লাঠি হাতে ‘পেপসি দাদুর’ জীবন যুদ্ধ!
'Pepsi Grandpa' fights for his life with a stick in his hand!

Truth Of Bengal: হুগলি, রাকেশ চক্রবর্তীঃ হুগলি জেলার রিষড়া এলাকায় প্রায় সকলেই তাকে ‘পেপসি দাদু’ নামে চেনেন। ৭৮ বছর বয়সের এই বৃদ্ধের নাম রাজকুমার চৌধুরী। বিহারের বেগুসরাই জেলায় তার জন্ম। প্রায় তিরিশ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি চলে আসেন বাংলায়। ভাগ্যের টানে এসে ঠাঁই নেন হুগলির রিষড়ার এনএস রোডের ধারে। বর্তমানে তার সংসার বলতে ছেলে ও ছেলের বউ। তবে বার্ধক্য আর শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আজও তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।
সকাল হলেই রাজকুমারবাবু তার দিনের যুদ্ধ শুরু করেন। হাতে লাঠি, কাঁধে থার্মোকলের বাক্স, তাতে ভর্তি প্রায় ১৫০ বোতল পেপসি। এই পথচলা শুরু হয় রিষড়া থেকে, শেষ হয় বহু পথ হেঁটে বালি স্টেশনে গিয়ে। গরমের দাবদাহ কিংবা পথচারীদের কটু কথা কোনো কিছুই যেন তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে তিনি বিক্রি করেন এই শীতল পানীয়। সারাদিনের পরিশ্রমে তার আয় হয় আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। খুব বেশি নয়, তবুও এই সামান্য আয়েই সংসারের খরচ মেটানোর চেষ্টা করেন তিনি।
বয়স্ক এই মানুষটির মুখে কিন্তু কোনো হতাশার ছাপ নেই। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, “যতদিন শরীরে শক্তি আছে, ততদিন খেটে খাব। কারও কাছে হাত পাততে চাই না।” গ্রীষ্মকালে পেপসি বিক্রি করলেও, শীতকাল এলেই তিনি পেশা পরিবর্তন করেন। তখন পেপসির জায়গায় বিক্রি করেন পাপড়। নিজের বার্ধক্যের কথা মাথায় রেখেও কখনো হাল ছাড়েননি তিনি। হাঁটার সময় পা টলে গেলে সহায়ক হয় তার লাঠি, কিন্তু মনোবলে কোনো ঘাটতি নেই।
স্কুল-কলেজের সামনে বা পথ চলতি ক্লান্ত পথিক সকলেই তার নিয়মিত খরিদ্দার। সময়ের সাথে সাথে এলাকার মানুষজনের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন এক প্রেরণার প্রতীক। কেউ তাকে স্নেহে ডাকে ‘পেপসি জাদু’, কেউবা ‘পেপসি দাদু’। রাজকুমারবাবু নিজেও এই ভালোবাসায় আপ্লুত।
জীবনের প্রতি তার এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই শিক্ষণীয়। যেখানে অধিকাংশ মানুষ বার্ধক্যে একটু আরাম খোঁজেন, সেখানে তিনি স্বাবলম্বী থেকে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। সমাজের জন্য তিনি এক অনন্য উদাহরণ, প্রমাণ করে দিচ্ছেন যে, বয়স কখনোই জীবনের গতি থামিয়ে দিতে পারে না। যতদিন প্রাণ আছে, ততদিন তিনি নিজের রোজগারে বিশ্বাসী থেকে সম্মানের সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দিতে চান।
পেপসি দাদুর এই গল্প কেবল রিষড়ার গণ্ডি পেরিয়ে সবার জানা উচিত। তার মতো মানুষেরাই আমাদের শেখান, সত্যিকারের সাহস আর অধ্যবসায়ের মানে কী।