রাজ্যের খবর

পর্যটন প্রসারে কোচবিহারের রাসমেলাকে পর্যটন মানচিত্রে স্থান দিতে উদ্যোগ রাজ্য সরকারের

CoochBehar RasMela

The Truth of Bengal,Mou Basu: কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এরমধ্যে শীতকালে অন্যতম বড়ো উৎসব হল রাসমেলা। সম্প্রতি পর্যটনকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। এবার রাজ্যে বিশেষত উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে পর্যটন প্রসারে আরও বিশেষ উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার। কোচবিহারের ২০০ বছরের বেশি পুরোনো রাসমেলাকে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে স্থান দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। মদনমোহন বাড়িতে রাসচক্র ঘুরিয়ে রাস উৎসবের সূচনা হয়। আজ, সোমবার থেকে কোচবিহারের রাসমেলা শুরু। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। দুর্গাপুজো ছাড়াও কালীপুজো বা একাধিক শক্তিপীঠকে সামনে রেখে পর্যটনের ব্র্যান্ডিং করে থাকে রাজ্য সরকার। রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষের জীবিকা পর্যটনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। রাজ্যের পর্যটনকে আগেও ‘শিল্প’ হিসাবে ঘোষণা করার কথা একাধিক বার বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবছর সদ্য সমাপ্ত বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের ঠিক আগে রাজ্য মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে পর্যটনকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

এর ফলে বিনিয়োগ এক লাফে অনেক বেড়ে যাবে বলে আশাপ্রকাশ করে রাজ্য সরকার। এবার কোচবিহারের রাসমেলার গৌরবকে তুলে ধরতে পর্যটন মানচিত্রে জায়গা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। গঙ্গাসাগর মেলার পর রাজ্যের অন্যতম বড়ো মেলা হল কোচবিহারের রাসমেলা। সেটাকেই ভালো করে তুলতে ধরতে এবার ব্র্যান্ডিং শুরু করবে রাজ্য সরকার। পর্যটন দফতরের এক আধিকারিক জানান, ‘রাসমেলাকে কেন্দ্র করে কোচবিহারের ইতিহাস, রাজকাহিনী, বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। সে জন্যই দেশবিদেশের পর্যটকদের কাছে কোচবিহারকে ভালো করে তুলে ধরতে পর্যটন মানচিত্রে জায়গা দিয়ে জোরদার ব্র্যান্ডিংয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’ কোচবিহারের রাসমেলার বয়স ২০০ বছরের বেশি। মনে করা হয়, ১৮৯০ সালে কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের আমলে মদনমোহন মন্দির নির্মাণ করা হয়। সেই সময় থেকে শুরু রাসমেলার। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ আসে রাসমেলায়। মদনমোহন মন্দিরে রাসচক্র ঘুরিয়ে শুরু হয় রাসমেলার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’।

কোচবিহারের রাসমেলায় সর্বধর্ম সমন্বয় দেখা যায়। কোচবিহারের রাসমেলার মূল আকর্ষণ হল মদনমোহন মন্দিরে রাসচক্র ঘোরানো। এই রাসচক্র বংশ পরম্পরায় তৈরি করে এক মুসলিম পরিবার। মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের আমল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। বর্তমানে ওই মুসলিম পরিবারের সদস্য আলতাফ মিঞা তৈরি করেন রাসচক্র। কোচবিহারের বিখ্যাত রাসমেলাকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে কোচবিহার পুরসভাও। ২০১২ সালে ২০০ বছর পূর্তি হয় কোচবিহারের রাসমেলার। কোচবিহারের মহারাজার নতুন প্রাসাদে প্রবেশ উপলক্ষে ১৮১২ সালে বিরাট মেলা বসেছিল। সেই হিসেবে ২০১২ সালে ২০০ বছর পূর্তি হয়েছে রাসমেলার। এখন রাসমেলার আয়োজন করে কোচবিহার পুরসভা। রাসমেলা নিয়ে ইউনেস্কোর কাছ থেকে হেরিটেজ স্বীকৃতি আদায়ের পরিকল্পনা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে কোচবিহার পুরসভা। আবেদনও করা হয়েছে। এরমধ্যে রাসমেলা নিয়ে তথ্যচিত্র বানানোর পরিকল্পনা করেছে কোচবিহার পুরসভা। প্রতিবছর দেশ-বিদেশের পর্যটক ছাড়াও কোচবিহারের রাসমেলায় আসেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও। এবছর নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান আর ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ীরাও রাসমেলায় আসবেন বলে জানা গেছে।

Related Articles