নৈহাটি: ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের শহর
Naihati: A city of history, culture and tradition

Truth Of Bengal: নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শহর। গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই শহরটি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানেই জন্মেছিলেন বাংলা সাহিত্যের দিকপাল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ‘আনন্দমঠ’ ও ‘কপালকুণ্ডলা’র মতো উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। নৈহাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃতজ্ঞ ও পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, যাঁর অবদান বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নৈহাটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য
নৈহাটির ইতিহাস বহু প্রাচীন এবং এই শহরটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। শহরটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাংলা সাহিত্যের একাধিক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। নৈহাটির অপর পাড়ে রয়েছে চুঁচুড়া, যা আরও একটি ঐতিহ্যবাহী শহর, যেখানে ইতিহাসের বিভিন্ন মুহূর্ত প্রতিফলিত হয়। নৈহাটির পাশেই অবস্থিত আর এক প্রাচীন শহর ভাটপাড়া, যা বাংলার সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ভাটপাড়াকে বাংলার অক্সফোর্ড বলা হতো একসময়। পন্ডিতের বসবাস ছিল এই প্রাচীন শহরে।
সংগীত ও নাট্যচর্চার কেন্দ্র
নৈহাটি শহরটি সংগীত ও নাট্যচর্চার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। শহরটির বিভিন্ন অংশে একাধিক নাটকের দল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, এবং প্রতিবছর এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শহরটির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এক অসাধারণ ঐতিহ্য তৈরি করেছে যা বহু বছর ধরে ধরে চলছে। শহরের প্রতি কোণায় নাট্যকলা ও সংগীতের সুর বাজে, যা স্থানীয় ও পর্যটকদের কাছে এক অভিনব আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়।
বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি এবং গবেষণাগার
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান নৈহাটির কাঁঠালপাড়া। তাঁর বাড়ি বর্তমানে বঙ্কিম গবেষণাগার হিসেবে পরিচিত। এখানে বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ও গবেষকরা আসেন, এবং বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন। এই বাড়ি এখন সাহিত্যপ্রেমী, পর্যটক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে।
বড়মার মন্দির এবং পুণ্যার্থীদের আগমন
নৈহাটির অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান বড়মার মন্দির। এটি একটি কালীমন্দির, যেখানে রাজ্য ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থী ভক্তি ও শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এই মন্দিরের গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এখানে অনেক বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বাস করছে।
নৈহাটি চুঁচুড়া ফেরিঘাট
নৈহাটি ও চুঁচুড়ার মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হল ফেরিঘাট, যা বর্তমানে বড়মার ঘাট নামে পরিচিত। এই ঘাটটি বহু বছর্যধরে যাত্রীদের চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী আসেন, যাদের মাধ্যমে এই শহরের ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বজায় থাকে।