞ্জেলেস নাইট রাইডার্সের হয়ে।
এমএলসিতে ব্যর্থ হওয়ার পর ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন দ্য হান্ড্রেডে খেলতে। সেখানে খেলেছেন লন্ডন স্পিরিটের হয়ে। এরপর সিপিএলে তাঁকে দেখা গিয়েছে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের জার্সিতে। আর গত নভেম্বরে বছরে নিজের শেষ ম্যাচটা খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে।
এ বছরের শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আইএলটি২০–তে খেলেছেন শাহরুখ খানের ‘নাইট রাইডার্স পরিবারের’ আরেক দল আবুধাবি নাইট রাইডার্সের হয়ে। মার্চে আইপিএল খেলতে যোগ দেন কলকাতা শিবিরে। মাঝে বিপিএলেও খেলেছেন রাসেল। সেখানেও যথারীতি ব্যর্থ। রংপুর রাইডার্সের ‘ভাড়াটে খেলোয়াড়’ হিসাবে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন রাসেল।
মিরপুর শেরেবাংলায় বিপিএলের এলিমিনেটর ম্যাচে ৯ বলে করেন ৪ রান। ১ ওভার বল করে দেন ১৪ রান। সেই ছন্দহীনতা তিনি আইপিএলেও বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। রাসেলের পারফরম্যান্সে হতাশ এক ভক্ত তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুরোধের স্বরে লিখেছেন, ‘প্রিয় আন্দ্রে রাসেল, ক্রিকেট তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে তুমিই ক্রিকেট ছেড়ে দাও।’