খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে ফর্মালিন ব্যবহার ও আমাদের করণীয় পদক্ষেপ
Use of formalin in food preservation and steps we can take

Truth Of Bengal: বর্তমানে মাছ-মাংস, শাক-সব্জি সহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রবের সংরক্ষণে ফর্মালিন ব্যবহারের প্রচলন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে! পচন নিবারণে ভীষণ কার্যকরী এই রাসায়নিক! সাধারণত পরীক্ষাগারে বিভিন্ন জীবজন্তুর দেহ বা দেহাংশ সংরক্ষণে এই ফর্মালিন ব্যবহার কার হয়ে থাকে! এটি আসলে ফর্মালডিহাইডের লঘু জলীয় দ্রবণ! কিন্তু বর্তমানে কম খরচে উত্তম সংরক্ষণের জন্য ব্যবসায়ীরা বহুলমাত্রায় এই রাসায়নিকটি ব্যবহার করছেন! কিন্তু এই রাসায়নিকটি খাদ্যের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করার ফলে শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে! তাই, খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে বিষক্রিয়া ঠেকাতে ফর্মালিন সম্পর্কে সতর্ক থাকার সময় এসেছে!
সামুদ্রিক মাছ ও চালানি মাছের সংরক্ষণেই ফর্মালিনের ব্যবহার সবথেকে বেশি! তবে ইদানিং গলদা বা বাগদা চিংড়ির সংরক্ষণেও মাছের দেহে ফর্মালিন ইনজেক্ট করা হচ্ছে! যে সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটিও কারও রক্ত নেওয়া বা ইনজেকশনের পর ফেলে দেওয়া সিরিঞ্জ! মাছের মাথায় সব থেকে আগে পচন শুরু হয়! তাই ইলিশ জাতীয় দামী মাছের মাথায় ফর্মালিন ইনজেক্ট করে মাছগুলিকে ফর্মালিন দ্রবণে চুবিয়ে নেওয়ার পর থার্মোকল নির্মিত বাক্সে বরফ ও কাঠের গুঁড়ো সহযোগে প্যাক করে বায়ুনিরুদ্ধ করতে পারলে বহুদিন পর্যন্ত পচন রোধ করে ব্যবসা করা যায়!
আমাদের রাজ্যে দূরবর্তী অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা থেকে চালানি রুই-কাতলা আসে। যেহেতু মাছ বোঝাই গাড়িগুলিকে রাস্তায় থেমে থেমে আসতে হয়। তাই প্রায় ২-৩ দিন সময় লেগে যায় ওই গাড়ি আসতে। ফলে রাস্তাতেই বরফ গলে যাওয়ার সম্ভবনা। রোড পারমিশন না পেলে রাস্তাতেই মাছ পচে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই ব্যবসায়ীদের পক্ষে ফর্মালিনে সংরক্ষণ করে মাছ আনাই সবথেকে নিরাপদ। রাজ্যের প্রধান মাছ বাজার হাওড়াতে ওই গাড়িগুলি আসার পর পাম্পের জলে সেই মাছ ধুয়ে বরফের পেটিতে করে একরাতের দূরত্বে স্থানীয় মাছবাজারগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অতএব, আপনি বরফের পেটি দেখলেও আসলে কিন্তু ওই মাছও ফর্মালিনমুক্ত নয়!
ফর্মালিন-এর বিপদ
ফর্মালিনে লিভার, কিডনি, হার্ট ইত্যাদির অনেক রোগ হতে পারে। আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার ইত্যাদি অনেক রোগই ফরমালিন খাওয়ার ফল হতে পারে। এটি আপনার অস্থিমজ্জার ক্ষতি করতে পারে এবং অ্যানিমিয়া, লিউকেমিয়া (রক্তের ক্যান্সার) হতে পারে। এটা গর্ভবতী মহিলাদের এবং নবজাত শিশুদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
তাই ফর্মালিন সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্যের বিষয়ে আপনাকে সচেতন থাকতেই হবে। এমনকী আপনার কেনা শাকসব্জিও ফরমালিন বা ফরমালডিহাইডের মাধ্যমে সংরক্ষিত হতে পারে। সবজি থেকে ফরমালিন দূর করতে লবণ-জলে অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য সবজি ডুবিয়ে রাখুন। এর পরে তাজা জল দিয়ে আবার ধুয়ে নিন। অবশেষে, আপনি আর চিন্তিত না হয়ে তাদের রান্না করতে পারেন। এই প্রক্রিয়া সবজি থেকে ফর্মালিন ৯৫ শতাংশ মুক্ত হবে।
ফসল থেকে ফর্মালিন সরানোর জন্য উপায়
ফর্মালিন ব্যবহার করে ফলকেও দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়। যদি আপনি সন্দেহ করেন যে আপনার কেনা ফলে ফর্মালিন আছে, তা হলে আপনি কমপক্ষে ১ ঘণ্টার জন্য লবন-জলে ডুবিয়ে ফেলবেন। এরপরে আবার বিশুদ্ধ জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর ফর্মালিন মুক্ত হবে এবং আপনি কোনও সন্দেহ ছাড়াই এই ফলগুলি খেতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় ফল থেকে ৯৫ শতাংশ ফর্মালিন মুক্ত হয়।
মাছ থেকে ফর্মালিন কমানোর উপায়
যদি আপনি সন্দেহ করেন যে আপনার মাছ ফর্মালিন থাকতে পারে, তা হলে এক ঘণ্টার জন্য লবন-জলে দিয়ে মাছগুলি ডুবিয়ে রাখুন। তাতে প্রায় ৬০ শতাংশ ফর্মালিন মুক্ত হবে। যদি লবণ-জলে ডানা দেড় ঘণ্টা ধরে ডুবিয়ে রাখা হয় তা হলে ৯০ শতাংশ ফর্মালিন মুক্ত হবে। আবার, যদি আপনি ভিনিগার মিশ্রিত জলে সেই মাছ চুবিয়ে রাখতে পারেন, তা হলে ৯৮ শতাংশ ফর্মালিন বর্জন নিশ্চিত হতে পারে। কিন্তু মাছের মাথায় ফর্মালিন ইনজেক্ট করা থাকলে সেই ফর্মালিন সরানো মুশকিল। মৃত মাছের দেহের মধ্যেও ওই ফর্মালিন কিছুটা হলেও (পরোক্ষভাবে) সংবাহিত হয়! তাই ফর্মালিন সংরক্ষিত মাছের মাথা না খাওয়াই যুক্তিযুক্ত! প্রতিদিন টাটকা খাবার (ফলমূল, শাকসবজি, মাছ) খান এবং ভাল থাকুন। ওপরে উল্লিখিত টিপসগুলির সাহায্যে সহজেই আপনি ফর্মালিন থেকে মুক্ত হতে পারেন।