শান্তিনিকেতনের বকুলতলা আজ ধ্বংসের মুখে! কারণ শুনলে প্রশ্ন তুলবেন আপনিও

The Truth Of Bengal, সৌতিক চক্রবর্তী শান্তিনিকেতন: শান্তিনিকেতনের শতাব্দী প্রাচীন এই বকুল গাছ। তাকে নিয়ে হাজারো কবিতা ও গান, কে-জানে কতজন লিখে গিয়েছেন। আর এই গাছ’ই এখন মৃত্যু পথযাত্রী। যদিও গাছের হঠাৎই মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা এও দাবী করছেন যে বর্তমানে শান্তিনিকেতনে যে মালিকানা ভিত্তিক গাছ নিধন যজ্ঞ শুরু হয়েছে, এটা তারই ফলাফল। ইতিপূর্বে শান্তিনিকেতনের গাছপালাও যে ক্ষতির মুখে কিংবা ক্রমশ উধাও অভিযানের মুখে পরতে পারে, এমনটাই মনে করেছিলেন অনেকেই। তা আটকাতেই পথে নেমেছিলেন শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি প্রেমীরা।
যেখানে গ্রীষ্মের এই তীব্র গরম কোথাও গিয়ে বিশ্বায়নের প্রভাব একেবারেই স্পষ্ট এবং তা প্রতিরোধে মরিয়া গোটা বিশ্ব, সেখানে এমন গুরুতর অভিযোগ তাও আবার রবির ভিটে’তে কোথাও গিয়ে একাধিক প্রশ্নের ইঙ্গিত করে। অভিযোগ হিং দিয়ে অথবা কেমিক্যাল ব্যবহার করে মেরে দেওয়া হচ্ছে গাছ। শুকিয়ে যাওয়া গাছ কাটতে নেইকো মানা এই অজুহাতে গাছ সাফ করার অপচেষ্টার এই কৌশলে নড়ে চড়ে বসলো বিশ্বভারতী। কেন মরলো এই শতাব্দী প্রাচীন চিরহরিৎ বৃক্ষ তা নিয়ে বিশ্বভারতীর উদ্ভিদ রোগ তত্ত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞরা তদন্ত নামলেন। কিন্তু কিভাবে? কারা?ছড়ালো এই সংক্রমণ তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এবিষয়ে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ দাে ও গৌরাঙ্গ মিস্ত্রিরা বলঅছিলেন এক বিশেষ প্রতিবেদনে যে, “দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে এই গাছ আমরা দেখে আসছি। বহু মানুষ ও পাখিদের আশ্রয়স্থল ছিল গাছটি। গাছটির এমন পরিণতিতে আমরাও মর্মাহত।”
তবে একথাতো সত্যিই যে সেশ হতে চলেছে আরও একটি অধ্যায়ের! বোলপুর শান্তিনিকেতনের রাস্তায় অপর অবস্থিত এই চিরহরিৎ বকুল গাছ মৃত্যুর পথে। সংক্রমণ ছড়িয়ে মৃত্যু হয়েছে এই গাছের এমনটাই পর্যবেক্ষণ বিশ্বভারতীর পল্লী শিক্ষা ভবনের উদ্ভিদ রোগ তত্ত্ব বিভাগের। শান্তিনিকেতনের রাস্তার ওপর অবস্থিত এই বকুল গাছটির জন্য এই স্থানের নাম হয়েছিল বকুলতলা। শান্তিনিকেতনের রাস্তার পাশ দিয়ে দমকল অফিসের গা ঘেঁষে চলে যাওয়া রাস্তার সংযোগ স্থলের ওপরেই পড়ে এই বকুলতলা। মাসখানেক আগেই এই গাছটির নিচে ছিল একটা চায়ের দোকান যা বকুলতলা চায়ের দোকান নামে পরিচিত ছিল। আর এই চায়ের দোকানকে ঘিরে ছিল প্রবীণ থেকে তরুণ প্রজন্মের আড্ডা। বোলপুর শান্তিনিকেতনে বাস করেন অথচ বকুলতলার চায়ের দোকানে চা খান নি এমন লোকের সংখ্যা হাতে গোনা। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা এই বকুলতলার চায়ের দোকানই ছিল সাধারণের অক্সিজেন জোন। পথ চলতি সাধারণ মানুষও একটু সময় পেলেই জিরিয়ে নিতেন এই গাছের নিচেই। কিন্তু সকলের প্রাণ জুড়ানো স্নিগ্ধ ছায়া প্রদানকারী এই বকুল গাছ সকলের নজর এড়িয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে গেল। শান্তিনিকেতনের পরিবেশপ্রেমী মানুষজন অবশ্য এই বিষয়টিকে অন্তরঘাত হিসেবেই দেখছেন। তাদের অভিমত বহুবর্ষজীবী এই উদ্ভিদের ধ্বংসের কারণ মানুষই।
অনেক আগেই এই ঘটনার খবর পেয়ে বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে বিশ্বভারতীর পল্লী শিক্ষা ভবনের উদ্ভিদ রোগ বিভাগের অধ্যাপক কর্মীরা চেষ্টা চালিয়েছিলেন যাতে কোনোভাবে গাছটিকে অন্তত বাঁচানো যায়। কিন্তু না তা আর সম্ভব হয়নি।
খুব স্বাভাবিকভাবেই গাছ-গাছালিতে ভরা কবিগুরু স্নেহধন্য শান্তিনিকেতনে ঐতিহ্যবাহী এই চিরহরিৎ বৃক্ষের মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে সমাজের ভূমিকা।