
Truth Of Bengal: অর্পিতা দেবাংশী: একটি জ্বলন্ত প্রদীপ শিখা একটি অন্ধকারময় গৃহকে আলোয় ভরিয়ে দেয়। আবার ওই একটি জ্বলন্ত প্রদীপ আরও হাজার প্রদীপকে জ্বালিয়ে সমাজ সংসারকে আলোয় আলোকিত করতে পারে। একজন শিক্ষক পারেন অনেক অশিক্ষিত মানুষকে শিক্ষার আলোয় জাগিয়ে তুলতে, একজন জ্ঞানী ব্যক্তি পারেন অনেক অসহায় দুর্বল মানুষের মনে ভক্তি ভাবের প্রসার ঘটাতে।
আর এই ভক্তি ভাবের মধ্য হতেই আদর্শবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, বিবেক বুদ্ধি স্নেহ প্রেম ভালবাসা জাগরিত হয়। আর এগুলির রূপায়ণের চাবিকাঠি লুকায়িত থাকে ধর্মকে আশ্রয় করে। আর সেই কারণেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যাতেসকল মানুষের বিবেক-বুদ্ধি জাগ্রত হয়ে সুস্থ সুন্দরভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারে , তার খুব সুন্দর পদ্ধতি তৈরি করে দিয়েছেন। ধর্মকে আশ্রয় করে সকল মানুষদের মধ্যে চারটি স্তরে তিনি ভাগ করে দিয়েছেন, যথা,,, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র, এই চারটি সম্প্রদায় যে যে কর্মে যুক্ত থাকবে সে সেই পদবীর অংশীদারি হবে।
কর্মক্ষেত্রগুলি হল, শিক্ষাদান, সমাজকে রক্ষা করা, সকলকে বিভিন্ন বিষয়ের সেবা ওপরিষেবা দেওয়া, এবং সকল মানুষের জীবন ধারণের জন্য যাহা দরকার তার ব্যবস্থা করা। কত সুন্দর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ভগবান। কালের গতিতে যুগোচক্র তার গতি পথ পরিবর্তন করতে শুরু করল।
শিক্ষক তার প্রকৃত শিক্ষার মঞ্চ ছেড়ে ব্যবসায়িক শিক্ষার পথ বেছে নিল, জ্ঞানী ব্যক্তিরা ধর্মের নামে অনেক সহজ সরল মানুষদের কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ করে ব্যক্তি স্বার্থ প্রসারিত করতে শুরু করল। এর ফলে সমাজের বুকে আছড়ে পড়ল শ্রেণী বৈষম্যের ভয়ঙ্কর খাড়া। ভগবানের দেওয়া পদবি গুলিকে নিজেদের স্বার্থে কৌশলগতভাবে এমন তফাৎ সৃষ্টি করল যে একে অপরের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মিলেমিশে ধর্মকে আশ্রয় করে সুষ্ঠুভাবে থাকার ব্যবস্থা শিখেয় উঠল।
মধ্যযুগের ব্রাহ্মণবাদ সুস্থ মনের মানুব সমাজকে ভেঙে চুরমার করে দিল। বর্তমানে জাতপাত ও ধর্মের সুড়সুড়ি রাজনীতির এক খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার ৭৮ বছর পরও তপশিলি জাতি তপশিলি উপজাতি ও দরিদ্র বঞ্চিত অসহায় মানুষদের মন্দিরে উঠতে দেওয়া হয়না, বড় দুঃখের ও লজ্জার কথা। পাহাড়পুরে মনসা মন্দিরে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এসে পূজো দেয় ভক্তিভাবে, দেখেছি ভীষণ খুশি হয়ে আনন্দিতভাবে বাড়ি যাই, অথচ এখনো এক শ্রেণীর উচ্চ বন্নে র মানুষের মনে এত ভেদাভেদ।
ডক্টর বি আর আম্বেদকর কতদিন আগে বলে গেছেন মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন বাংলার জনসাধারণের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা, বিভেদ, বৈষম্য, উচ্চ নিচ, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত অশিক্ষিত, প্রবৃত্তির মধ্যে প্রভেদ রেখে দেশ হিতৈষনার যেসব গভীর প্রচেষ্টা, তা নিত্যান্তই হাস্যকর, ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র।